সৈয়দুন্নেছার সন্ধ্যা
অদূরের প্রেমহার খালে জোয়ারের অপেক্ষায় থাকা নাইওরী নৌকাসম অলসতা ভর করা সন্ধ্যাগুলো যখন শতবর্ষী তেঁতুল গাছের ঘন ছায়ার মতো গাঢ় করে তোলে অতীতের অবয়ব, ঠিক তখন-ই উত্তরমুখী মাস্তুলে দাঁড়িয়ে কলা-বাড়ির সাঁকোর তল দিয়ে চাচৈরের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় বহু বর্ষ পূর্বে প্রয়াত এক বৃদ্ধা সৈয়দজাদীর ততোধিক পুরানো প্রতীক্ষা; তথা শরীফ বাড়ির সুন্দরী বালিকা বধূর অপেক্ষাক্রান্ত হিজলরঙা সায়াহ্নের দৃশ্যাবলী।
হিতাকাঙ্ক্ষা
আর্মেনিয়ান বাঁশির মতো
বিরহী স্নায়ুর মরুদ্যানে—
ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়া
যে প্রাণবন্ত জোয়ান যাদুকর
নিগূঢ় খেয়ালের মতো নাচে
দৃঢ় ক্যানভাসে ক্যানভাসে,
মায়ারঙা নিখাদ প্রণয় এঁকে
তাঁর অবিদিত আমুদে বুকে
ডুবে যায় তৃষ্ণার্ত রাধিকা;
আহা কী কোমল প্রখর চুমুক
রমণীয় ভরাট চিবুকের ঢালে
আবারো ফিরলে তৃপ্তির টোল
মনমরা বিফল অতীত ভুলে
—প্রিয় প্রাক্তনও সুখে থাকুক
রোদন
বৃক্ষহীন পাথুরে উপত্যকায় বিকশিত
জন্মান্ধ কবির মাতাল মাদলের তালে
কেঁপে কেঁপে কেঁদে উঠলে নদী,
—সহস্র সেতার হয়ে বাজে
দুনিয়ার শেষ জলদস্যু মন;
আর ঠিক তখনই কোথাও
উদাসী সুরের বরষায়—
পলির মতো ভেসে যায় কথা,
নৈঃশব্দের বনে উড়ে যাওয়া
নামহীন রাতপাখির বুকেও
—খা খা করে ওঠে নীরব ক্রন্দন।..
উনপাঁজুরে
মনীষার একাংশে তপ্ত মরুভূমি
আর বাকিটায় শীতল জল নিয়ে
দাঁড়িয়ে থাকা অমসৃণ পাহাড়—
জীবনের সব মেঘ জমিয়ে রাখে
—তাঁর নিরস নির্নিমেষ চোখে;
যা বরষা হয়ে ঝরেনি কোনোদিন
অরণ্যের সাথে দেখা না হওয়ার আক্ষেপে।
ভীমরতি
সোনা রোদে পোড়া পৌঢ়া
আউশের সুবাস জড়িয়ে
ক্ষেতের শিথানে শোয়া
নদীমুখো মেঠো আল ধরে
- ছোটা শৈশবের
জমিনে সূচিত সব সাধ
আহ্লাদ হয়ে ঝুলছে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১:০৩