গুগল আসলে একটি ক্যালকুলেটর
গুগলের ক্যালকুলেটরটা যে কতোভাবে কতো কায়দায় ব্যবহার করা যায়, 'তার উদাহরণ পাবেন এখানে। ক্যালকুলেটর কখনো কখনো উত্তরদাতার ভূমিকাও পালন করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার ভৌতিক কাজকারবারও দেখায়। যেমন আপনি যদি গুগলের সার্চ বক্সে গিয়ে প্রশ্ন করেন- The answer to life, the universe, and everything is. গুগল সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর দেবে '42'. অথবা যদি লিখেন- once in a blue moon. গুগল কী উত্তর দেয় দেখুন! সার্চ বক্সে 'number of horns on a unicorn' লিখলেও গুগল রসিকতা করতে ছাড়বে না। গণিতে আবার গুগল বেশ পাকা। দেখুন কিছু উদাহরণ- e, pi, phi, G.
ভালো এক কনভার্টার
ভ্রমণে গিয়ে আপনি যখন ভেবে হয়রান, এক পাউন্ডে কতো ডলার চলছে বর্তমান বাজারে, গুগল তখন আপনার জন্য নির্ভরযোগ্য সমাধান। পাউন্ড থেকে ডলার, ইউরো থেকে ইয়েন - এভাবে প্রায় সব মুদ্রার মান রূপান্তর করে দিতে পারে অনায়াসে, যদিও টাকা (BDT) তার হিসেবে এখনো নেই। তাপমাত্রার সূচক রূপান্তরই হোক আর কিংবা এক কিলোমিটারে কতো ফুট কিংবা এক ইঞ্চি সমান কতো সেন্টিমিটার- সবই মহূর্তে রূপান্তর করে দিতে পারে গুগলের ছোট্ট সার্চ বক্সটা। কিলোমিটার থেকে ফুটে রূপান্তরের জন্য লিখুন 1 km in feet. ইঞ্চি থেকে সেন্টিমিটারে রূপান্তরের জন্য 1 in in cm. মূদ্রাকে পাউন্ড থেকে ডলারে রূপান্তরে জন্য লিখুন 1 GBP in USD. ইউরোকে ইয়েনে রূপান্তরের জন্য 1 EUR in YEN. উল্টোটাও করতে পারেন।
মাথায় কতো প্রশ্ন আসে
বিখ্যাত কারো জন্মদিন কিংবা মৃত্যুদিন জানতে চান কোনো কিছু না ঘেঁটেই? তাহলে শুধু লিখুন এভাবে- barack obama born in * কিংবা Einstein died in *. লক্ষ্য রাখবেন শেষে শুধু একটি স্পেস দিয়ে একটি অ্যাসটারিস্ক চিহ্ন (*) শুধু যোগ করে দেবেন। ঠিক এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জনসংখ্যা কতো জানার ইচ্ছে হতেই পারে আপনার, শুধু লিখুন population bangladesh আর দেখুন। কিংবা আপনি জানতে চাইতে পারেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী বা গ্রিসের প্রেসিডেন্টের নাম কী।
বেশ কাজের একটা অভিধান
গুগল আবার ডিকশনারিও। বাংলা থেকে ইংরেজি আর ইংরেজি থেকে বাংলা অভিধানটি খুবই কাজের জিনিস।
ভালো থাকুন, আপডেটেড থাকুন
■ ঠিক এখনই জেনে নিন নিউ ইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া, প্যারিস কিংবা লন্ডন অথবা আমাদের ঢাকার আবহাওয়ার খোঁজখবর। শহরের নাম লিখে একটি স্পেস দিয়ে শুধু forecast শব্দটি লিখে সার্চ দিন। 'temperature' লিখলেও চলবে।
■ সূর্যাস্ত কবে আর সূর্যোদয় কখন- সেটাও জেনে নিন এক সেকেন্ডে। সূর্যাস্তের জন্য 'Sunset in' লিখে তার পাশে যে কোনো শহরের নাম লিখুন। আর সূর্যোদয়ের সময় জানার জন্য লিখবেন 'Sunrise in'. দেখুন- আজ ঢাকায় সূর্য অস্ত কবে গেছে?
■ বাইরের তো বটেই, বাংলাদেশের স্থানীয় সময়ও জানিয়ে দিতে পারে গুগল। time in লিখে একটি স্পেস দিয়ে যে কোনো শহরের নাম লিখে সার্চ দিন কেবল। যেমন এই মুহূর্তে সিলেটে ক'টা বাজে?
নির্দিষ্ট ফরম্যাটের ফাইল খোঁজা
ধরুন নির্দিষ্ট কোনো ফরম্যাটের ফাইল চান আপনি। সেটাও পারবেন। সার্চ টার্মের জায়গায় আপনি কোন্ বিষয়ে ফাইল চান, সেটা লিখুন। যেমন আপনি যদি পিডিএফ ফরম্যাটে শুধু হুমায়ূন আহমেদের বইগুলো চান, তাহলে লিখুন- humayun ahmed filetype:pdf
গুগলের সার্চ বক্সে সার্চের বিষয়টি লিখে একটি স্পেস দিয়ে ফাইল টাইপ লিখুন- মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের ফাইল চাইলে filetype:doc কিংবা পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন চাইলে filetype:ppt. এভাবে অন্যান্য যে কোনো ফরম্যাটের ফাইল আপনি খুঁজে বের করতে পারবেন।
গানের রাজ্য
এমপিথ্রি ফরম্যাটের ফাইল নিয়ে গুগল একধরনের লুকোচুরি খেলে সবসময়ই। সাদামাটা সার্চ করলে সহজে পাওয়া যায় না। এ থেকে মুক্তি পেতে গুগলের মাধ্যমে আপনি মিডিয়াফায়ার, ইস্লাইপস বা এই ধরনের আপলোডিং সার্ভিসে হানা দিতে পারেন। পদ্ধতিটাও সোজা। কেনি ওয়েস্টের গান দরকার আপনার, সেক্ষেত্রে গুগল সার্চ বক্সে গিয়ে আপনাকে লিখতে হবে
kanye west site:mediafire.com
এখানে মিডিয়াফায়ারের বদলে অন্য যে কোনো আপলোডিং সার্ভিসের নাম বসাতে পারেন ইচ্ছেমতো।
সাইট সার্চ
অনেকেই জানেন, আপনি যদি 'site:'-এর পাশে যে কোনো ওয়েবসাইটের নাম লিখে সার্চ করেন, তাহলে গুগল শুধু ওই সাইট থেকেই ফলাফল দেখাবে। উদাহরণস্বরূপ- আপনি যদি সামহোয়্যারইন ব্লগে 'ভূমিকম্প' বিষয়ক ফলাফলগুলো চান, তাহলে সার্চ করলে কী দাঁড়ায় দেখুন। চাইলে কোনো নির্দিষ্ট দেশের ডোমেইন দিয়েও সার্চ করতে পারেন।
সাইট সার্চের আরো সুবিধা আছে, ধরুন আপনার নিজের ব্লগের আর্কাইভ থেকে পুরনো একটি লেখা খুঁজছেন, সেক্ষেত্রে 'site:'-এর জায়গায় আপনার ব্লগের ঠিকানাটি দিয়ে দিন। উদাহরণ হিসেবে ধরুন, মোবাইল নিয়ে আমার পুরনো লেখাগুলো খুঁজছি। সেক্ষেত্রে আমার কাজ হবে গুগলের সার্চ বক্সে গিয়ে শুধু মোবাইল+site:http://www.somewhereinblog.net/blog/Fusion5 লিখে এন্টার করা।
আপনাকে নিয়ে কী বলাবলি হচ্ছে
আপনার সম্পর্কে অন্যরা কী বলছে, সেটা জানার ইচ্ছে আপনার হতেই পারে। যেমন আমি মাঝে মাঝে দেখি, ব্লগসাইটগুলো ছাড়া ইন্টারনেটের অন্যত্র আমার সম্পর্কে কী কী কুৎসা লেখা হচ্ছে সাম্প্রতিককালে। যেমন, আজ দেখলাম ডয়েচে ভেলে ব্লগ পুরস্কার বিজয়ী আলী মাহমেদ তার এক লেখায় আমার বিরুদ্ধে একটি ক্ষুদ্র কুৎসা রচনার চেষ্টা করেছেন। যা হোক, এই ধরনের সার্চের ফরম্যাটটি হবে এরকম-
ফিউশন ফাইভ -site:somewhereinblog.net -site:sachalayatan.com -site:amarblog.com -site:prothom-aloblog.com.com
অর্থাৎ যে সাইট থেকে আপনি সার্চের ফলাফল চান না, সেটা লিখে তার আগে একটি মাইনাস (-) চিহ্ন দিন। তাহলে ওই সাইটকে উপেক্ষা করেই গুগল তার সার্চের ফলাফল দেখাবে। 'ফিউশন ফাইভ'-এর জায়গায় আপনার ইচ্ছেমতো যে কোনো শব্দ বসাতে পারেন। ওটা কেবল উদাহরণ।
উন্মুক্ত ক্যামেরার খোঁজ
■ আইপি ক্যামেরা থেকে পাওয়া ভিডিও স্ট্রিমও দেখতে পারেন গুগল থেকেই। গুগলের "inurl" ফিচার ব্যবহার করে আপনি পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অনেকগুলো উন্মুক্ত ক্যামেরার খোঁজ পেতে পারেন। যেমন দেখতে পারেন এই ক্যামেরাগুলোর ভিডিও স্ট্রিমগুলো।
■ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত লাইভ ওয়েবক্যামের খোঁজ পাওয়ার জন্য ব্যবহার করতে পারেন গুগলের এই ফিচারটি।
হোমপেজে ভিনদেশী হানা
গুগল হোমপেজ নিয়ে আগে আমি প্রায়ই ঝামেলায় পড়তাম। হোমপেজে হংকংয়ের লিংক দেখাতো। পরে জেনেছি, ইউজারের আইপির অবস্থান শনাক্ত করে গুগল ঠিক ওই দেশের হোমপেজে নিয়ে যায়। এটা অনেক সময় বিরক্তিকর হয়ে দাঁড়ায়, বিশেষ করে দেশের বাইরে কোথাও গেলে। এ থেকে মুক্তি পেতে, মানে গুগলের মূল হোমপেজ সবসময় অটুট রাখার জন্য নিচের ঠিকানাটি ব্যবহার করুন-
http://www.google.com/ncr
ভৌতিক কাণ্ডকারখানা
■ গুগল সবসময় যে সঠিক বলে, তা কিন্তু নয়। অনেক সময় সঠিক শব্দ লিখলেও সে একপ্রস্থ পণ্ডিতি করবেই! 'recursion' শব্দটি দিয়ে সার্চ করেই দেখুন না।
■ গুগলের বহুল পরিচিত 'I'm Feeling Lucky' বাটনটা ঠিক কতো মানুষ ব্যবহার করে, কিংবা আদৌ ব্যবহার করে কিনা- সেটা আমার কাছে এক রহস্য। আপনি গুগলের হোমপেজে xx-hacker লিখে "I'm Feeling Lucky" বাটনে ক্লিক করুন। কী কাণ্ড দেখুন! অথবা 'french military victories' লিখে "I'm Feeling Lucky" বাটনে চাপ দিন। সবচেয়ে মজা লাগবে, যদি গুগল হোমপেজের সার্চ বক্সে 'who's the cutest?' লিখে "I'm Feeling Lucky" বাটনে ক্লিক করেন।
■ গুগলের মাঝেই লুকিয়ে আছে বেশ কয়েকটি বিশেষায়িত সার্চ ইঞ্জিন। আপাতত মাইক্রোসফট আর লিনাক্সের দিকে তাকান একনজর।
বিবিধ
গুগলের নতুন ফন্ট ডিরেক্টরিটা বেশ কাজের মনে হল, বিশেষত ওয়েব ডেভেলপারদের জন্য। ওদিকে গুগলকে কিন্তু ফোনবুকও বলা যায়। আপাতত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব পাবলিক নম্বরই সেখানে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে সীমানা আরো বাড়তে পারে হয়তো। তবে গুগলের স্পেলচেকারটিকে সর্বজনীন বলতে হবে। এরপরও শুধু ব্রিটনি স্পিয়ার্সের নাম লিখতে গিয়ে মানুষ যে কী হারে ভুল করেছে, দেখুন একনজর! গুগল সার্চ সম্পর্কে আরো জানতে এটা দেখুন, আর সার্চ টিপস পাবেন এখানে।