আমি প্রতিদিন অফিস থেকে বাসায় ফিরে প্রথমেই যে কাজটি করি তা হলো আব্বা-আম্মার সাথে ফোনে কথা বলি। কোনদিন ফোন আব্বা রিসিভ করেন আবার কোনদিন আম্মা ফোন রিসিভ করেন। আম্মা ফোন রিসিভ করলে জিজ্ঞাসা করেন "কে পলাশ ?" "পলাশ" আমার বড় ভাইয়ের নাম। আমি তখন আম্মাকে বলি, "আপনি আমাকে ভালবাসেন না, ভাইয়াকে বেশি ভালবাসেন তাই ফোন ধরেই ভাইয়ার নাম বলেন"। আম্মা একটু রাগ হয়ে বলেন, "বাবা মায়ের কাছে সব সন্তানই সমান"। এই প্রসঙ্গে আম্মা উদাহরণ হিসেবে আমার মরহুম দাদীর কথা বলেন। আমার দাদীর ৮ ছেলে ১ মেয়ে। আমার দাদী সবাইকে নির্দিষ্ট নামে না ডেকে মিয়া নামে ডাকতেন। আমার আম্মার প্রথম সন্তান অথ্যাৎ আমাদের বড়ভাই ১১দিন বয়সে মারা যান, তার নাম ছিল ইমতিয়াজ উদ্দিন মাহমুদ মেনজিস। সেই ৫২ -৫৩ বছর আগের কথা বলে আম্মা এখনও এমনভাবে কাঁদেন যেন আমার ভাই মেনজিস গতকাল মারা গেছেন।
যাহোক আম্মার ফোন ধরেই পলাশ বলার গল্পটি আমি আমার এক চাচার সাথে শেয়ার করি। চাচা জিজ্ঞাস করলো তাতে কি আমার মন মন খারাপ হয়? আমি বললাম কিছুটাতো হয়। কাকা বললো মন খারাপ করোনা। কাকা এরপর জিজ্ঞাসা করলো সব মাসেইতো চাকুরি করে বেতন পাও, কিন্তু প্রথম বেতনটা হাতে পেয়ে কেমন লেগেছিল? আর প্রথম মাসের পুরো বেতনটা যদি হারায়ে ফেলতা তাহলে কেমন লাগতো? প্রথম মাসের পুরো বেতনটা হারানোর পর দ্বিতীয় মাসের বেতনটা হাতে পেলে নিশ্চয়ই আরো বেশি সাবধান এবং আবেগী হয়ে যেতা। তোমার আম্মা প্রথম মাসের বেতন হারিয়ে ফেলেছে এবং দ্বিতীয় মাসের বেতনটা ছিল পলাশ। আমি কাকার কথা অনুধাবন করি এবং আমার মেয়েটার জন্মের পর তোয়ালে পেঁচিয়ে যখন আমার কাছে নিয়ে আসলো সেই অনুভূতিটাও আবার অনুভব করি।
শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন আহমেদের একটি লিখা পড়েছিলাম, "বাবা-মা'র প্রথম সন্তান হচ্ছে চমৎকার একটি জীবন্ত খেলনা। এই খেলনার সবই ভালো। খেলনা যখন হাসে, বাবা-মা হাসে। খেলনা যখন কাঁদে বাবা-মা'র মুখ অন্ধকার হয়ে যায়"।
এখন আমি ফোন করলে আমার আম্মা যখন বলে "কে পলাশ" তখন আমার খুব ভালো লাগে এবং তোয়ালে পেঁচানো আমার মেয়েটাকে প্রথম দেখার সুখটা অনুভব করি।