সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজরা ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যবসার নাম করে সুঁইয়ের মত প্রবেশ করেছিল, তারপর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের বিস্তারিত থাবা গ্রাস করে নেয় ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ ভারতবর্ষকে; একথা কারুরই অজানা নয়। কিন্তু দখলদারীর শুরু থেকেই তারা বিভিন্নভাবে আক্রান্ত হচ্ছিল ভারতবাসীর, বিশেষ করে মুসলমানদের জন্মভূমি পুনরুদ্ধারের আকাংখার রোষাণলে, ঘৃণায়, বিপ্লবে, সংগ্রামে। মহাদেশের দূরত্বের ব্যবধানেও কি করে এবং কোন কৌশলে সাম্রাজ্য পরিচালনা করতে হয়, বৃটিশদের তা ভালভাবেই জানা ছিল। আর তাই তারা তাদের সাম্রাজ্যের অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা মনে করলো মুসলমানদের জিহাদী চেতনাকে। চক্রান্ত হলো কি করে এটাকে নির্জীব করে দেয়া যায়।
এ চক্রান্তের ফলাফল দাঁড়ালো শতাব্দীর দু'জন মুরতাদ, মিথ্যাবাদীকে ক্রয়ের মাধ্যমে। তাদের একজন ছিল ইরানের বাহাউল্লাহ নামে পরিচিত মির্জা হুসাইন আলী আর দ্বিতীয় জন হলো ভারতের গোলাম আহমদ কাদিয়ানী। প্রথম ব্যক্তি তার চক্রান্তের স্বরূপ নিজেই উন্মোচন করে মুসলমানদের থেকে আলাদা হয়ে গেছে তার বোকামীসুলভ দুঃসাহসের কারণে। সে বলেই ফেলেছে যে, তার (ভ্রান্ত) কিতাব দ্বারা পবিত্র কুরআন রহিত হয়ে গেছে এবং সে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরীয়তের রহিতকারী; এর মাধ্যমে সে নিজেকে মুসলমানদের থেকে আলাদা করে নিয়েছে। কিন্তু অতি মাত্রার চালাকীর পথ বেছে নিয়েছে দ্বিতীয় ব্যক্তি। সে মুসলমানদেরকে পিছন থেকে আক্রমন করার ফন্দি করে তার প্রভূ বৃটিশ সরকারের চক্রান্তে। নিম্নে গোলাম ও তার অনুসারী কাদিয়ানী নেতাদের ভাষ্য থেকে কিছু দলীল দিয়া হলো, মুসলমানদেরকে তাদের এবং ইসলাম বিদ্বেষীদের ছড়ানো বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করাই এর মূল উদ্দেশ্য।
মাহমুদ আহমদ রচিত 'বারাকাতুল খেলাফত' নামক গ্রন্থের 65 পৃষ্ঠায় গোলাম আহমদের ছেলে, তার দ্বিতীয় খলিফা কর্তৃক ব্যক্ত স্বীকারোক্তিতে রয়েছেঃ কাদিয়ানী ধর্মসাম্রাজ্যবাদীদের ফসল ছাড়া অন্য কিছু নয়। সে আরো বলেছেঃ আমাদের উপর সাম্রাজ্যবাদীদের অনেক অবদান রয়েছে। আমরা পূর্ণ শান্তি ও আরামের সহিত আমাদের উদ্দেশ্য সাধন করছি এবং বিভিন্ন দেশে প্রচারের উদ্দেশ্যে আমরা যেতে পারছি। বৃটিশ সরকার এখানেও আমাদের সাহায্য করছে। এটা হলো আমাদের উপর তাদের পূর্ণ করুণা ও দয়া।
তৎকালীন বৃটিশ সাম্রাজ্য ভারতের সম্রাজ্ঞী রানীর সান্তনা, করুণা ও অনুগ্রহের বর্ণনা দিয়ে গোলাম আহমদ বলেনঃ আমি কাশফের মাধ্যমে ভারত সম্রাজ্ঞী মহান রাণীকে দেখতে পেলাম, তিনি আমাদের ঘরে আগমন করেছেন। তখন আমি আমার সঙ্গী-সাথীদের একজনকে বললাম যে, মহান রাণী তার পরিপূর্ণ স্নেহ-মমতা ও ভালবাসা দ্বারা আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন। আর আমাদের ঘরে দু'দিন অবস্থান করেছেন। তাই আমাদের কর্তব্য হলো তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। (সূত্র- মঞ্জুর কাদিয়ানী লিখিত 'মুকাশিফাতে গোলাম' পৃ-17)
বৃটিশ সরকারের জন্য প্রাণ ও সম্পদ উৎসর্গ করার অঙ্গিকারে দৃঢ় প্রতীজ্ঞ গোলাম আহমদ তার গ্রন্থে লিখেনঃ আমাদের হিতাকাংখী সরকারের জন্য আমরা সকল প্রকার বিপদ সহ্য করছি এবং ভবিষ্যতেও করবো। কেননা, তার করুণা ও দয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা আমাদের অবশ্য কর্তব্য। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, বৃটিশ সরকারের জন্য আমরা আমাদের প্রাণ ও ধন-সম্পদ উৎসর্গ করবো। আর প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে উহার মর্যাদা ও উন্নতির জন্য আমরা সর্বদা প্রার্থনা করবো। (সূত্র- গোলাম আহমদের রচিত 'আরিয়া ধর্ম' পৃ- 79 ও 80)
বৃটিশ সরকারের পক্ষে কাদিয়ানী গুপ্তচরবৃত্তির সাক্ষ্য দিয়ে জনৈক কাদিয়ানী বলেনঃ আমি বৃটিশের গুপ্তচর হওয়ার অপবাদে কয়েকবার ধৃত হয়েছি। সে গর্বকরে আরো বলেঃ আমি রাশিয়াতে শুধু কাদিয়ানী ধর্ম প্রচারের জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু যেহেতু কাদিয়ানীদের স্বার্থ ও উদ্দেশ্য বৃটিশ সরকারের উদ্দেশ্যের সাথে জড়িত, তাই আমি বৃটিশ সরকারের সেবা করতে এবং আমার উপর তার অর্পিত কর্তব্য সম্পাদন করতে বাধ্য ছিলাম। (সূত্র- কাদিয়ানীদের মুবালি্লগ মুহাম্মদ আমীনের লিখিত এবং আল-ফজলুল কাদিয়ানী পত্রিকায় প্রচারিত, 28 শে সেপ্টেম্বর, 1923 খৃঃ)
(চলবে)
বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ শায়খ হাফেয এহসান এলাহী জহীর এবং মুহামমাদ রকীবুদ্দিন হোসাইন।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০০৮ দুপুর ১:৫৬