নিষিদ্ধ যতো বই .......
[ দ্বিতীয় পর্ব ]
All Quiet on the Western Front
অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েষ্টার্ন ফ্রন্ট
Cover of first English language edition. The design is based upon a German war bonds poster by Fritz Erler
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের এক নগন্য জার্মান সৈনিক এরিখ মারিয়া রেমার্ক এর লেখা এই বইটি সকল সংবেদনশীল পাঠকের কাছেই একবাক্যে সমাদৃত । বইটির কাহিনী নিয়ে চলচ্চিত্রও তৈরী হয়েছে যা অস্কার পুরষ্কারে ভূষিতও হয়েছে । যুদ্ধের ভয়ানক ঘটনাপ্রবাহের ভেতর দিয়ে যে অমানবিক দিকটি ফুটে উঠেছে লেখকের অজান্তেই, তা বইটিকে যুদ্ধের বিরূদ্ধে মানুষকে সোচ্চার করেছে । টলষ্টয়ের " ওয়র এ্যান্ড পিস " এর যুদ্ধ বিরোধী আবেদনকেও মনে হয় ছাঁপিয়ে গেছে বইটির কাহিনী । যারা চলচ্চিত্রটি দেখেছেন তারা দেখেছেন, যুদ্ধ কি অমানুষিক শারীরিক আর মানসিক ভাবে যোদ্ধাদেরকেও দুমড়ে মুচড়ে দিতে পারে ।
তবুও বইটি নিষিদ্ধ হয়েছে । মানবিকতা যাদের কাছে খোলামকুচির মতো তারাই বইটির গায়ে "ব্যানড" ছাঁপটি সেঁটে দিয়েছেন । বইটির বহ্ন্যুৎসব করেছেন ।
১৯২৯ সালে বইটি বেরুনোর পরেপরেই জর্মন আর অষ্ট্রিয়ান সৈনিকদের জন্যে বইটি পড়া নিষিদ্ধ করা হয় ।
আর কিছু না পেয়ে "অবসীনিটি"র দোষে বোস্টনে বইটি ব্যান করা হয় । শিকাগোর কাষ্টমস বিভাগ ইংরেজীতে অনুবাদকৃত বইটির সব কপি বাজেয়াপ্ত করে ফেলেন । ১৯৩৩ সালে ইটালীয়ান ভাষায় বইটির অনুবাদ নিষিদ্ধ হয় এই অজুহাতে যে বইটি যুদ্ধ বিরোধী । পরবর্তীতে ইটালীর ফ্যাসিষ্ট সরকার রেমার্কের সব বই বাজেয়াপ্ত করে নাজি ( নাৎসী ) জার্মানীতে পাঠিয়ে দেয় বই পোড়ানোর উৎসব, নাজি বনফায়্যার এর জন্যে ।
জার্মান সোলজার পল ব্যোঁমার এর নিজ মুখে বয়ানকৃত কাহিনী এটি । প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর কিছু পরেই স্কুল শিক্ষকের অনুপ্রেরনায় ব্যোঁমার জার্মান আর্মিতে নাম লেখান । তার প্লাটুনের ফ্রিজিয়ান কৃষক, জেলে, খেটে খাওয়া শ্রমিকদের মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তার ক্লাসের বন্ধুরা সহ হাজির হন যুদ্ধক্ষেত্রের ওয়েষ্টার্ন ফ্রন্টে । এখানেই যুদ্ধ করতে করতে ব্যোঁমার ও তার বন্ধুরা দেখেন জীবনের অতি কঠিন দিকটি । যুদ্ধের বীভৎসতার মাঝে থেকে তারা শেখেন অমানবিক এই শিক্ষাটি, হয় মারো নয় মরো । যুদ্ধ শেষের দিকে জার্মান বাহিনী যখোন পিছু হটছে তখোন অত্যন্ত হতাশার সাথে ব্যোঁমার দেখেন তার বন্ধুরা একে একে মৃত্যুর কাছে হেরে গেছে। তিনি নিজেও আহত হন ।
যুদ্ধ একটি সাধারন মানুষকে কি করে ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর আর এক মানুষে পরিনত করে তারই দিনপঞ্জী যেন বইটি । বইটি পড়তে পড়তে নিশ্চয়ই আপনার মনে হয়েছে , মানুষকে কতো ধরনের যুদ্ধই যে করতে হয় । কিন্তু মানুষ মারার যুদ্ধ মানুষকে যে তার পরিচয়, তার দেশপ্রেম, তার নৈতিকতা আর স্বপ্নকে ভয়ানক এক আঙ্গিকে এনে নতুন করে ভাবতে শেখায় ! নিজের বইটিতে তাই প্রথমেই রেমার্ক লিখেছেন ,"দিস বুক ইজ টু বি নিদার এ্যান অ্যাকিউজিশান নর য়্যা কনফেসান, এ্যান্ড লিষ্ট অব অল এ্যান এ্যাডভেঞ্চার, ফর ডেথ ইজ নট এ্যান এ্যাডভেঞ্চার টু দোওজ হু ষ্ট্যান্ড ফেস টু ফেস উইদ ইট । ইট উইল ট্রাই সিম্পলি টু টেল অব য়্যা জেনারেশান অব মেন হু , ইভন দ্যো দে মে হ্যাভ এসকেপড শেলস, ওয়্যার ডেস্ট্রয়েড বাই দ্য ওয়র । " তাই কাহিনীর শেষে যুদ্ধের শেষ দিকটাতে বুলেটের আঘাতে যখোন পল ব্যোঁমার মারা যান তখোন আমরা দেখি, ফ্রন্টলাইন থেকে পাঠানো সংবাদে বলা হচ্ছে --- "অল ইজ কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েষ্টার্ন ফ্রন্ট "।
বাক্যটি, একটি যুদ্ধে মানুষের মৃত্যু যে কতো তুচ্ছ ও নগন্য বিষয় তা- ই যেন ভয়ঙ্কর সত্যের মতো তুলে ধরেছে !
1st edition cover
১৯২৮ সালের নভেম্বর আর ডিসেম্বর এই দুমাস ব্যাপী লেখাটি Vossische Zeitung নামের জার্মান সংবাদপত্রে ধারাবাহিক প্রকাশিত হয় । ১৯২৯ এর জানুয়ারীতে বের হয় বই হিসেবে । ১৯৩০ এর দিকে হিটলার যখোন ক্ষমতার রশি বেয়ে উঠছেন তখোন জার্মান জাতিকে শ্রেষ্ঠতর প্রমানে জার্মানীকে একটি সামরিক শক্তিতে পরিনত করার বাসনাতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন তিনি । সে সময়ে বইটির উপপাদ্য তার সেই বাসনার ভরাডুবি ঘটাবে এই ছিলো হিটলারের ভয় । এর মধ্যেই বইটির কাহিনী নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরী হয়ে গেছে । চলচ্চিত্রটি নিষিদ্ধ হয় হিটলারের জার্মানীতে । যুদ্ধের বিরূদ্ধে কথা বলায় এরিখ মারিয়া রেমার্ক এর নামে কুৎসা রটানো হলো । নাৎসী বাহিনীর রোষানলে পড়ার ভয়ে রেমার্ক কোনও প্রতিবাদ করেন নি । বরং বইটির ধারাবাহিকতায় যুদ্ধ পরবর্তী জার্মান জাতির অভিজ্ঞতা নিয়ে ১৯৩১ সালে লেখেন আর একটি বই “ দ্য রোড ব্যাক” নামে । এবারে ফুঁসে ওঠে নাৎসী সরকার । রেমার্কের নাগরিকত্ব খারিজ করা হয় । আখ্যা দেয়া হয় দেশদ্রোহী হিসেবে । পুড়িয়ে ফেলা হয় বই দুটির সব কপি । প্রান নিয়ে রেমার্ক সস্ত্রীক পালিয়ে যান সুইজারল্যান্ডে ।
যে বইটি যুদ্ধের নামে মানুষের মরন খেলার ছবিটি তুলে ধরেছে , সাধারন মানুষের চিন্তা চেতনায় শান্তির জয়গান গেয়েছে তার বক্তব্যও এক শ্রেনীগোষ্ঠীর কাছে অপরাধের সামিল হয়েছে । তাই প্রথম পর্বে লেখা -
কি দোষ বই এর ? ............
দোষ অনেক । সব বই ই যে সবার কাছে সমাদৃত হবে এমোনটা কিন্তু নয় । রাষ্ট্রীয় নেতারা এখানে রাষ্ট্র কিম্বা তাদের বিরুদ্ধে কিছু খুঁজে পেতে পারেন । ধর্মীয় পুরুত ঠাকুরেরা ধর্মের প্রতি অবজ্ঞা বা অশালীনতার দাগ দেখতে পেতে পারেন । সুশীল সমাজ বিধায়করা সমাজ উচ্ছন্নে যাবে এমোন কিছুর আঁশটে গন্ধ পেতে পারেন । আবার রাজনীতিবিদরা তাদের মৌরসীপাট্টার প্রতি হুমকি দেখতে পারেন । ইত্যাকার... ইত্যাকার কারনে বইটি “ব্যানড” ছাপটি গায়ে মাখতে পারে ।
কথাগুলো মনে হয় অতিরঞ্জিত করে বলিনি .........
Lolita
ললিতা
গেল গেল রব উঠলো চারদিকে । সমাজ সংসার উচ্ছন্নে গেল এই বুঝি !
বইটি প্রকাশের সাথে সাথে ঢি ঢি পড়ে গেলো পাঠক অপাঠক সবার মাঝে । কী বিশ্রী আর নোংরামীতে ভরা কাহিনী নাকি । মানুষের মনে এমোন জঘন্য চিন্তা ভাবনা এলো কোথা থেকে !
হ্যা... বলছি " ললিতা " নামের বইটির কথা । "ললিতা" এই শব্দটি শুনলেই আধুনিক সমাজের যে কারো মনে যে ভাবাবেগ তৈরী হয় বিশেষ কাউকে নিয়ে, সে ধারনার জন্ম কিন্তু এই বইটি থেকেই । আরও একটি নতুন শব্দ নিম্ফেট ( Nymphet ) এসেছে এই কাহিনী থেকেই । নিম্ফ ( Nymph) থেকে নিম্ফেট ( Nymphet ) । শব্দের অলংকরন । নিম্ফেট, এই অলংকৃত রূপান্তরটি করতে গিয়ে নভোকভ তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন নায়ক হাম্বার্ট হাম্বার্টের জবানীতে এভাবে -
নাউ আই উইশ টু ইন্ট্রোডিউজ দ্য ফলোইং আইডিয়া । বিট্যুইন দ্য এজ লিমিট অব নাইন এ্যান্ড ফোরটিন দেয়ার অকারস মেইডনস হু , টু সারটেইন বিউইচড ট্রাভেলার্স, ট্যুয়াইচ অর মেনিটাইমস ওল্ডার দ্যান দে , রিভিল দেয়ার ট্রু নেচার হুইচ ইজ নট হিউম্যান , বাট নিম্ফিক ( দ্যাট ইজ ডীম্যানিয়াক ) ; এ্যান্ড দিজ চুজেন ক্রিয়েচারস আই প্রোপোজ টু ডেজিগনেট এ্যাজ "নিম্ফেটস"।
ভ্লাদিমির নভোকভের লেখা বইটি। কাহিনীর নোংরামীর কারনেই নাকি, শুরুতেই এক এক করে পাঁচ পাঁচটি জাঁদরেল আমেরিকান প্রকাশক বইটি প্রকাশে অক্ষমতা প্রকাশ করেন । তাদের দৃঢ় বিশ্বাস, বইটি প্রকাশ হলেই অনৈতিকতার দায়ে আদালতের কাঠগোড়ায় দাঁড়াতে হবে তাদের । প্রকাশকদের দোষ কি ! স্বয়ং লেখকই কন্ট্রোভ্যার্শিয়াল কাহিনীর কারনে প্রথমে ছদ্মনামে বইটি প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন । শেষতক এইসব প্রকাশকদের সাবধানবানী উপেক্ষা করে নভোকভ ফ্রেঞ্চ ভাষায় ভাষান্তরিত করেন বইটি নিজের নামেই । পর্ণোগ্রাফিক বই ছাপার শীর্ষে থাকা ফ্রান্সের অলিম্পিয়া প্রেস বইটি ছাপতে রাজী হয়ে যায় ।
১৯৫৫ সালের সেপ্টেম্বরে ছাপার ভুলে ভরা গতর নিয়ে সবুজ পেপারব্যাকে বইটি প্রকাশিত হয় অবশেষে । প্রথম ছাপা পাঁচ হাযার কপি হট কেকের মতো বিক্রি হয়ে গেলেও বইটির কোনও সমালোচনা বের হয়নি কোথাও । তিনমাস পরে লন্ডনের সানডে টাইমস এর গ্রাহাম গ্রীন বইটিকে ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত বইয়ের তালিকায় প্রথম তিনটি সেরা বইয়ের একটি বলে উল্লেখ করেন । এই বক্তব্যের জবাবে সানডে এক্সপ্রেস পত্রিকার সম্পাদক জন গর্ডন তার প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন এভাবে ---- " দ্য ফিলদিয়েষ্ট বুক আই হ্যাভ এভার রেড.... "।
বইটি যে আগাগোড়া একটি অসংযত পর্ণোগ্রাফি একথা বলতেও ছাড়েননি তিনি । এইরকম সমালোচনার ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হোম অফিসের নির্দেশে কাষ্টম অফিসারেরা যুক্তরাজ্যে ঢুকে পড়া সব বই বাজেয়াপ্ত করে ফেলেন । ব্যাস....... হু ....হু করে এদেশে সেদেশে বাড়তে থাকে বইটির বিক্রি । এক বছরের মাথায় ফ্রেঞ্চ সরকারও বইটিতে “ব্যানড” ছাপটি মেরে দেন । যদিও এই নিষিদ্ধকরনের আয়ুষ্কাল ছিলো দুবছর । দেখাদেখি আর্জেন্টিনা , নিউজিল্যান্ড আর কানাডা ও বইটিকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করে । পরবর্তীতে “ওইডেনফিল্ড এ্যান্ড নিকলসন” প্রকাশনীর মাধ্যমে বইটি বৃটেনে প্রকাশিত হয় । বইটি এতোই ঘৃনিত হয় যে , এই প্রকাশনার কারনে প্রকাশনীর একজন মালিক নিগেল নিকলসনকে তার রাজনৈতিক জীবনের ইতি পর্য্যন্ত টানতে হয় ।
সাউথ আফ্রিকার পাবলিকেশান ডিরেক্টরেট বইটিকে নিষিদ্ধ করে রাখেন আট বছরের বেশী কাল ধরে ।
কি দোষ তার ?
তাহলে কাহিনীটা শুনতেই হয় !
বইয়ের কাহিনীর পুরোটাই একটি জবানবন্দী । হত্যা মামলার আসামী হাম্বার্ট হাম্বার্ট জুরীদের সামনে যা বলেছেন তেমনি করেই বর্ণনায়িত হয়েছে এর কাহিনী । নিজের প্রেমাষ্পদ পালিয়ে যাবে অন্য কারো সাথে এটা সহ্য হয়নি বলেই খুনের চেষ্টা । জুরীদের সামনে কাহিনীর নায়ক হাম্বার্ট হাম্বার্ট তুলে ধরেছেন বিরল কিন্তু সাধারন মানুষের কাছে ঘৃন আর অগ্রহনযোগ্য, এক প্রেমগাথা । নিজের সৎ কিশোরী মেয়ের সাথে ভাব আর দেহগত মিলনের এক নজিরবিহীন আলেখ্য ।
সবাই এটাকে বলবেন পেডোফিলিয়া , পর্ণোগ্রাফিক বর্ণনা । জঘন্য এক মানসিকতার গল্প । মাঝবয়েসী এক সৎ পিতার মনোবিকৃতি তার বারো বছরের কিশোরী কন্যা " ডলরেস হেজ ডলি"র প্রতি । যে মেয়েটিকে সারাক্ষন কাছকাছে পাওয়ার জন্যে লোকটি কিশোরীর বিধবা মাকে পর্য্যন্ত বিয়ে করতে পিছপা হননি । এমোনকি তার কিশোরী প্রেমাষ্পদকে একান্ত নিজের করে পাওয়ার জন্যে যে নিজের সেই স্ত্রীকে খুন করার কথা পর্য্যন্ত ভেবেছিলেন । দেহমিলন ঘটিয়েছেন বারবার, কিশোরী কন্যাকে নিয়ে চষে বেড়িয়েছেন আমেরিকার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত । ললিতা , এই একান্ত আদরের নামটিও তারই দেয়া । এমোন এক পারভার্টেড লোকের নিজ মুখের স্বীকারোক্তি এটি ।
এই হোল বইটির দোষ ।
অথচ বর্ণনায় যৌনবিকৃতির দেখা প্রকট হয়ে মিললেও পুরো বইটিতে আপনি একটি শব্দও পাবেন না যাকে আপনি বলতে পারেন অবসীন বা ভালগার । জুরীদের কাছে নিজের বিকৃতি নয় বরং অপূর্ব এক ভালোবাসার কথাই যেন বলতে চেয়েছেন তিনি । লেখক কাহিনীর এই বলাকেই নিয়ে গেছেন সাহিত্যের চরম শিখরে, শৈল্পিক মর্যাদায় । একেবারে শুরুতেই যে শৈল্পিক বর্ণনা দিয়ে বইটির শুরু তা পড়ে আপনিও নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন কি অপরিসীম আর অকৃত্রিম ভালোবাসায় আদ্র ছিলো মাঝবয়েসী নায়ক হাম্বার্ট হাম্বার্ট এর মন । ভালোবাসার প্রতি যেন এক দুর্দমনীয় অবসেসান । যৌনতা যেখানে গৌন হয়ে গেছে “প্রেম” এর কাছে ।
একদম শুরুর কথাটি এই ---- " ললিতা, লাইট অব মাই লাইফ, ফায়ার অব মাই লয়্ন্স । মাই সীন , মাই সৌল । লো----লি----তা : দ্য টিপ অব মাই টাং টেকিং য়্যা ট্রিপ টু থ্রি স্টেপস ডাউন দ্য প্যালেট টু ট্যাপ, য়্যাট থ্রি, অন দ্য টীথ । লো----লি----তা । "
পর্ণোগ্রাফিক বা ঐ জাতীয় গল্প নিয়ে এপর্য্যন্ত যতো বই প্রকাশিত হয়েছে সম্ভবত “ললিতা”ই তার ভেতরে শ্রেষ্ঠ শৈল্পিকতার দাবী রাখে । যতো নোংরা ভাবনা নিয়েই গল্পের কাহিনী গড়াক না কেন লেখক নভোকভ তা প্রকাশ করেছেন সাহিত্যের মধুর ভাষাতে । আর একটি সেরা উপন্যাস ডি, এইচ লরেন্সের লেখা " লেডী চ্যাটার্লী'স লাভার "এ আপনি এই শৈল্পিকতা পাবেন না । সেখানে পর্ণোগ্রাফির ভাষাই ব্যবহৃত হয়েছে বর্ণনায় । নভোকভ ও হয়তো সেরকম বর্ণনা দিতে পারতেন , দেননি । এখানেই লেখকের মানসিক পরিশুদ্ধতা বোঝা যায় যখোন ললিতা বইটিতে তিনি লেখেন ---- " সী ওয়জ "লো", প্লেইন "লো", ইন দ্য মর্ণিং , ষ্ট্যান্ডিং ফোর ফীট টেন ইন ওয়ান সক । সী ওয়জ "লোলা" ইন স্লাকস । সী ওয়জ "ডলি" য়্যাট স্কুল । সী ওয়জ "ডলোরেস" অন দ্য ডটেড লাইন , বাট ইন মাই আর্মস সী ওয়জ অলওয়েজ "ললিতা " ।
শুরুর এই ভাবাবেগ কেবল এক একনিষ্ঠ প্রেমিকের কথাই মনে করিয়ে দেবে আপনাকে । কাহিনী যতো গড়িয়েছে কোথাও এই ভালোবাসায় টোল পড়েনি এতোটুকু । এ ভালোবাসায় বিকৃতি আছে হয়তো কিন্তু প্রতারনা নেই । শারীরিক উষ্ণতা আছে যতো তারও বেশী আছে হৃদয়ের বাঁধ ভাঙা ধ্বনি । সেক্সোফোনের তীক্ষ্ণতা নয় , বেহালায় কোমল রাগিনি বাজিয়ে গেছেন যেন নভোকভ এই বইয়ে ।
এ শৈল্পিক সাহিত্যের কারনেই বইটি আমেরিকান মডার্ণ লাইব্রেরীর ১০০ সেরা উপন্যাসের তালিকায় ৪র্থ স্থানে জায়গা করে নিয়েছে । ন্যাশনাল বুক এ্যাওয়ার্ড ফর ফিকশানে সাত সাতটি বার ফাইনালিষ্টের তালিকায় উঠে এসেছে । যদিও বইটির ভাগ্যে সেরা হওয়ার গৌরব জোটেনি । হতভাগা এক বই !
ভালগার বা অমার্জিত ভাষায় কিছু বর্ণনা কঠিন কিছু নয় । কঠিন সেটাই , ইতরামী আর নোংরাকেও শুদ্ধতার চাদরে ঢেকে তুলে দিতে পারার ক্ষমতা । সবাই তা পেরে ওঠেননা .......... নভোকভ পেরেছেন ।
[ চলবে....]
ছবি ও সূত্র : ইন্টারনেট
প্রথম পর্ব এখানে Click This Link
[ পোষ্টটি দিতে দেরী হলো সম্ভবত আমার ব্লগপাতায় সামুর টেকনিক্যাল কোনও সমস্যার কারনে । অনেক কসরত করে এটুকু পোষ্ট করা গেলো । এই অনিচ্ছাকৃত বিলম্বের জন্যে দুঃখিত ]
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:১৬