আমি ছোটবেলা থেকেই মেহেদীর গন্ধ সহ্য করতে পারতাম না। আম্মু মেহেদী দিলে গন্ধ না নাওয়া পর্যন্ত তার কাছে ভাত খেতে চাইতাম না। এটা নিয়ে আমার কাজিনগুলো আমাকে জ্বালাতো অনেক। আমাকে ধরে মেহেদী দিয়ে দিতে চাইতো। আমার বিয়েতে অবশ্যই মেহেদী পড়িয়ে দেয়া হবে, এই ভয় দেখানো হত সবসময়। আমি ভয়ঙ্কর রকম কপট রাগ নিয়ে হা হা করে উঠতাম। তবে গন্ধটা আসলেই সহ্য হতো না। তাই একটু বড় হওয়ার পরে যখন টিউব মেহেদী আসলো, তখন খুশিই হয়েছিলাম। গন্ধটা একটু কেমিক্যাল টাইপ ছিলো, ন্যাচারাল না। সহ্য করতে পারতাম। আস্তে আস্তে বড় হয়ে গেলাম। বাজার দখল করে নিলো টিউব মেহেদি। ন্যাচারাল টা তো মনে হয় এখন আর কেউ ব্যবহারই করে না। সব আর্টিফিশিয়াল। মজার ব্যাপার, আমি এখন আগের সেই কাঠি দিয়ে ডিজাইন করে মা বোনদের মেহেদী লাগানো মিস করি। গন্ধটাও হয়ত এখন আর অতটা খারাপ লাগে না। কে জানে!
মেহেদীর মত আস্তে আস্তে সবকিছুই আর্টিফিশিয়াল হয়ে যাচ্ছে। বন্ধুত্ব আর্টিফিশিয়াল, অভিমান আর্টিফিশিয়াল, আচরণ আর্টিফিশিয়াল। ভালোলাগা গুলো তাই ইনফ্যাচুয়েশনের তকমা এঁটেই বন্দি থাকে, ভালোবাসাতে রুপ নেয়না আর। যাকে না দেখলে, যার গলার স্বর না শুনলে একটা সময় ঘুম হত না, দুদিনের ব্যবধানে তাকে অন্য মানুষের সাথে বদলে ফেলা যায়, একবার ঠোটও কাঁপেনা তাতে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কের এক কোণেই আমাদের যাবতীয় সামাজিক দায়িত্ব আটকে থাকে। আর আমরা আটকে থাকি নিজেদের মাঝে, একাকীত্বে। এই আর্টিফিশিয়াল জীবনযাপনে আমরা অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি। খুব একটা অনভ্যস্ত লাগে না। পরিমিত অভিনয় পারঙ্গমতা, সুখকল্পে ঢাকা কাল্পনিক আনন্দ। খুব দ্রুত পালটে যাচ্ছে দৃশ্য। আরো যান্ত্রিকতা, আরো অভিনয়। এভাবেই আমরা একা একা বাঁচতে শিখে যাই।
তবু দিনশেষে এই মানবিক জীবন খুঁজে ফেরা, এই প্রচ্ছন্ন প্রশ্নবোধ- এই ব্যাপারগুলোকে হত্যা করে কীভাবে? আমি মুক্ত হতে চাই। টিউব মেহেদীর গন্ধে আমার বমি আসে!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১:০০