পড়ুন-@ তাওহীদুল্ উলুহিয়্যাহ্ বা ইবাদাতে একত্ববাদ-এর প্রমাণাদি (১)
তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ্ বা ইবাদাতে একত্ববাদকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যেই আল্লাহ্ তা'আলা যুগে যুগে তাঁর বাণী সম্বলিত কিতাবসমূহ প্রেরণ করেছেন। তিনি তাঁর পক্ষ হতে এসব নির্দেশ পাঠানোর কাজে ব্যবহার করেছেন ফিরিশতাগণের মাধ্যম, আর একথা সকল ঐশী কিতাব প্রাপ্তদের জানা রয়েছে যে, নবী-রাসূলগণের নিকট ওহী পৌঁছানোর দায়িত্ব জিবরীল 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের। কখনো কখনো বিভিন্ন প্রয়োজনে আল্লাহ্ একাধিক বা একদল ফিরিশ্তাকেও পাঠিয়েছেন। আল্লাহ্ তা'আলা ইবাদাতে একত্ববাদের প্রমাণ তথা উদ্দেশ্য বর্ণনা করে বলেন:
((তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা স্বীয় নির্দেশ ওহীসহ ফিরিশ্তাদেরকে এই বলে নাযিল করেন যে, তোমরা সতর্ক করে দাও যে, নিশ্চয়ই আমি ছাড়া কোন প্রকৃত ইলাহ্ নেই। অতএব, আমাকে ভয় কর।)) [সূরা আন্-নাহ্ল: ২]
কিন্তু কি হবে তাওহীদুল্ উলুহিয়্যাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কি সুফল পাওয়া যাবে দুনিয়ার এই পার্থিব জীবনে এবং কি প্রতিদান ও মর্যাদাই বা অপেক্ষমান অনন্ত আখেরাতে; এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ সোবহানাহু ওয়াতা'আলা বলেন:
((যারা ঈমান এনেছে এবং ঈমানকে যুলুম দ্বারা কলুষিত করেনি, নিরাপত্তা তাদেরই জন্য এবং তারাই সৎপথ প্রাপ্ত।)) [সূরা আল-আন'আম: ৮২]
লক্ষ্যণীয় যে, (১) ঈমান আনা, (২) ঈমানকে যুলুম দ্বারা কলুষিত না করা। এখানে যুলুমের বর্ণনা বিস্তর, তা হতে পারে ব্যক্তির একান্ত মনে মনে, দৃষ্টিতে, শ্রবণে, অনুভবে কিংবা হতে পারে সমষ্টির সাথে কৃত যুলুমে। সর্বোপরি এ দু'টির বিনিময়ে বলা হয়েছে- (১) নিরাপত্তা লাভ ও (২) সৎপথ প্রাপ্তি। প্রথমটি অর্থাৎ, নিরাপত্তার বিষয়টি দুনিয়াতে যেমন কার্যকর থাকছে তেমনি আখেরাতে পরিপূর্ণরূপ নিয়েই কার্যকর থাকবে; বরং আখেরাতের নিরাপত্তা লক্ষ দুনিয়ার নিরাপত্তার চাইতেও শ্রেয়। কেননা, সেদিন নিরাপত্তা দানকারী এবং পাকড়াওকারী হবেন আল্লাহ্ সোবহানাহু ওয়াতা'আলা; যদিও দুনিয়াতেও তিনিই সে ক্ষমতা রাখেন, কিন্তু এ জাগতিক জীবন তো আমাদের পরীক্ষাকেন্দ্র, তাই এখানে ছাড় রয়েছে।
যারা তাওহীদুল উলুহিয়্যাহর ব্যাপারে উদাসীন(গাফেল), অস্বীকারকারী(কাফের) কিংবা অংশীবাদী(মুশরিক), তাদের পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। আল্লাহ্ তা'আলা বলেন:
((নিশ্চয়ই যে আল্লাহর সাথে শরীক করবে আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন এবং তার আবাস হবে জাহান্নাম। আর যালেমদের কোন সাহায্যকারী হবে না।)) [সূরা আল মায়েদাহ্: ৭২]
তিনি আরো বলেন:
((আর আপনি আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহ্ সাব্যস্ত করবেন না, করলে আপনি নিন্দিত ও বিতাড়িত অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবেন।)) [সূরা আল-ইসরা: ৩৯]
মূলতঃ তাওহীদুল উলুহিয়্যার ক্ষেত্রে তিন প্রকার হতে পারে মানুষেরা- (১) গাফেল বা উদাসীন, এদের বেশীর ভাগই ঈমানদারদের মধ্য থেকে। তারা কখনো জানার চেষ্টাটুকুও করে না যে, কার উপর তারা ঈমান এনেছে, তাঁর পরিধি কতদূর, তাঁর ক্ষমতা কি, তাঁর নাম-গুণাগুণ ইত্যাদি সম্পর্কে বেমালুম-বেখবর হয়েই তারা নিশ্চিন্ত থাকছে যে, তারা তো মুসলমান। অথচ আল্লাহর একত্ববাদের বিশ্বাসে বিন্দুমাত্রা হেরফের হলেই যে তাদের মুসলমানিত্ব ধোঁয়ার মত উবে যাবে, সে ব্যাপারে কোন চেতনাবোধই তাদের দেখা যায় না।
এছাড়া বাকী দু'পক্ষের কেউ তো অস্বীকারের দোষে প্রারম্ভেই বাদ পড়ে যায় এবং যারা কিছু কিছু স্বীকার করে বাকী বিশ্বাসের সাথে অংশীবাদ মিশ্রিত করার মাধ্যমে চরমতম ক্ষতি করে ফেলছে নিজেদের। বিশ্ববাসীর জন্য ইবাদাতে একত্ববাদ বা তাওহীদুল উলুহিয়্যার প্রতি সুদৃঢ় বিশ্বাসী হওয়ার মধ্যেই নিহিত রয়েছে যাবতীয় দুনিয়াবী কল্যাণ এবং আখেরাতের অনন্ত শান্তি। অন্যথা কেউ নেভাতে পারবে না এই অশান্ত পৃথিবীর দাউ দাউ আগুনকে; ক্রমান্বয়ে তা বৃদ্ধিই পাবে কেবল। অবশেষে মৃত্যুর মাধ্যমে অনন্ত প্রজ্জ্বলন!!!!!!!!
আল্লাহ্ আমাদের হেফাযত করুন, তাঁর তাওহীদ বা একত্ববাদ বিশ্বাসের ভ্রান্তি, গাফলতী ও অংশীবাদের নিমজ্জন থেকে।