দিনলিপি। ০১০৫০৯
বহুজাতিক কোম্পানির মোড়কে মোড়ানো কনসার্টের শ্রমিক দিবসকে পাশ কাটিয়ে প্রণয় উৎসবের তাড়াহুড়োয় এক যান্ত্রিক যাত্রা ‘ফুলার রোড টু সানরাইজ’। এরপর উৎসবকেও পাশ কাটিয়ে হাইরাইজ বাতাসের আমন্ত্রণে সমর্পিত মনের অতৃপ্তি ঘোচে না বা চাহিদা মেটে না। অবশেষে মনে হয়─ জাপটে ধরা শামুক স্মৃতি আর সুখ শীতল ফানুস শৈশব জীবন বা সময়ের ভুলেও আজ এক চিলতে আশ্রয়।
পরিশুষ্ক পরিশোধে রূপান্তরিত
আদুরে সোহাগ লুটে নিতে গিয়ে
কখনো কি কারো মনে প্রশ্ন জাগেনি─
‘প্রেম কি আদৌ পরিশোধ্য? বা ভালবাসার
পরীক্ষক আর পরিমাপক কে বা কি হতে পারে?’
বাধিত প্রেমের বাতুলতার কবলে তাই নিরবিচ্ছিন্ন অসুখ।
তবু সেই শিকারী চোখের মায়ায় সে বারে বার ফিরেছে ব্যবচ্ছেদের দেয়ালে। এক লাফে উঠে দাঁড়িয়েছে তার উপর; কেঁপে উঠেছে পাঁচ ইঞ্চি পুরু পুরো গাঁথুনি। দেয়ালের উপর বসেই দেখতে পেয়েছে মন্ট্রিলের সী-বিচ আর বেইলী রোডের দূরত্ব কতোটা কম। অথচ মাইগ্রেনের ব্যথায় কাতর শৈশবের টানে ওই দেয়াল ধরেই কাঁপতে কাঁপতে হেঁটেছিলো ফেলে আসা চন্দ্রদ্বীপের দিকে। ট্রেনের ভেঁপুরা লঞ্চের সাইরেন সেজে দাঁড়িয়েছিল কীর্তনখোলার পলিতে। অবশেষে অবসন্ন অবশিষ্টতার মঞ্চে কবি জ্বরে জ্বরাগ্রস্ত মন ভুতগ্রস্ত সংলাপ আওরে প্রলাপের মতো লিখেছিল─
কেমনও আঁধার করেছে ব্যাকুল ক্রোধ
বিস্মিত মননে শহুরে রোদের চুম,
ভাবার আগেই ফিরেছে ভোরের বোধ
বিষাদ নয়নে ফেরারি রাতের ঘুম।
এরপর ছন্নছাড়া ক্লান্ত প্রতিশোধ
কোলাহলের ভিড়েও করেছে নিস্তব্ধ,
বিক্ষুব্ধ ক্ষুধাতেই একাকীত্ব নির্বোধ
তবুও অট্টহাসিতে কাটানো নৈঃশব্দ...
পরিণামে নির্ভেজাল পাথুরে সংলাপে
কথামালা সাজানোর অভিপ্রায়ে মত্ত
ব্যস্ততারা ক্রমাগত মগ্ন নিরুত্তাপে
আর ঘুমঘোরে জেনেছিল সব সত্য।
এমনেই একা জন্মেছিল একাকীত্ব
অথচ বৈকালিক বোধে লীন সতীত্ব...
অবশেষে সব সীমায়িত করা ঘুম, ঘুমে গুম প্রহর আর অচেনা জনপদের মতো অপ্রকাশিত আস্থা গভীর-অগভীরতার খাঁজে। তবুও দ্বান্দ্বিক দৃষ্টি-বদ্ধ সেই ঘুম ঘুমিয়ে ছিল চিরনিদ্রা বা অন্তিম ঘুমের অপেক্ষায়।
কাব্যগ্রন্থ: ভাবনাংশ (২০১৫)
শবাচ্ছন্ন রাত
বাড়ে শবাচ্ছন্ন রাত
সে বিষাদে কাঁদে চাঁদ
ভাঙা ইমারতে চাপা
গোঙানিময় বাতাসে
যমেরও প্রতিক্ষায়
কারা বাড়ায় দর্শক
অনুমেয় হয় চোখ
শুধু মৃত্যু গননায়
কী উন্নতি উত্তেজনা
সরাসরি সম্প্রচারে
অন্তিম জোৎস্নায় কাঁপা
মুমূর্ষু সাক্ষাৎকারে
খুন হয় খুন বয়
ফের এই বাঙলায়
আর শুনি ঘোষণায়
ঘটা করে হবে শোক
খুনীরাই আয়োজক
মেটাবে খুনের দায়
কালো ব্যাজ পতাকায়
কাব্যগ্রন্থ: ভাবনাংশ (২০১৫)
বে-ঈমান
এক এবং
অদ্বিতীয়
আপনার
কীর্তি ম্লান
করে যায়
এমন কে
এ ধরার
কোন মর্মে
লুকায়িত
রয়েছে যে
অস্বীকার
করবেইে
এ অস্তিত্ব...
কারই বা
ঈমানে যে
আজ নেই
সে সম্মান;
যা সবাই
আপনাকে
দিয়ে যাচ্ছে
যুগ থেকে
যুগান্তর
ধর্ম থেকে
ধর্মান্তরে
কে'বা করে
অস্বীকার
আপনার
অবদান
অসুর বা
লুসিফর
যে রূপেই
ফরমান
লাভ ইউ,
হে মহান
শয়তান।
কাব্যগ্রন্থ: ভাবনাংশ (২০১৫)
রেসপেক্ট সিভিলিয়ানস
লুটে নেয় যারা, তারা প্রভু বেশে
চেয়ে দেখে সব ভাগাভাগি শেষে
─ বাকি আছে আরো
─ কে কী নিতে পারো
─ দ্রুত বুঝে নাও
─ যতটুকু পাও
─ এসবই ফাও
আহারে এবার বাড়িয়েছে চান্স
জলপাইরঙা শীতল রোমান্স
চকচকে বুট আর বেয়নেট
পোড়া জনপদে
ভিনদেশী থ্রেট
চেনে অনুগামী সামরিক ঘ্রাণ
যায় যাক প্রাণ
গভীর শঙ্কায়
তব মন চায় ─ বলে দিয়ে যায়
রাঙা ক্ষেপণাস্ত্র বা সাঁজোয়া যান
আনে না যে শান্তি
চেনে না কে স্বস্তি
নয়া সেলফ প্রপেলড কামান
─ এবঙ কবিতা
─ বা ইশতেহার
যা পড়েছো বা পড়ছো এ কালে
সবটুকু ছিলো তোমার আমার
গ্লানিরই মতো
স্বচ্ছ সত্য ক্লান্ত
─ কারণ
স্বাধীন সঙ্গীতে মুখর শ্লোগান
মানে নাই একচোখা ফরমান
কখনো ─
মওকায় যদি অন্য কিছু হবে
নীরব জনতা নীরব না রবে
সব চিনে তারা ভাবে চুপচাপ
কার কোন শত্রু
কার বন্ধু বাপ
─ তবুও
মারপ্যাঁচে জমে রাজ-দুশমনি
বন্দুকের নলে বাহ বিরিয়ানি
দেখে এসবই─
কে যে গুম হয়
কবি না অকবি
কার লাগে ভয়
আবার কে কয়
সমর বিদ্বেষ, দেশদ্রোহ নয়
─ যদিও
বুকে সভ্য ত্রাস
ফেরে কি বিশ্বাস
ভরসা পাই না
বা কোনো আশ্বাস
─ হে বাঙাল সেনা
প্লিজ ─ রেসপেক্ট সিভিলিয়ানস
কাব্যগ্রন্থ: ভাবনাংশ (২০১৫)
শহর দর্শন
এক.
উৎসবে বর্ণিল
চেনা এ শহর
অদ্ভুত রঙিন
বিরহে কাতর
দুই.
আমার শহরে
বেহেড সাপেরা
বাসা বাঁধে কবে
কার ইশারায়
সব যায় বোঝা
বোবা থাকা দায়
নাচে চেতনায়
বিষদাঁত ভাঙা
কথার ফোয়ারা
আর সব মেনে
কারা তারা যায়
রাজপুত্র সাজা
সাপের গুহায়
বড় অসহায়
সাদামাটা যারা
মৃত্যু ভয়ে চুপ
আশাহত খুব
হয়ে গেছে ভুলে
কে জেগে আজও
কার ঘুম নাই
প্রাণ খুলে বাঁচো
এই মন্ত্র জানা
কোন সর্বহারা
অস্ত্র আর দীক্ষা
জমা দেয় নাই
কাব্যগ্রন্থ: ভাবনাংশ (২০১৫)
***
যৌন জেহাদের যুগে
যে উত্তেজনায় ভুগে
লোভজ্বরে লালায়িত
মুজাহিদ মন খোঁজে
বেহেশতি আয়োজন
তার তরে বেলাগাম
আদিম অস্ত্র ফতোয়া
আরব্য ধর্ম বাণিজ্য
আধুনিকায়নে আহা
কতই না কার্যকরি─
জিহাদ আল নিকাহ।
কী অন্ধ ঈমানে হায়
তিউনিসিয়ার নারী
ধর্মের ঘোড়ায় চড়ে
সিরিয়াতে দেহদাসী;
না জানি─ ওরাই হুর
পূণ্যের হিসাব মাপে
হালাল যৌনাচার ও
জেহাদি জোশের ঠাঁপে
হয়ত তারাও জানে
এ যমানা নৃ’র নয়;
দ্বীনের বীর্যের তাপে
ইমাম পণ্ডিত কাঁপে
‘ধার্মিক’ মন্ত্রণালয়।
কাব্যগ্রন্থ: গাধার গয়না (২০১৬)
***
নিশ্চয় চেনে গুমকৌশল
জানে অন্ধ চাপাতির বল
তথাপি ভাববেন না প্রভু
সব মুখ বুঝে সয়ে কভু
─বাঙাল মন রবে দুর্বল
তামাম সাম্প্রদায়িক ছল
সংখ্যালঘু চোখের জল
মুছে দিতে ফিরবেই কভু
সাচ্চা মোজাদ্দেদি দেজা ভু
দুনিয়ার যে যে জনপদ
যুগ-যুগান্ত মেপে দেখছে
অনুদারতার সহবত
তারা জানে কেমনে মহৎ
মানুষ ঠেকেই সব শেখে
অসির মুখে দাঁড়ায় কারা
মসির ওপর আস্থা রেখে
যদিও এ যুগের যা দিন
মতপ্রকাশে রাখতে হবে
কবিরও মাজায় মেশিন
কাব্যগ্রন্থ: গাধার গয়না (২০১৬)
***
স্রষ্টার তরফে
বীর্যের হরফে
লেখে সোবাহান
মোল্লারা মহান
আর রাষ্ট্রধর্ম
ধর্ষকের চর্ম
মোটা করে খুব
─প্রতিবাদী চুপ
ভাবছে কি লাভ
করে ঘেউ ঘেউ
লাগে যদি ফেউ
─ও হিন্দুর বউ
আমার কী কেউ
মেরে থাকি ঝিম
আমি মুসলিম
সাচ্চা নাগরিক
সাংবিধানিক
সরকার জানে
কি ঠিক বেঠিক
কাব্যগ্রন্থ: গাধার গয়না (২০১৬)
***
যদি এক রাতে
দেখ অপঘাতে
মরে পড়ে আছি
খুব কাছাকাছি
পরিচিত কায়া
দেখে বড় ঠেকে
দেখিও না মায়া
ছায়ারও আগে
সরে যেও তুমি
জেনে নিও আমি
বলেছি নিশ্চিত
যে আমার খুনী
সে মূলত ছিলো
আত্মহত্যাকারী
গণিতের বীজ
নিয়ে ঘোরা কোনো
সন্দেহপ্রবণ
আগোছালো গল্প
নিছকই অল্প
ছকে যা লিখেছে
দিল্লি-পেন্টাগন
আর নির্যাতন
সইতে না পেরে
বোঝে যে অবুঝ
বাকিঙহাম বা
লাওহে মাফুজ
ক্ষমা করে সব
হত্যাকারীকেও
হতে পারে সে’ও
যে বেওয়ারিশ
তা’ও জেনে নিও
কাব্যগ্রন্থ: গাধার গয়না (২০১৬)
***
─স্মরণে কৈবর্ত বিদ্রোহ
নিশ্চিত অনার্য আমি আদি কৈবর্তের ছেলে
সহস্র জনমে ছিলেম - মিঠে জলের জেলে
বার বার ফিরেছি বঙগে, ফিরিয়েছে মোহ
- মননে অনিবার্য আজও বরেন্দ্রী বিদ্রোহ।
অহিঙস ধর্মের নামে ক্ষিপ্ত সহিঙসতা-
রুখেছিলো যে কৌশলে এই নদীমাতৃকতা
যুগ-যুগান্তর ধরে যাচ্ছিলাম লিখে তারে
সেই অপরাধেই খুন হয়েছি বারে বারে।
গায়ের রঙটা কালো, গাই স্রোতস্বিনী সুরে
মোর রক্তে কত প্রাণ জানে পাল অন্তুপুরে।
মনে পরে সেবার - ছিলেম গঙ্গার উত্তরে
স্বর্ণকলসে বশীভূত লোভাতুর স্বীয়জাত
কী জলদি মিলিয়ে রামপালের হাতে হাত
প্রকাশ্যেই মদদ দিয়েছে আমার হত্যারে।
আরো কতবার মরেছি স্বজাতি সূত্রে ইস!
কখনো পলাশী, কখনো বা ধানমণ্ডি বত্রিশ
তবু ফিরেছি ফের কূটরুধির করতে হিম
আমি দিব্য, আমিই সেই রুদোকপুত্র ভীম।
কাব্যগ্রন্থ: গাধার গয়না (২০১৬)
** পাঁচ বছর পর নিজের সবচেয়ে পুরানো ব্লগ সামহোয়্যারইনে প্রত্যাবর্তন করতে পেরেছি। কারিগরি সহায়তার জন্য অনেক ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা এবং তাঁর টিমকে।
১. ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:৪৮ ১