> দিনাজপুর গার্লসে- ফোর/ ফাইভে থাকাকালীন একদিন ধর্ম পড়ে যাইনি, ধর্ম স্যারের প্রিয় ছাত্রী ছিলাম আমি, হায়েস্ট মার্ক সব সময় পেতাম, সেই স্যার সেদিন অন্য ছাত্রীদের সাথে আমাকেও নাকে খত দিয়েছিলো! স্পষ্ট মনে আছে, দোতলার স্কুল ঘরের এমাথা থেকে ওমাথা পর্যন্ত চক দিয়ে দাগ টেনে সেই দাগ আমাদের লাইন ধরে নাক দিয়ে মুছতে হয়েছিলো! ভাবুন তবে---
এই গার্লসেই স্কুল টাইমে ব্যাগ স্কুলে রেখে ষ্ট্যাম্প কিনতে গিয়েছিলাম, ফিরে আসার পথে বড়আপা দেখে ফেলেন, শুধু রাস্তায় ভিড় থাকার কারনে চিনে রাখতে পারেননি তাই টিসির হাত থেকে বেঁচে যাই আমি ও আমার এক বান্ধবী! বড়আপা এসেম্বলির সময় সে কথা ঘোষণা করেছিলেন!
> পাবনা গার্লসে- ক্লাস নাইনে থাকাকালীন একদিন স্কুল ব্যাগ সার্চ করা হয় ( এক মেয়ের চিঠির সূত্রে ) সেদিন আমার ব্যাগে তিন গোয়েন্দার বই পাওয়া যায়! অন্য ছাত্রীদের সাথে আমার অভিভাবককে স্কুলে ডাকা হয়! সেদিন ও অল্পের জন্য বেঁচে যাই টিসি পাওয়া থেকে, সেদিন ও বাংলা ম্যাডাম মামণীকে বলেছিলো- ও আমার প্রিয় ছাত্রী, এখন থেকে গল্পের বই যেন স্কুলে না আনে! বাসায় আমাকে ধুয়ে ফেলা হয়েছিলো... কই মরিনি তো!!
পাবনা এডওয়ার্ড এর এক ক্যামেস্ট্রি স্যারের কাছে পড়তে যেতাম! একদিন পরীক্ষায় নাম্বার কম পাই! সেই স্যার এক সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টুকু আংকেলের ছেলেদের ( আমাদের প্রতিবেশী ছিলো তারা) বাসাতে পড়াতে আসতো, সেই স্যার সেদিন তাদের পড়িয়ে আমার বাসায় নক করে, দরজায় দাঁড়িয়ে বাপি/ মামনীকে ডেকে আমার কথা বলে প্রচন্ড বকেন, স্যার চলে যাওয়ার পর বাসায় আর এক দফা আমাকে ধুয়ে ফেলা হয়-- কিন্তু কই পারিনি তো আত্মহত্যা করতে... ! পরের দিন প্রাইভেটে স্যার আমার মুখ কালো দেখে, কাছে ডেকে স্নেহ দিয়ে বলেন- তুই আমার প্রিয় ছাত্রী, ভালো করবে পড়বি বুঝলি---
এই শহরেও টিজের ঠ্যালায় জীবন অতিষ্ট হয়ে গিয়েছিলো--- তবুও তো আত্মহত্যা করিনি......... !
> পটুয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয় এন কলেজে পড়াকালীন - সেই শহরের ছেলেরা আমাকে টিজ করে আমার জীবনটাকে ছাড়খার করে দিয়েছিলো! নাক লম্বা তাই একদল আমার নাম দেয় “নিক্স”! খুব ছোট শহর পটুয়াখালী! এই শহরে এই নিক্স কথাটা ভাইরাসের মত ছড়ায় , ব্যাপার এমন হয় আমি যে রাস্তায় যাই না কেন আমাকে কেউ না কেউ ডাকবে- এই নিক্স! কলেজের দেয়ালে দেয়ালে আমার নামে বাজে কথা! মাঠের গাছে আমার কার্টুন এঁকে লটকে রাখা, আমাকে দেখে নিবে, উঠিয়ে নিবে কত কথা! আমার বাপি/ মামনীকে নিক্স এর বাবা মা, বান্ধবীদের নিক্স এর বান্ধবী বলত তারা! এই বিষয় নিয়ে আমার ক্লাসমেটদের সাথে বিভিন্ন গ্রুপের মারামারিও হয়, পুলিশী ব্যাপারও ঘটে! এতটাই অতিষ্ট করেছিলো যে আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে পড়াশুনা ছেড়ে দিতো কিংবা আত্মহত্যা করতো-- কিন্তু আমি করিনি, অনার্স/ মাস্টার্স এ ফাস্ট ক্লাস হাতে নিয়ে বের হয়েছি! একসময় সেই ছেলেরা নিজেরাই নত হয়, আমাকে সম্মান করতে শিখে......... ( জীবনের সবচেয়ে খারাপ ঘটনার একটা এইটা)
>> তো এই ধৈর্যের শিক্ষা আমার পরিবার শুধু আমাকে দেয়নি, আমি নিজে অর্জন করেছি! পরিবার কতবার কত কথা বলেছে এসব বিষয়ে কিন্তু কিভাবে কিভাবে যেন নিজেকে সামলে নিয়েছি! এর থেকেও খারাপ কিছু আরো ঘটেছে, ঘটছে, জীবন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে- কিন্তু সাহস দেখিয়ে আত্মহত্যা করিনি বরং দুঃসাহস দেখিয়ে আত্মহত্যাকে ঝেটিয়েছি মন থেকে!! ভেবেছি, আমি মরলে- আমার পরিবারে আরও ৩টা লাশ পরবে---
>>> আর এখনকার ছেলে/মেয়েরা একটু কিছু হলেই “আত্মহত্যা” করছে! এখন আসি- ভিকারুন্নেসা প্রসঙ্গে- প্রথম দোষ মেয়েটার, সেই সাথে তার পরিবারের! কেন সে স্কুলে মোবাইল নিয়ে যাবে? আবার নকলের কথাও এসেছে! স্কুলে কিছু নিয়ম থাকে- যার কারনে টিসি দেয়া হয়! এই নিয়ম যদি উঠিয়ে দেয়া হয়, তবে বাচ্চারা শিখবে কি? বলতে পারেন? ২য় দোষী- স্কুল কতৃপক্ষ, তারা সার্চ করে কেন রুমে ঢুকায় নাই? এবং চাইলে তারা একবার সেই মেয়েকে সুযোগ দিতে পারতো, অন্য শাস্তি দিয়ে! এবং ছাত্র/ শিক্ষক - সত্যি বলতে কি- এখনকার ছেলে/মেয়েরা অন্যরকম! একজন শিক্ষক হিসেবে বিভিন্ন স্কুলে পড়াতে গিয়ে দেখেছি তা, এদের কন্ট্রোল করা অনেক টাফ! আর কিছু শিক্ষক, সত্যি-ই-- খুব খারাপ ব্যবহার করেন, মারেন ছাত্রদের--! সব মিলিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাটা এখন আর আগের মত নেই!
কিন্তু “আত্মহত্যা” তো কোন সমস্যার সমাধান হতে পারে না... ! এভাবে কেউ চলে যাবে তা আমরা কেউ চাই না!!
একারনেই স্কুল/কলেজ/ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কাউন্সিলিং ক্লাস ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য এবং শিক্ষকদের জন্য বিশেষ ক্লাস- “ ছাত্রদের প্রতি তাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিৎ” নেয়া দরকার------!