somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘ভারতের সঙ্গে সরকারের তাঁবেদারি বন্ধুত্ব‘

১৭ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১০:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সরকারের দুর্বল পররাষ্ট্রনীতি, বিশ্বব্যাংক ইস্যুতে অবস্থান ও এর ভবিষ্যৎ নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। জনগণের টাকা দিয়ে পদ্মাসেতু তৈরির ধারণা প্রচার জাতীয়তাবোধ উসকে দিয়ে সরকারের দ‍ুর্নীতি ঢাকার চেষ্টা বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গত রোববার বাংলানিউজকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে আসিফ নজরুল বলেন, কোনো “সরকার এতোটা বন্ধুহীন এর আগে কখনোই ছিল না। বাংলাদেশের এখন একমাত্র আন্তর্জাতিক মিত্র ভারত। বাংলাদেশ বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, ইউরোপীয় দেশ এবং আমেরিকার বন্ধুত্ব হারাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের যে পররাষ্ট্রনীতি, তা মারাত্মক বিপজ্জনক বাংলাদেশের স্বার্থের জন্য। কারণ আন্তর্জাতিক বিশ্বে জোরালো দর কষাকষি করতে হলে, নিজের অবস্থান ধরে রাখতে হলে, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখতে হবে, এটা ব্যক্তিগত জীবনের মতোই।”
তিনি বলেন, “সকলের বন্ধুত্বকে সন্মানজনকভাবে মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হলেও, ভারতের ক্ষেত্রে এক ধরনের তাঁবেদারিমূলক বন্ধুত্ব বজায় রেখেছে সরকার। এ তাঁবেদারি বন্ধুত্বের কারণেই ভারত একতরফাভাবে বাংলাদেশের কাছ থেকে তাদের পাওনাগুলো আদায় করে নিতে পারছে, স্বার্থ আদায় করছে। কিন্তু বাংলাদেশ পারছে না।”
সার্বিকভাবে এ সরকারের আমলে একমাত্র মিয়ারমারের সঙ্গে সমুদ্রজয়ের মামলা ছাড়া, সাফল্যের আর কোনোরকম নজির নেই বলে মনে করেন আইন বিভাগের এ অধ্যাপক।
তিনি বলেন, “পদ্মাসেতুর মতো অন্যান্য ইস্যুতে সরকার যদি এ ধরনের গোঁয়ার্ত‍ুমি অব্যাহত রাখে, তাহলে বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য দাতা প্রতিষ্ঠান যদি অন্যান্য প্রকল্পের কাজও বন্ধ করে দেয় এবং অন্যান্য ঋণ বাতিল করে, সেটার চাপ রাজনৈতিক ও অর্থনেতিক দু’ভাবেই সামলানো কঠিন হয়ে পড়বে। বিশ্বব্যাংকের অনুজপ্রতিম প্রতিষ্ঠান এডিবি এবং এর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে যেসব উন্নয়ন অংশীদার প্রতিষ্ঠান কাজ করে থাকে, তাদেরও বহু প্রকল্প রয়েছে বাংলাদেশে।”
আসিফ নজরুল বলেন, “বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বন্ধুত্ব নষ্ট হলেই যে আর্ন্তজাতিক শ্রমবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেটা এ মুহূর্তেই বলা যাবে না, তবে এটুকু বলা যায়, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ মারাত্মকভাবে হ্রাস পাবে।”
উন্নয়ন সহযোগীরা সবাই যদি অসন্তুষ্ট হয়ে যায়, এটার প্রভাব আর্ন্তজাতিক ও বৈদেশিক বিনিয়োগের ওপর পড়বে। বিদেশের বাজারে আমাদের পণ্যের ওপরও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন তিনি।
নিজ অর্থায়নেই সরকার পদ্মাসেতু নির্মাণ করবে বলে সরকার যে ঘোষণা দিয়েছে সে ব্যাপারে আসিফ নজরুল বলেন, “সরকার তার দুর্নীতি ও বিভিন্ন সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড আড়াল করার জন্য এখন জাতীয়তাবাদী চেতনা উসকে দিতে চাইছে। ২০০৯ সালেই যদি সরকার নিজ অর্থায়নে পদ্মাসেতু তৈরির ঘোষণা দিতো তবে সেটা গ্রহণযোগ্য হতো। কিন্তু বিশ্বব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পর এ ধরনের ঘোষণা যুক্তিযুক্ত নয়।”
তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তারা পছন্দসই প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার জন্যে চাপ দিয়েছিল। এ অভিযোগে উড়িয়ে দেওয়ার করার উপায় নেই। বিশ্বব্যাংকের মধ্যেও কেউ দুর্নীতি করে থাকতে পারে। এছাড়া বিশ্বব্যাংকের পরিচালনা কাঠামো অগণতান্ত্রিক ও অস্বচ্ছ। বিশ্বব্যাংক দেশের সম্পদকে আন্তর্জাতিক পুঁজির অধীন করে ফেলে, উন্নয়ন সাহায্যের নানা শর্ত জুড়ে দেয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।”
নজরুল বলেন, “তবে এসব সমালোচনা সত্যি হলেও বাংলাদেশে যে শাসকগোষ্ঠী যুগের পর যুগ বিশ্বব্যাংক ও উন্নয়নসহযোগীদের নির্দেশনা মেনে আসছিল। কিন্তু দুর্নীতির কথা বলায় হঠাৎ করে বিশ্বব্যাংকের সমালোচনা শুরু করাটা শোভা পাচ্ছে না।
ঋণ বাতিল করায় প্রতিক্রিয়া হিসেবে যে সমালোচনা করছে সরকার, সেটা মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনতে পারে বলে মনে করেন এ অধ্যাপক।”
তিনি বলেন, সরকারের মন্ত্রীরা এখন বিশ্বব্যংকের সমালোচনায় মুখর এবং জনগণের কাছে সরকারকে স্বচ্ছ প্রমাণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে বাংলাদেশের যদি পর্যাপ্তভাবে নিজ অর্থায়নে পদ্মাসেতু তৈরির ক্ষমতা থাকত কিংবা পদ্মাসেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের খবরদারি অগ্রহণযোগ্য বলে জনগণের কাছে প্রমাণ করতে পারত, সেক্ষেত্রে সরকার ব্যাংকটির সমালোচনায় মুখর হলে হয়তো কিছুটা গ্রহণযোগ্য হতো।
সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, একটি ব্যাপার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হবে, সরকার যেভাবে বিশ্বব্যাংকের পাল্টা সমালোচনা করছে, নিশ্চয়ই বিশ্বব্যাংকও তার শক্তিশালী প্রচারণা কাঠামোকে কাজে লাগাবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে বাস্তবতা বিবেচনা করেই এগোতে হবে। সাময়িক বিবেচনায় কোনো ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।
তবে পদ্মাসেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের আহ্বানে এ দেশের জনগণ বা প্রবাসীরা অংশ নিতে ঝাঁপিয়ে পড়বে বলে মনে হয় না। এ মুহূর্তে দেশের সে অবস্থান নেই বা সরকারের সে বিশ্বাসযোগ্যতাও নেই বলে মনে করেন আসিফ নজরুল।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×