
প্রতীক্ষা
প্রতীক্ষা যে ভীষন কষ্টের - কেবল পুড়ে যাওয়া,
আমি বোঝানোর জন্যে এ কথা -
নীলিমাকে প্রতীক্ষায় রেখেছি গেল কাল সারাদিন ।
তার নীলে মাখা চোখ জলে উঠেছিলো ভরে, হৃদয়ের তারে
বেজেছিলো করুন রাগিণী বেহালার ।
শিথিল চরণ, জলভরা চোখ নিয়ে জানালার গ্রীলে
মাথা রেখে নীলিমা দাঁড়িয়েছিলো অনেকক্ষন ।
সোনার বরন রঙ তার, এতোটুকুতেই হয়ে গিয়েছিলো জন্ডিসে ভোগা সেই রোগিনীর মতো;
যাকে দেখতে গিয়েছিলাম হাসপাতালে নীলিমা আর আমি
বিষন্ন বিকেলে একদিন ।
বেতসলতার মতোন শরীর তার যখন নিরাবরণ
ভেজা কাপড় ছাড়তেই সকালের স্নান সেরে,
দারুন তৃষ্ঞায় শুকিয়ে গেল ঝরনার জল ।
জানালায় বসে থাকা চড়ুইটি গেল লজ্জায় উড়ে ।
ধুঁপছায়া রঙ শাড়ীর আঁচল মাটিতে লুটিয়ে সে যখন বারান্দায় এসে দাঁড়ালো খোলা চুলে,
বুক তার মৌ-মৌ, গন্ধে ।
অকৃপন হাতে ঢেলেছে কী এক সুগন্ধি শঙ্খের মতো সাদা বুকে,
যেখানে গোলাপী বৃন্তের নীচে একটা কালো তিল আছে তার ।
সেই থেকে নীলিমা প্রতীক্ষায় ছিলো,
আমায় ভাসিয়ে নিয়ে যাবে বলে, এক মন খারাপের দেশে ।
আমি কথা রাখিনি ।
নীলিমা জানেনা, প্রতীক্ষা কী ভীষন কষ্টের ।
এক মা যখন ঘরে ফেরার প্রতীক্ষায থাকে ছেলের,
ছেলে জানে কি, কী গভীর উৎকন্ঠায় কাটে মা’য়ের সারাটি দিন !
সন্ধ্যারাত গড়ালে মধ্যরাতে,
মা’য়ের বুকের মাঠে লম্বমান হতে থাকে অমঙ্গলের ছায়া ।
মা’য়ের ছেলেটি ফিরে এলে অসময়ে ঘরে
নিরব প্রার্থনায় হাটু গাড়ে
জননী এক ।
বলে ছেলে, “মা তুমি এতো সকালেই বুড়ো হ’য়ে গেলে ?”
মা জানে, কী নীলাভ হয় শরীর আশঙ্কায় প্রতীক্ষার সময় গেলে চলে ।
নীলিমা জানেনা-
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরেও যখন বৃষ্টি আসেনা,
মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে যায় কষ্টে।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরেও যখন চাঁদ ফোটেনা আকাশে,
আকাশ কালো মুখে বসে থাকে সারাক্ষন ।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরেও যখন সময়ে আসেনা বাস,
মনে হয় আগুন লাগিয়ে দিই সারা পৃথিবীতে ।
নীলিমা জানেনা প্রতীক্ষা কত কষ্টের তাই
নীলিমাকে প্রতীক্ষায় রেখেছি গেল কাল সারাদিন ।
নীলিমা শিখে রাখো -
প্রতীক্ষা ভীষন কষ্টের কেবল পুড়ে যাওয়া,
সময়ের নদীতে ব্যথার নীল তরী বাওয়া ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩২