তোকে দেখলেই আমার কেবল রোদজ্বলা এক দীঘির কথা মনে হয়। দীঘির জলে চপল কিশোরীর পা, মাখো মাখো কাদা-শ্যাওলার আদরে জড়ানো পা... তোর ঘ্রাণ নিলেই আমার সেই নবান্নের কথা মনে হয়! হলুদ-লাল-সবুজ, সুক্ষ্ণ কারুকাজের আঁচলে ঢেকে নাইওর আসা বসন্তের গান মনে হয়... তোকে জড়াই কল্পনার ফাল্গুণ, তোকে ভেজাই বর্ষার জ্বলে... তুই আছিস বলেই আকাশ, তুই আছিস বলেই প্রতিটা দিন এইসব সুখকল্পে ঢাকি! তুই আমার বলেই ভেজা ঘাসেরা মিতালী করে অকারণ, সূর্য্য বোনে সকাল। তোর গা থেকে চুরি করে নিয়েছিলাম শিশিরের স্পর্শ... তোর বিকেলগন্ধী ঘ্রাণে মাতাল হয়ে লিখেছিলাম ভীষণ আবেগের আলোকপূরাণ। যদি তোর চোখে লুকোয় রোদ, চুলে বৃষ্টি!
রাতকে দিস ছুটি, কখনো কখনো চোখ বেয়ে গতজন্মের ভুল নামে যদি! আমিই আবেগ, আমিই কল্পনা, আমিই হৃদয়, আমিই সত্যি! আমার চোখে তাকালেই পাবি সেই পুরনো শহর, চেনা পথে অচেনা মুখের কোলাহল। বুকে কান পাতলেই শুনবি এইসব যুদ্ধের উল্টোপাশে ঝুলে থাকা কালচে স্মৃতির গান, মরচে ধরা আকাশের সুরগুলো। তোর একান্ত দুপুরে শিকারে বাজের আনাগোণা যদিওবা বাড়ে, তোর জন্যে আমার কাছে আছে আস্ত একপ্যাকেট সবুজ। ছড়িয়ে দিস যেমন খুশি, গালে মাখিস আবির। রঙের ভেতর রঙের যে গল্পটা থাকে, শুনেছিস তা কখনো? হঠাত ভুলে রেখে আসা দুরবীক্ষণ যন্ত্রের নূন্যতম সাহায্য ছাড়াই আমি তোকে অনন্তকাল দেখাতে পারি সপ্তর্ষী, জ্বেলে রাখতে পারি শুকতারা। আমি আছি, এইখানে, তোর ভেতর। আমি মানেই তোর একান্ত অস্তিত্ব! আমি আছি বৈশাখের খরতাপে, ভীষন তান্ডব হানা কালবোশেখীতে, মাঘের তীব্র শৈতে।
....
ডায়েরীর রংচটা পাতার ভাঁজে লুকোনো দ্বি-বর্ষজীবি গোলাপের দল যদিও এখনো সতেজ, আলোর কথামালা লেখা বোকাবৃদ্ধদেরও তবু আকাশ আঁকায় বিরতি নেই কোন। দুঃখবিলাসী রাত তাই আটকে থাকে ব্রান্ডের সুগন্ধীর মাঝে, রেশম সুতোয় গড়া উত্তরীয়ের পরতে পরতে, ধুলো জমা পায়েলের মাঝে।
আলগোছে একচিলতে ভুল রঙ্গে তুলি ডুবিয়ে ঠিক ছবিটা আঁকা যায় না কখনোই। তাই এইসব প্রতিশ্রুত শব্দের ভারে ক্রমশ হারিয়ে গেলে ক্ষমা করে দিস, বেড়ালতমা!
© দি ফ্লাইং ডাচম্যান
সেপ্টেম্বর ২০১৫
বেড়ালতমা, তোকে...
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৩০