এক
>>>>>>>>>>>>>>
“এটা সায়েন্স ফিকশন প্রফেসর, সায়েন্স নয়!”
বিরক্তির
চরম সীমায় থেকে কথাটা বললেন ডক্টর জাবের আল রাইয়ান । জাতে আরব । ওয়েইন
এন্টারপ্রাইজ এর এটমিক এন্ড এনার্জি রিসার্চ উইং এর ডিরেক্টর । তাঁর সামনে বসে আছে
( ডিরেক্টরের ভাষায় সময় নষ্ট করছে ) বাংলাদেশী প্রফেসর ঈসা মুহাম্মাদ । লোকটা এমআইটিতে দশ বছর ছিলো, না হলে
এতক্ষনে চেম্বার থেকে তো বটেই, কোম্পানি থেকেই হয়ত বের করে দিতেন ডক্টর জাবের ।
প্রফেসর অবশ্য শান্তই থাকলেন ।
- দয়া
করে আইডিয়াটা শুনুন মিস্টার ডিরেক্টর । ওয়ার্ম হোল বলতে আমি টাইম ট্রাভেল করার সুড়ঙ্গ বুঝাচ্ছি না । আমি বলছি স্পেস,
মানে স্থানের মধ্যে ফুটো ।
- কথা তো
একই হল তাই না? আপনি দশ আলোকবর্ষ দূরে একটা ফুটো করলেন, সেখানে যাই আদান প্রদান
করেন না কেন, আপনার সাপেক্ষে সেই জায়গার সময়...
- প্লিজ
ডক্টর! থিয়োরী অফ রিলেটেভিটি সম্পর্কিত যাবতীয় প্যারাডক্স আমরা ছয় মাস আগেই সুয়ারেজে ঢেলে
দিয়েছি ।
- ওকে,
তাহলে এক কথায় বলেন, আপনি আর আপনার টিম আসলে চাইছেনটা কি?
- আমরা
কিছু পাঠাব না । স্পেসে যে ফুটোটা করা
হবে, তা দিয়ে উলটো কিছু প্রোটন ইলেক্ট্রন, নিদেনপক্ষে কিছু এনার্জি ফ্রিকোয়েন্সি
টেনে আনব । এক্সপেরিমেন্ট সফল
হলে কোম্পানি কিছু হাইপার স্পেস রিসিভার তৈরি করতে পারবে যাতে সৌরজগতের শেষ সীমা
থেকে অন্তত আমাদের স্যাটেলাইটের পাঠানো ডাটা আলো আসার আগেই পাওয়া যায় । আমরা শুধু ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ এর গতির সমস্যা সমাধান
করে সত্যিকারের ‘লাইভ’ যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করতে চাইছি ।
- ভাল,
কিন্তু সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠে শুধু রিসিভার কেন? ট্রান্সমিটার এ কোন ঠাটাটা পড়ল ?
- ট্রান্সমিটার
অপচয় । রিসিভারে আমরা ট্রান্সমিটার বা স্যাটেলাইট নেই এমন জায়গা থেকেও তথ্য পাবো,
যেমন ধরেন আলফা সেঞ্চুরি । হাবল আমাদের যেই মহাবিশ্ব দেখায় সেটা কয়েক হাজার বছরের পুরানো । আমরা
রিসিভারটা বানাতে পারলে মহাবিশ্বের বর্তমান চেহারাটা দেখতে পারব আশা করি ।
- বেশ ।
তো পরীক্ষাটা করুন আর তারপর রিপোর্টটা একটা ফাইলে ঢুকিয়ে আমার ডেস্কে দিয়ে যান ।
আগেই কেচ্ছা শুনাতে এলেন কেন?
- কারণ
স্পেসে ফুটো করা, সত্যি যদি করে ফেলে আমার ছেলেরা আরকি, একটা ভয়ঙ্কর ব্যাপার । কি ঘটবে আমরা জানি
না । প্রায় ডজন খানেক বিপদের ঝুঁকি থাকবে, কোনটাই ফেলনা নয় । তাই এক্সপেরিমেন্টটা পৃথিবীতে না, বরং খাটি
স্পেসে, মানে মহাশূন্যে করতে চাই আমরা । এই ব্যাপারে ডক্টর জাবের, ব্যবস্থা
আপনাকেই নিতে হবে । সময়
দেয়ার জন্যে ধন্যবাদ ।
হতবুদ্ধি
ডিরেক্টরের চোখের সামনে থেকে উঠে দরজা খুলে নির্বিকার ভাবে বেরিয়ে গেলেন প্রফেসর
ঈসা মুহাম্মাদ ।
দুই
>>>>>>>>>>>>>>>>>>
বেস ক্যাম্প ‘লুনা
এম’
।
অবস্থান মঙ্গলের বাইরের দিকের একটা
অরবিটে ।
বেস ক্যাম্পটা আসলে মঙ্গল
গ্রহের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ । অবশ্যই মানব নির্মিত এবং মনুষ্যবাহী । ক্যাম্প
কমান্ডার কাইল জরডান । লুনা এম এ কর্মরত ডক্টর জাবের, প্রফেসর ঈসা আর তাদের দলবলকে
দেখে হঠাত কাইল জরডানের মনে হল সে এতদিনে ইংরেজী ‘লুনাটিক’
শব্দটাকে ঠিকমত উপলব্ধি করতে পারছে । কি একটা ওয়ার্ম হোল
বানানোর জন্য এইরকম একটা মানুষবাহী স্যাটেলাইট । পৃথিবীর
নিরাপত্তা বলে কথা! ভাবটা এমন, মঙ্গল দরকারে জাহান্নামে যাক ।
ঘড়ি দেখল কাইল । আর
দশ মিনিট । তারপরেই সেই পরীক্ষা শুরু যার জন্য এত আয়োজন ।
বিশাল আকারের তিনটা জেনারেটর শূন্যে
ভেসে আছে পরস্পরের সমান্তরালে, একটা বিশাল ত্রিভূজ তৈরি
করে । তিনটাই লুনা এম থেকে সমান দূরত্বে । পুরোটা মিলে
যেন একটা মোচা তৈরি হয়েছে মঙ্গলের অরবিটে ।
ঈসা মুহাম্মাদ তাকালেন জাবের আল রাইয়ানের দিকে । ছোট করে মাথা ঝাঁকিয়ে সায়
দিলেন জাবের । সুইচ চাপ দিলেন ঈসা ।
খালি চোখে কিছু দেখা
যাচ্ছে না । কিন্তু কমান্ডার জরডান ঠিক তার সামনের স্ক্রীনে দেখতে পাচ্ছে তিন
জেনারেটরে উৎপাদিত বৈদ্যুতিক তরঙ্গ সমূহ । বিজ্ঞানীরাও দেখছে যার যার স্ক্রীনে ।
তিন জেনারেটরের মাঝ দিয়ে পেছনে, অনেক দূরে অবশ্যই, শনির সবচে’
বিখ্যাত সন্তান টাইটানকে দেখা যাচ্ছে । হঠাত একটা ত্রিভূজ সাদা স্ক্রীন তৈরি হল
শূন্যে । তিন কোনায় ওয়েইন এন্টারপ্রাইজের তিন জেনারেটর । হঠাত করেই আবার সাদা
স্ক্রীন গায়েব । তারার রাজ্য আবার ফিরে এল । কিন্তু এবার সেখানে টাইটান নেই ।
অ্যাস্ট্রোনট হিসেবে তারা ভালই চেনে কমান্ডার কাইল
জরডান । কিন্তু সামনে এখন যেই তারার রাজ্য - স্টার ফিল্ড দেখা যাচ্ছে সেটার কোন
নাম বা চিত্র সম্ভবত গ্রীকরাও দেয়নি, আর আরব নাবিকরাও
এই স্টারফিল্ড কোনদিন দেখেনি । এ মহাবিশ্বের এমন কোন অংশ যা মানবজাতির সম্পূর্ণ
অচেনা । কেমন যেন একটা ঘোর আর জয়ের আনন্দ আচ্ছন্ন করে
ফেলল কাইলকে । এর মাঝেই তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় ধরতে পারল কিছু একটা গন্ডগোল আছে
চিত্রটায় ।
কিন্তু কী?
তারা গুলো কি একটা অদৃশ্য কেন্দ্রকে
লক্ষ্য করে ঘুরছে?
এমন সময় একটা জেনারেটর হঠাত বিস্ফোরিত
হল । বায়ু শূন্য মহাকাশে কোন শব্দ বা আগুন অনুপস্থিত
। তবু কেপে উঠল কাইল জরডান । কারণ অন্য । এর ভিতরেই গায়েব হয়ে গেছে সেই অচেনা স্টারফিল্ড ।
লাফ দিয়ে উঠল কমান্ডার কাইল । মানে
কৃত্রিম গ্র্যাভিটিতে যতটুকু লাফানো যায় আরকি । ছুটল সে ঈসা মুহাম্মাদের কনসোলের
দিকে । চেচিয়ে উঠল দৌড়াতে দৌড়াতেই - “ডপলার
বিশ্লেষণ!! জলদি! এক্ষুনি!”
তিন
>>>>>>>>>>>>>>>>
মস্কো ।
এসোসিয়েশন অফ সায়েন্টিফিক ইন্সটিটিউটস
এর জরুরী সভা । সভাপতিত্ব করছেন প্রাক্তন কসমোনট এবং রাশিয়ান স্পেস এজেন্সির
চেয়ারম্যান আন্দ্রেই লিওনভ মাইকেলোভিচ । তাঁর ইশারায় ডায়াসে উঠে দাঁড়ালেন ডক্টর
জাবের আল রাইয়ান । বলা শুরু করলেন,
“ভূমিকা
দেব না । কোন বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণেও যাব না । সে সব
কিছুই এখন অপ্রয়োজনীয় । গত মাসে আমাদের কোম্পানির চালানো এক্সপেরিমেন্টটা ব্যর্থ
হয় । কিন্তু দুর্ভাগ্য কিংবা সৌভাগ্যক্রমে আমরা কিছু ডাটা পাই ।”
অডিটরিয়ামের প্রজেক্টরে সেই ত্রিভুজ
স্ক্রীন তথা ঈসা মুহাম্মাদের করা স্পেসের ফুটোর ভিডিও
দেখা গেল । সবাই তাকাল সে দিকে, চেয়ারম্যান মাইকেলোভিচ ছাড়া । তিনি একদৃষ্টে
তাকিয়ে আছেন জাবের আল রাইয়ানের দিকে । জাবের বলছেন,
“
আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনট কমান্ডার কাইল জরডান প্রথম আবিষ্কার করেন যে তারাগুলি একটা
অদৃশ্য কিছুকে কেন্দ্র করে ঘুরছে । ডপলার বিশ্লেষণে ধরা পরে যে তারাগুলি, যারা আসলে অনেকেই ক্লাস্টার, একটা ব্ল্যাক হোলকে কেন্দ্র করে
ঘুরছে । ভাল করে বললে এরা ব্ল্যাক হোলে পড়ে যাচ্ছে । তারাগুলি যদি মারবেল হয় তাহলে
ব্ল্যাক হোলটা একটা ফুটবল । এতবড় ব্ল্যাক হোল আমরা
কেউ কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি । কথা হল যত পদার্থ এতে
ঢুকছে, তত এর শক্তি বাড়ছে । আবার যত এর শক্তি বাড়ছে তত এটা পদার্থ গিলছে । চলছে
চেইন রিয়েকশন । সঙ্গত কারণেই এর ডাকনাম রেখেছি আমরা দ্য গ্রেট হোল । আমাদের ধারণা
সম্ভবত বেশ কয়টি ব্ল্যাক হোল পর্যন্ত হজম করেছে এই কালো দানব । এর আনুমানিক
অবস্থান আমাদের পাশের কোন একটা ক্লাস্টারে । আর এই হারে গিলতে থাকলে আমাদের
গ্যালাক্সি, আবার বলছি, গ্রহ বা সৌরজগৎ নয়, এই গ্যলাক্সি কেও খেয়ে নেবে এই গ্রেট
হোল । আমাদের হাতে সময় আছে সর্বোচ্চ এক শতাব্দী ।”
“এক
মিনিট ডক্টর”,
বললেন চেয়ারম্যান আন্দ্রেই লিওনভ মাইকেলোভিচ, “ আমরা কি অন্য
গ্রহে বা অন্য গ্যালাক্সিতে বসতি স্থাপন করতে পারি না এই সময়ের ভিতর ?”
কিছুক্ষন চুপ করে থেকে এক এক করে সবার
দিকে তাকালেন ডক্টর জাবের । বাকিরাও তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে , উত্তরের অপেক্ষায় ।
একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন জাবের । তারপর বললেন,
“পারি
না । কারণ আমাদের এই মহাবিশ্বটাই ঢুকে যাবে ওই গ্রেট
ব্ল্যাক হোলে । আমরা মহাবিশ্বের প্রকৃত সীমানা জানি না তাই নিশ্চিত নই । কিন্তু
সময়টা যাই হোক, খুব বেশি নয় ।”
আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলেন আন্দ্রেই
লিওনভ মাইকেলোভিচ । মানবজাতি সমসময় ভেবেছে পৃথিবীর কিছু হলে তারা মঙ্গলে চলে যাবে
। সূর্যটা নোভা হয়ে গেলে আবাস খুজে নেবে অন্য তারায় । কিন্তু
কখনো ভাবে নি, এই মহাবিশ্বটাই যদি না থাকে তাহলে তারা কোথায় যাবে ?
:::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
:::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
গল্পটা আমার লেখা । প্রথম ফেসবুকে নোট হিসেবে - April 17, 2014 at 7:49pm