মানবজাতির স্রষ্টা মহান আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর সৃষ্টিজগতে মানুষকে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দান করেছেন বিবেক প্রদানের মাধ্যমে। তাই এমন স্রষ্টার পক্ষ হতে আসা বিধি-বিধান বিবেব বহির্ভূত হবে; এটি একটি অসম্ভব ব্যাপার। কেননা, কাউকে বুঝার ক্ষমতা না দিয়ে যদি অদ্ভুত কিছু উপস্থাপন করা হয় তবে তা অদ্ভুতই থেকে যাবে চিরদিন, আর বিচার-বিবেচনার ক্ষমতা দিয়ে অবিবেচকসুলভ নীতি চাপিয়ে দেয়া নিঃসন্দেহে কারো নিজের প্রভাবের জন্য মঙ্গলজনক নয়; একথা পরিস্কার। তাই আমাদের সুবিবেচক মা'বূদ আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর সৃষ্ট বিবেকসম্পন্ন মানুষের নিকট এমন কোন দাবী কখনোই করেননি, যার ব্যাপারে তিনি সুস্পষ্ট উদাহরণ-দলীল-প্রমাণাদি পেশ করেননি। তিনি তাঁর সকল বাণীতেই মানুষকে সত্যোপলব্ধির আহ্বান জানিয়েছেন এবং সে জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছেন, যেমন- বাণীকে কিতাব আকারে প্রেরণ, বাণী বুঝিয়ে দেয়ার জন্য ও বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে দেয়ার জন্য নবী-রাসূল প্রেরণ, নবী-রাসূলগণকে মূ'জিযা প্রদান ও অসংখ্য আয়াত বা নিদর্শন প্রদান ইত্যাদি।
এমন দয়াময় স্রষ্টা-যিনি আমাদের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য এতকিছু করলেন-আমাদের কাছে অত্যন্ত সমীচীন একটি দাবী করেছেন যে-
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
((হে মানবমণ্ডলী! তোমরা তোমাদের সেই প্রভুর ইবাদাত কর যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পার।)) [সূরা আল-বাকারাহ্: ২১] কেননা, বিবেকবানদের নিকট খুব সহজ ও সরল একটি নীতি প্রচলিত যে, "মনিবের প্রতি ভয় ও শ্রদ্ধামিশ্রিত ভালবাসা পোষণ করা বাঞ্ছনীয়"। যদি 'মানব-মনিব'-এর জন্য মানুষ এ নীতি মেনে নিতে পারে নির্দ্বিধায়, তবে 'স্রষ্টা-মনিব'-এর জন্য কেন পারবে না; হে মানুষ?
তাই যারাই 'স্রষ্টা-মনিব'-এর ক্ষেত্রে এসে তাঁর ইবাদাতে তথা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভয়মিশ্রিত ভালবাসা প্রদর্শনে বিমুখ হয়েছে; তারাই দুনিয়া ও আখেরাতে বিভ্রান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে এবং হবে, কোন সন্দেহ নাই। কেননা, আমাদের স্রষ্টা আমাদেরকে জানিয়ে দিচ্ছেন-
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
((আর জিন ও মানবকে আমি শুধুমাত্র আমার ইবাদাতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।)) [সূরা আয্-যারিয়াত: ৫৬] মানব জাতির দুর্ভাগ্য যে, তারা সুস্থ বিবেক-বুদ্ধি পেয়েও শয়তান কর্তৃক বিভ্রান্ত হয়। তাদের স্রষ্টা ও প্রতিপালক যে এক ও একক; এ ব্যাপারে শয়তান তাদেরকে ধোঁকায় ফেলে প্রতিনিয়ত। তাই আমাদের মহান প্রভু আমাদেরকে সতর্ক করে দিচ্ছেন-
وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا
((আর তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর এবং তাঁর সাথে কোন কিছুর শরীক স্থাপন করো না।)) [সূরা আন্-নিসা: ৩৬] শুধু কি তাই? তিনি যুগে যুগে তাঁর বাণীসমূহকে মানব জাতির নিকট পড়ে শোনানোর জন্য এবং মানুষ হিসেবে প্রভুর বাণী বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে দেয়ার জন্য যে সকল নবী রাসূলগণ পাঠিয়েছেন, তাদেরকে সম্বোধন করে করে তিনি আমাদেরকে জানাচ্ছেন যে-
وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ
((আপনার প্রভু আদেশ করেছেন যে, তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করো না।)) [সূরা আল-ইসরা: ২৩]
সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর নবী-রাসূলগণকে তাঁর ইবাদাতে একত্ববাদের যে নির্দেশনা দিয়ে পাঠিয়েছেন, তা তিনি উল্লেখ করেন এভাবে-
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ
((আর নিশ্চয়ই আমরা প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি এ নির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর এবং তাগূতকে বর্জন কর।)) [সূরা আন্-নাহল: ৩৬] মূলত এক ও একক আল্লাহর ইবাদাত থেকে যেসব অপশক্তি মানুষকে মুখ ফিরিয়ে নিতে কিংবা শিথীলতা প্রদর্শন করতে প্ররোচিত করে তারা সবাই তাগূতের অন্তর্ভুক্ত। কিংবা অন্য কথায়, যে শক্তি নিজে আল্লাহর অবাধ্য এবং অন্যকেও আল্লাহর অবাধ্য হতে বাধ্য করে কিংবা প্ররোচিত করে, সে-ই তাগূত।
তাই আমাদের উচিত তাগূতকে অস্বীকার করে সত্য নবী-রাসূলগণ কর্তৃক সত্যের প্রতি আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভয়াবহ অধঃপতন থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করা, যাদের দাওয়াত সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ্ তা'আলা বলেন:
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ
((আমরা আপনার(মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পূর্বে কোন রাসূল প্রেরণ করিনি তাঁর প্রতি এ ওহী প্রেরণ ব্যতীত যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন সত্য ইলাহ্ নেই। সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত কর।)) [সূরা আল-আম্বিয়া: ২৫]
নোট-
উপরের লেখায় তাওহীদুল উলুহিয়্যাহর ৩ প্রকার প্রমাণ এসে গেছে:
১) ইবাদাতের নির্দেশ সম্বলিত প্রমাণ
২) সৃষ্টিজগতের উদ্দেশ্য ও অস্তিত্বের মূল ভিত্তির তথ্য সম্বলিত প্রমাণ
৩) নবী-রাসূলগণকে প্রেরণের উদ্দেশ্য সম্বলিত প্রমাণ
(অসমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ১০:২৫