মাঝে মাঝে আমার ভীষন ডাংগুলি খেলতে ইচ্ছে করে,
হাতড়ে বেড়াতে ইচ্ছে করে দিগন্ত জোড়া কৈশোর ।
পুতুল ভেঙেছি বলে ফিরোজার কান্না
মাঝে মাঝে নদী হয়ে উছলায় ।
ফিরোজা এখোন কি করে ?
ভারী গিন্নিবান্নি হয়েছে নিশ্চয়ই
সামলাচ্ছে চতুর্দিক দশভুজা হয়ে !
অথচ ফিরোজা ছিলো আলসের কুড়ি এক মেয়ে
বেনী দুলিয়ে, ফুল ফুল ছাপা ফ্রকে তুলতো ঢেউ
চুষতো বুড়ো আঙুল সারাক্ষন ।
মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে নির্দয় গুলতিবাশে পাখী মারি,
চোরকাটা মাঠ পেরিয়ে গগনদের আমের বাগান
তছনছ করি । মার্বেলে মার্বেল ঠুকে ঠুকঠুক
পার করে দিই রোদেলা দুপুর, শেয়াল ডাকা রাত,
রসে ভরা গাছের কলসে ঢিল ছুড়ি অহেতুক ।
মিছেমিছি ভুতের ভয়ে কাঁপি, বুকে দিই ফুঁ,
ইয়াসিন মোল্লার পানি পড়া খাই ।
ইয়াসিন মোল্লা এখোনও আছে তো মসযিদের সেই ঘরে ?
কী নুরানী চেহারা ছিলো তার
মুরগীর ঠ্যাং খেয়ে খেয়ে এবাড়ী ওবাড়ী ।
মাঝে মাঝে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে কোথাও কোনখানে
কাউকে কিছু না বলে হঠাৎ হঠাৎ, কিবরিয়ার সাথে যেমন
পরীক্ষা থেকে পালিয়ে একদিন । সেই দুবলার চর,ছৈ’ওয়ালা নাও,
আসমা নামের কালো মেয়েটির বাড়ীতে পান্তাভাত,
জোনাকির আলোতে ঝিঁ-ঝিঁ ডাকা রাত,
এখোনও ডাকে মাঝে মাঝে ।
আসমার মতো কেউ একজন এখোনও দাঁড়ায় এসে পথে
সঙ্গী হতে চায়,কেরসিন বাতিতে আলো ফেলে দেখি
আমি তাকে চিনিনা । তবুও চোখে লেপ্টে থাকে তার অবয়ব,
নিশিন্দির ডাক ডাকে ।
ইচ্ছাগুলো নিয়েই আমি আছি দিনমান
হাটে যাই-বাজারে যাই, যাই কাজকামে ।
নিজের কামরায় এসি ছেড়ে বসি, খস খস্ সই করি,
কাগজে – খাতায় । ব্যাংকে জমতে থাকে চাঁদি
কেবল ইচ্ছেরা খরচ হয়ে যায় ।
লোক আসে লোক যায় । টেলিফোনে কথা কই ।
নিপাট ভদ্রলোক একজন, কাজ ছাড়া বুঝিনা কিছুই
মনে হয় । বিকেলের ঝিম ধরা রোদে বাড়ী ফিরি
সুবোধ বালকের মতো । সবাই ঘিরে থাকে কাছেপিঠে
ঘরে কিম্বা বাইরে যেখানেই যাই । অথচ কিছু যেন গেছে খোয়া
এমোন চিনচিনে ব্যথা একশো চার জ্বর নিয়ে অন্দরে
ঘাপটি মেরে থাকে ।
দেখেনা কেউ, আর একটি কিশোর থেকে যায় সেই বন্দরে
এক কাসাব্লাঙ্কা যেন প্রতীক্ষায় থাকে
কখোন ফিরে আসি কাছে তার ।
ছবি - httpswww.shutterstock.com এর সৌজন্যে
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:০৬