মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক পোস্ট এসেছে , হয়তো আরও আসবে । কেউ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ নিয়ে কেউ মুক্তিযুদ্ধকে প্রশ্নবিদ্ধ করে লিখেছেন। বাদানুবাদও হচ্ছে । এরা মনে হয় মুক্তিযুদ্ধকে না দেখে , সেই সময়কালের সব মানুষের ( ২% লোক বাদে) একমাত্র চাওয়াটাকে না বুঝে কেবল ধারনাভিত্তিক ধারনা থেকেই পক্ষে বিপক্ষে বলে যাচ্ছেন ।
সবাইকে বলি , মুক্তিযুদ্ধের সঠিক চেতনা কিম্বা মুক্তির আকাঙ্খা যা-ই বলুন ; আপনাকে মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট , আপামর জনগণের একমাত্র আকাঙ্খা ঠিকঠাক ভাবে বুঝতে হলে, ধারন করতে হলে , অনুভব করতে হলে সেই সত্তরের উত্তাল সময়ে ফিরে যেতে হবে । ফিরে যেতে হবে আরও পেছনে এমনকি আসতে হবে একাত্তর পরবর্তি সময় গুলোতেও । যেহেতু অনেকের বয়স এর ভেতর পড়েনা , তাই মুক্তিযুদ্ধের মূল সুরটি তাদের কাছে বেসুরো মনে হয় , মনে হয় অচেনা । আর তাতেই বিভ্রান্তি বাড়ে ।
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস অনেকেই জানেননা এমনটা মনে করেন । ইতিহাস একটাই হয় । বিজয়ীরা তাকে একভাবে লেখেন , বিজিতরা লেখেন অন্যভাবে । কিন্তু বুদ্ধিমান ও বিবেচক মানুষের কাছে ইতিহাস অনেক ঘটনা , ঘটনার পেছনের ঘটনা , ঘটনার সময়কাল , ঘটনার বিশ্লেষণ, ইতিহাসে সম্পৃক্ত মানুষদের মনন - চেতনা নিয়ে ধরা দেবে । তখন বিবেচক মানুষই ইতিহাসের সত্যাসত্য নির্ণয়ে সক্ষম হবেন ।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সত্যটুকু এবং পরবর্তী সত্যটুকু বুঝতে হলে বিভিন্ন বই , রেফারেন্স পড়তে হবে, তা যতো রকমের মতবাদের লেখকেরই লেখাই হোক না কেন । জেনে নিতে হবে কমপক্ষে ষাটের উপরের বয়সের মানুষের কাছ থেকে তখনকার মানুষের চাওয়াটাকে । তখনকার দেশের রাজনৈতিক , অর্থনৈতিক এমনকি সামাজিক, ব্যক্তিগত আবহাওয়াটাকেও । তারপরে নিজের বুদ্ধি দিয়ে, বিবেচনা দিয়ে বুঝে নিতে হবে মুক্তিযুদ্ধের সত্যটাকে । তাহলে দেখবেন মুক্তিযুদ্ধের সত্য একটাই “ শোষন থেকে মুক্তির প্রেরনা ” , “সব বাঙালীর এক হয়ে যাওয়া ”। তার জন্যে নেতার অবদানই একমাত্র অবদান নয় , অবদান সত্তর- একাত্তরের ৯৮% জনমানুষের । নেতা কখনই “জনগণ’কে তৈরী করেনা বরং জনগনই একজন “নেতা”কে তৈরী করে । নেতা তাঁর কাজটি করেছেন জনগণকে একটা লক্ষ্যে একত্রিত করে , লক্ষ্যের বাকী সব কাজটুকু করেছেন দলমত নির্বিশেষে এই জনগণই ।
হ্যা, মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে অনেক কিছু পাল্টেছে খুব দ্রুততার সাথে যাতে সব জনগনের ঐ সময়ের আকাঙ্খার প্রতিফলন হয়নি মোটেও। সেটা মুক্তিযুদ্ধের দোষ নয় , বেশ কিছু মানুষের দোষ , তাদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করনের নেশা ।
জেনে রাখবেন , কোনও সাধারন মুক্তিযোদ্ধাই দেশের কাছে কিছু প্রাপ্তির আশা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে যোগ দেয়নি । আজও দেয় না । দেবেনা কোনওদিন ।
এখন যাদের যাদের জন্যে মুক্তিযুদ্ধকে আপনারা প্রশ্নবিদ্ধ করছেন তারা কেউ-ই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নয় । একটু হিসেব করে দেখুন, সত্তরে আপনার বয়স যদি হয়ে থাকে ১৫ বছর তবে আপনি এখোন ৬০ এর উপরের বয়সের । ১৫ বছরে একমাত্র “ বিচ্ছু বাহিনীর” যোদ্ধা হওয়া ছাড়া আপনার সক্রিয় ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করা সম্ভব ছিলোনা । আপনারা কতোজন ষাটোর্দ্ধ মানুষ এমনটা ছিলেন ? আপনার ভূমিকা ছিলো মুক্তিযুদ্ধকে মনেপ্রানে সমর্থন করা, সহায়তা করা । যোদ্ধা ছিলেন হাযার হাযার কিন্তু ঐ যোদ্ধাদের সহযোগী ছিলেন বাংলার কোটি কোটি আপামর জনগণ যাদের বয়েস এখন কমপক্ষে ৬০ বছর । এর নীচের বয়সের কারো পক্ষে মুক্তিযুদ্ধকে বোঝার কথা নয় । যারা এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে লাফাচ্ছেন , তারা মনে হয় ৬০ বছর বা তদুর্দ্ধ কেউ নন । ব্লগেও যারা পক্ষে-বিপক্ষে লিখছেন তারাও সম্ভবত ৬০ বছরের উপরে নন । আপনাদের কারো পক্ষেই “মুক্তিযুদ্ধ” এর চেতনা, প্রেরনা, অহংকার, গরিমা, চাওয়া , পাওয়াকে ঠিক ঠিক বুঝে ওঠা সম্ভব নয় কিছুতেই ।
তাই , আপনাদের সকলের প্রতি অনুরোধ ; আপনার আংশিক সত্য , আংশিক বিভ্রান্তি, আংশিক দলভক্তি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ( ৬০ বছর বয়স হওয়া ব্যতীত মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সম্ভব নয় ) সমালোচনা করবেন না । নিজের অপ্রাপ্তি , নিজের ক্ষোভ থেকে যদি কাউকে সমালোচনা করতেই হয় তবে ব্যক্তি বা দলকে ( তার আগে তাদের ইতিহাস জেনে নিতে হবে ) নিয়ে করুন - “মুক্তিযুদ্ধ”কে নিয়ে নয় । কারন “মুক্তিযুদ্ধ” কেবল মাত্র একটি চেতনাই নয় , একটা অনুভব , একটা উপলব্দি । অনেক ত্যাগের পরে যা আপনি আপনার অজান্তেই অর্জন করেছেন ।
( মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমার বলার কিছুই ছিলোনা যদি অন্য কোনও সময় হতো । শুধু আজকের এই স্বাধীনতার দিনটির প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা , আমার ঋণ , আমার মুক্ত নিঃশ্বাসের দায়বদ্ধতা থেকেই লিখছি যদি তাতে কারো সত্যটুকু উপলব্ধি হয় । )
২৬শে মার্চ’ ২০১৮ - সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে লেখাটির শুরু ..................... ।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৫