বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
আধুনিক সভ্যতার অর্থনৈতিক ক্রমবিকাশের সাথে জড়িয়ে আছে জাহাজ শিল্পের ও ক্রমবিকাশ। জাহাজ নির্মান শিল্পের গতিপথটা বলি, তাহলে আপনি পেয়ে যাবেন আধুনিক সভ্যতার অর্থনৈতিক ক্রমবিকাশের ছবি। এক সময় আমাদের এই ভারতীয় উপমহাদেশ বিশেষ করে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও বার্মার আরাকান উপকুল এবং ভারতের কালিকট বন্দরের বিশ্বজোড়া সুনাম ছিল জাহাজ নির্মান শিল্পে। (ভারতীয় উপমহাদেশের জাহাজ নির্মানের ইতিহাস নিয়ে পড়ছি, সময় পেলে লিখব) এরপর ই্উরোপ, আমেরিকা, জাপান, কোরিয়া হয়ে চায়না পর্যন্ত এসেছে। বাংলাদেশ, ভারত ও ভিয়েতনামে এই শিল্প শুরু হয়েছিল, তবে অর্থনৈতিক মন্দায় এই দেশ গুলিতে এই শিল্প এখন কিছুটা স্থবির।
জাহাজ নিয়ে সাধারন মানুষের এত আগ্রহ। এখন একটা সাধারন প্রশ্ন করি। বলুনতো জাহাজ কি পুরুষ না মহিলা ? উপরের বানী যদি সত্যি হয়, তাহলে আধুনিক সভ্যতার অর্থনৈতিক ক্রমবিকাশের প্রধান হাতিয়ার জাহাজ কে আপনি কোন দলে ফেলবেন ?
বাংলা (জাহাজ), ইংরেজি (Ship), ফিলিপিনো তাগালগ (Barko) এই সকল লিঙ্গ অপ্রধান ভাষায় জাহাজের কোন লিঙ্গ নেই। তেমনি লিঙ্গ প্রধান জার্মান ভাষায় (Das Schiff) ও জাহাজের লিঙ্গ নেই। কিন্তু আপনি আমি যখন জাহাজ সম্পর্কে লিখি, তখন জাহাজের Pronoun হিসাবে She লিখি। কিন্তু কেন ?
যদি ও এ সম্পর্কে আসলে কোন জোরালো মতবাদ নেই। তবে যে মতবাদটি বেশী প্রচলিত তা হলো .... আগের কালে জাহাজের নাম করন করা হতো দেবীদের নামে। কারন ছিল প্রধানত দুইটা প্রথমত দেবতারা খুশি থাকবে, দ্বিতীয়ত জাহাজের নাম দেবীর নামে হলে, জাহাজের ক্রুরা জাহাজের যত্ন নিবে। দেবীর বাইরে জাহাজ মালিকের পছন্দ ছিল তাদের মায়ের নাম বা মেয়ের নাম। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, এ তালিকায় কখনো তাদের স্ত্রীদের নাম থাকত না। কারন তাদের স্ত্রীদের নাম তাদের নিজের জাহাজের জন্য অমঙ্গল জনক মনে করা হত। এমনকি জাহাজের ক্রুরা তাদের সমুদ্র যাত্রার শুরুতে কোন এক আধ্যাতিক দেবীকে জাহাজ উৎসর্গ করে জাহাজে তার প্রতিকৃতি একে রাখত। এভাবে ক্রমান্বয়ে জাহাজ আমাদের কথায় ও লেখায় স্ত্রীলিঙ্গে পরিনত হলো।
এখন জাহাজ যদি স্ত্রীলিঙ্গ ই হয় তাহলে আমাদের উপরের সার্বজনীন বানীটি মিথ্যা হয়ে যায়। এই শিল্পের সাথে জড়িত প্রায় ৯৯% ই পুরুষ এবং তাদের অবদানকে ও অস্বীকার করা হয়। তাই এই জাহাজ মিস্ত্রী ভাবে কিভাবে এই বানীকে সত্য প্রমানীত করা যায়। অনেক ভেবে জাহজের এই লিঙ্গের ব্যাপারে একটা মতবাদ দাড় করানোর চেস্টা করা হয়েছে। মতবাদটি গ্রহনের ভার আপনাদের উপর থাকলো।
এ মতবাদ সম্পর্কে বিস্তারিত বলার আগে জাহাজের দুটি বিষয়ে আগে দৃষ্টি দেওয়া যাক। একটি হলো বালবাস বউ (Bulbous Bow)। বউ সম্পর্কে আগেই বলেছি প্রথম পর্বে। আর এই বালবাস বউ হলো বউ এর নিচের দিকের যে অংশ পানির নিচে থাকে সেখানের একটি বর্ধীত অংশ। এটি আধুনিক জাহাজের অন্যতম অংশ। এটি সংযোজনে জাহাজের রেজিস্ট্যানস (পানির বাধা) কমে যায় ফলে একটি নির্দিস্ট বেগে জাহাজ চালাতে আগের তুলনায় তেল খরচ কমে যায়। ছবিতে দেখুন জাহাজের এই জিনিসটি কেমন ? (কথায় আছে না একটি ছবি হাজার পৃষ্ঠা লেখার চেয়ে উত্তম)--
আরেকটু কাছ থেকে দেখলে
দ্বিতীয় শব্দটি স্টার্ন টিউব (Stern Tube) বা পিছনের টিউব। এটি জাহাজের অপরিহার্য অংশ। কারন এই টিউবের মাধ্যমে একটি সলিড শ্যাফট (যা প্রপেলার শ্যাফট নামে পরিচিত) ভিতরের প্রান্তে জাহাজের ইন্জিন ও বাইরের প্রান্তে প্রপেলার বা পাখার সাথে যুক্ত হয়। ফলে ইন্জিনের ঘূর্নণে প্রপেলারে ঘূর্নণের সৃস্টি হয় এবং জাহাজ চলতে শুরু করে। ছবিতে দেখুন লাল টিউব টি ই স্টার্ন টিউব (Stern Tube) বা পিছনের টিউব
বাস্তব ছবি দেখুন
এবার আবার আমাদের মতবাদে ফিরে আসি। আচ্ছা সত্যি করে বলুন তো বালবাস বউ দেখার সময় জাহাজের লিঙ্গ নিয়ে আপনার কোনকিছু মনে হয়েছিল কিনা ? আপানি যদি বেরসিক হয়ে থাকেন তবে আবার দেখুন তো ঐ বালবাস বউ সহ জাহাজটিকে আসল পুরুষ মনে হচছে নাকি !! আমি বলে দেবার পর এবার আবার স্টার্ন টিউব দেখে আসুন। জাহাজটিকে মেয়ে মনে হবার কথা। তাহলে সারাংশ কি দাড়াল ? জাহাজে পুরুষের বৈশিষ্ট্য যেমন আছে তেমনি মেয়ালী বৈশিষ্ট্য ও বিদ্যমান। তাহলে একই জাহাজে পুরুষ ও মহিলা বৈশিস্ট্য বিদ্যমান। আপনি জাহাজকে বলতে পারেন উভয় লিঙ্গ বা থার্ড জেন্ডার। অবিশ্বাস্য ভাবে দেখুন উপরের বানীটির সাথে ও কোন দ্বন্দ থাকে না।
উপরের লেখাটিতে এটি একটি রম্য গবেষনা। শুধুই মজা করার জন্য। কেউ সিরিয়াসলি না নিলে খুশি হব।
ধন্যবাদ
গত পর্ব ছিল ক্লাসিফিকেশন সোসাইটির সৃস্টির ইতিহাস। লিংক এখানে
জাহাজী কিছু মজার শব্দের (বাংলায়) প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ - ৩
এছাড়া ও আগের দুটি পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
জাহাজী কিছু মজার শব্দের (বাংলায়) প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ - ২
জাহাজী কিছু মজার শব্দের (বাংলায়) প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ - ১
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:০১