দিন – ৮ (১৪-০৩-২০১৩)
রাত ১২টার কিছুক্ষণ পর বাস বিরতি দিল। সবার ভেতরেই অসুস্থ হওয়ার ভয় কাজ করছিল। তাই সবাই ভাতের বদলে রুটি আর বিস্কুট খেতে সম্মত হয়েছিল। এই খাবার নিয়েও মনে অনেক ভয় ছিল সবার। রাস্তায় যদি কিছু হয়। সেই ভয়ই বাস্তবে রুপ নিল। প্রথমেই অসুস্থ হয়ে পড়ল মুহিত। এরপর সোহেল স্যার। ভয়ানক ব্যাপার ছিল এটাই। স্যার বমি না করা পর্যন্ত আমার নিজের উপর বিশ্বাস ছিল আমি অসুস্থ হব না। কিন্তু স্যার যখন বমি করা শুরু করল তারপর থেকে আমি নিজের উপর বিশ্বাস হারাচ্ছিলাম। এটা কেন হচ্ছিল বুঝতে পারছিলাম না। শুধু বারবার মনে হচ্ছিল স্যার আগেও এমন সফরে এসেছিল। তারপরও বমি করছে। আর আমিও তো এত বেশি জার্নি আর কখনই করি নাই। তাহলে তো আমিও অসুস্থ হয়ে যেতে পারি।
এসব ভাবতে ভাবতেই বাস আবার থামল। এবার অসুস্থ হয়ে পড়েছে নকিব। সে বমি করবে। তাই বাসটি থামল। নকিবের অসুস্থতাও কপালের ভাঁজ বাড়িয়ে দিয়েছিল। কারণ সে এমনিতেই সবসময় অসুস্থ থাকে। এর সাথে এত লম্বা জার্নি করার পর সে কি পরের জার্নিগুলো করতে পারবে কিনা তা নিয়েই আমাদের ভয় ছিল। যদি বেশি অসুস্থ হয়ে যায় তখন কি হবে। এসব ভাবতে ভাবতে কবে যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম নিজেও বুঝতে পারিনি।
সকাল ৬:০০টা। বাস এসে থামল হোটেলের গলির সামনে। বাইরে কনকনে শীত। আকাশে মেঘ ছিল। তাই বৃষ্টি হওয়ারও সম্ভাবনা ছিল। দ্রুত হোটেলে প্রবেশ করলাম। হোটেলটির নাম ছিল “হোটেল ত্রিশুল“। আমাদেরকে রুমটা ছিল তিনজনের। কিন্তু আমরা ছিলাম ৪জন। শীতের তীব্রতা দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ৪জন একসাথেই থাকব। যেমন সিদ্ধান্ত তেমন কাজ।
রাতে অনেকেই অসুস্থ হওয়ার কারণে স্যারেরা সকাল সকাল বের না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সবাই যেন ভালভাবে ঘুমাতে পারে তাই এই ব্যবস্থা। আমাদেরকে বলা হয় দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঘুমাতে। এমন শীতে ঘুম তো অবশ্যই ভাল হবে। তাই দ্রুত ঘুমিয়ে পড়লাম। কিন্তু ইচ্ছেমত ঘুমাতে পারলাম কই! ১০:৩০টায় ঘুম শেষ। ঘুম থেকে উঠেই দেখি বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। মনটা এমন খারাপ হল। ভাবছিলাম দূর্ভাগ্য কি আমাদের পিছু ছাড়বেই না! এভাবে সবকিছু আমাদের বিপক্ষে যাচ্ছিল কেন বুঝতে পারছিলাম না।
১১টায় সকালের নাস্তা সারলাম। তখনো বৃষ্টি হচ্ছিল। ঘুরতে বের হতে যখন পারছিলাম না তখন ভাবলাম কার্ড খেলি। কিন্তু কার্ডও খেলতে ইচ্ছে করছিল না। মূলত টিভির দিকে নজর দিতে গিয়েই খেলা বন্ধ করেছিলাম। পাশের রুম থেকে মোশাররফ আর আব্বাস এসেছিল আমাদের রুমে। গল্প করছি আর মুভি দেখছি। হঠাৎ কয়েকজনের চিৎকার শুনতে পেলাম। আমরা ভেবেছিলাম আমাদের কেউ দুষ্টামি করছে। খেয়াল করলাম এটা আসলে দুষ্টামির চিৎকার না। কি হয়েছে তা দেখার জন্যে মোশাররফকে পাঠালাম। মোশাররফ ডাক দিয়ে বলল তাড়াতাড়ি আয়। কি হয়েছে তা দেখার জন্যে আমরা দৌঁড় দিলাম।
এ তো সত্যিই অসাধারণ। এইরকম দৃশ্য বাস্তবে দেখব তা তো কল্পনাই করিনি। টিভিতে অনেক তুষারপাত (স্নো-ফল) দেখেছি কিন্তু সেদিন দেখেছি বাস্তবে। এই দৃশ্য দেখে নিজের অনুভূতির ভাষাই হারিয়ে ফেলেছিলাম। এমন দৃশ্যকে ধরে রাখতে ক্যামেরা নিয়ে আসার জন্য রুমে দৌঁড় দিয়েছিলাম। খুশিতে লুঙ্গি পড়েই যে ছবি তুলতে বেরিয়ে পড়েছি খেয়ালই করিনি। এমন তুযারপাতে একটা টি-শার্টই ছিল শরীরে। মনে এত বেশি রোমাঞ্চ কাজ করছিল যে শীতের কথা মনেই ছিলনা। কয়েক মিনিট পরই থেমে যায় তুষারপাত। আবার শুরু হয় বৃষ্টি।
বৃষ্টি শুরু হলে সবাই রুমে ফিরে যায়। শীতের মাত্রাটা বুঝতে পারি তখনই। হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত নাড়াতে পারছিলাম না। দ্রুত বাথরুমে গিয়ে গরম পানির ভেতর হাত চুবিয়ে রাখি কিছুক্ষণ। গরমে হাতটা স্বাভাবিক হয়। ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেতে গেলাম রেস্টুরেন্টে। স্যারেরা বললেন বৃষ্টি হলেও বের হবেন। তাই আমরাও রাজি হলাম। আশেপাশের জায়গাগুলো দেখতেই বের হয়েছিলাম আমরা। আমরা ৪জন বের হতে দেরি করে ফেলেছিলাম। আমাদের জন্য কয়েকজন অপেক্ষা করছিল। গাড়ির ধারণ ক্ষমতার চাইতে আমাদের গাড়িতে একজন বেশি ছিল। কষ্ট করে বসলাম। প্রথমেই গেলাম “ভাশিস্ত হট ওয়াটার” ও “ভাশিস্ত মন্দির” নামক জায়াগায়।
ভাশিস্ত হট ওয়াটার নামক স্থানটিতে গরম পানি পাওয়া যায়। যা আসে মাটির নিচ থেকেই। স্থানীয় মানুষদের সাথে কথা বলে জানতে পারি, এই গরম পানি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবেই মাটির নিচে থেকে উঠে আসে। আল্লাহর অসাধারণ সৃষ্টি। উল্লেখিত দুইটা স্থানের অবস্থান পাশাপাশি হওয়ায় ঘুরতে খুব বেশি সময় লাগেনি। অবশ্য অন্যরা তাড়াতাড়ি এই জায়গাটি ত্যাগ করায় আমাদেরও যাওয়ার তাড়া ছিল। এরপর গেলাম “হাদিম্বা মন্দির”-এ। পাহাড়ের অনেক উঁচুতে হওয়ায় একেবারে মেঘের ভিতরেই চলে গেলাম আমরা। মন্দিরে যেতে হয় একটা বনের মাঝ দিয়ে। এই বনে যখন হাঁটছিলাম তখন অন্যরকম এক অনুভুতি কাজ করছিল মনে। আমরা সবাই তখন মেঘের ভেতর। মৃদু আলোর মাঝে ইটের রাস্তা ধরে হেঁটে চললাম। ছবি তুলে খুব একটা মজা পেলাম না। কারণ মেঘের জন্য ছবি তেমন ভাল আসছিল না।
“হাদিম্বা মন্দির” থেকে ক্লাব হাউজ যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। প্রতিজনের জন্য ২০ রুপি দিয়ে টিকেট কিনলাম। আমাদের গাড়ির সবার প্রবেশ ফি দিয়েছিলেন হাসিব স্যার। অসাধারণ লাগছিল ক্লাব হাউস প্রাঙ্গণটা। ক্লাব হাউজের সামনে দিয়ে বয়ে চলল পাহাড়ি হ্রদ, তার পাশেই পাহাড়ি বন। তার সাথে যুক্ত হল তুষারপাত। এই ধরণের সৌন্দর্য্য আসলে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আর এই সৌন্দর্য্য প্রকাশের কোন ভাষাও আমার কাছে মজুদ নেই। স্বচক্ষে না দেখলে আসলে বিশ্বাস করা যায় না। ক্লাব হাউজের ভিতরে প্রবেশ করলাম। ইনডোর গেমসের জন্য আলাদা কিছু রুম আর কয়েকটি দোকান আছে এই ক্লাব হাউজে। ক্লাব হাউজ থেকে বের হয়ে পাহাড়ি হ্রদের দিকে গেলাম। তুযারপাত আর পানির শব্দে মনে হচ্ছিল যেন স্বর্গে চলে গিয়েছি। ঐদিকটা ঘুরে আবার চলে আসলাম ক্লাব হাউজের সামনে। তুষারপাতের কারণে ক্লাব হাউজ প্রাঙ্গণটা সাদা হয়ে গিয়েছিল। ক্লাব হাউজ থেকে চলে গেলাম “বুধিস্ট মোনাস্টারি”তে। ঐখানে তেমন কিছু ছিল না। শুধু দুইটি মন্দির ছিল। তাই জায়গাটা ঘুরতে বেশিক্ষণ সময় লাগেনি।
সন্ধ্যা ৬টায় ফিরে গেলাম হোটেলে। শরীরের অবস্থা তখন একেবারেই খারাপ। শীতে একেবারে জমে যাচ্ছিলাম। আমার আর নাহিদের গরম কাপড় না থাকায় দুইজনেই ৫/৬টা কাপড় গায়ে দিয়ে বের হয়েছিলাম। তুযারপাতে সব কাপড়ই ভিজে গেল। গরম পানিতে অনেকক্ষণ হাত চুবিয়ে রাখার পর শরীর একটু স্বাভাবিক হয়েছিল। এদিকে ক্ষুধায় পেটের অবস্থাও ভাল ছিল না। ভাত খেতে আরো ২ঘন্টা বাকি। তাই ফখরুল আর নকিব গেল বিস্কুট কিনতে। ১ঘন্টা পার হয়ে গেল কিন্তু তাদের কোন খোঁজ নেই। নাহিদ ভাই আর সাইফুল ভাইও আমাদের রুমে ছিল। আমরা ৪জন গল্প করেই সময় পার করছিলাম। কিন্তু পেট কি আর এসব বুঝে! আমরা একজন আরেকজনকে বলতে লাগলাম এই দুজন গেল কোথায়? উল্টাপাল্টা হিন্দী বলতে গিয়ে কোথাও আটকে আছে কিনা? ঘড়ির দিকে থাকালাম। ঘড়িতে সময় ৮টা। ভাত খাওয়ার সময় হয়ে গেল কিন্তু তারা এখনো বিস্কুট নিয়ে আসতে পারল না। ওদেরকে না জানিয়েই খেতে চলে গেলাম। রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখি আমাদের কেউ নেই। বাবুর্চিরাও নেই। কি আর করা! কাউকে না দেখে স্যারের রুমে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি ফখরুল আর নকিব স্যারের রুমেই গল্প করছিল। উল্লেখ্য যে, ফখরুল আর নকিবের এখানে দোষ ছিল না। কল রেট কম ছিল শুধুমাত্র ফখরুলের মোবাইলেই। সবাই তার মোবাইল থেকে বাংলাদেশে কল করছিল বলেই তারা রুমে যেতে পারেনি। সোহেল স্যারের রুমটা আমাদের স্থায়ী ক্যাম্পাসের ছাত্র শিক্ষকের ছোট আড্ডাখানা হয়ে উঠল। অনেকক্ষণ গল্প করলাম সবাই। এরপর রাতের খাবার খেয়ে যার যার রুমে ফিরে গেলাম সবাই।
দিন – ৯ (১৫-০৩-২০১৩)
সকাল ৮টায় আমাদের গাড়িতে উঠতে হবে। আগের রাতে সিদ্ধান্ত ছিল এমনই। তাই সকালে তাড়াতাড়ি উঠলাম। হঠাৎ আমাদের গাইড বাকী ভাই এসে ডাক দিলেন এবং বললেন দ্রুত বাইরে যেতে। বারান্দায় গেলাম দ্রুত। আহ! সফরের সবকিছুই যেন মানালীতে দেখাবে বলে আল্লাহ ঠিক করে রেখেছিলেন। মানালীতে দ্বিতীয় দিনে এসে রোদ দেখলাম। রোদের আলোতে বরফের পাহাড়গুলো নিজেদের সৌন্দর্য্যকে মেলে ধরল। আমি আর ফখরুল এই দৃশ্য ধরে রাখতে তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হলাম। এদিক সেদিক ঘুরে অনেক ছবি তুললাম আর ভিডিও করলাম। নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য! প্রকৃতির বিভিন্ন রুপের দেখা এক জায়গাতেই পেয়ে গেলাম মনে হচ্ছিল। এই সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে করতে ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমাদেরকে ৮টায় বের হতে হবে। মনে পড়ার সাথে সাথেই রুমে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে গেলাম। রবিন স্যার বললেন, “পরিকল্পনা পরিবর্তন করা হল। আজ যেহেতু রোদ আছে তাই আমরা মানালীর অন্য একটি জায়গা ঘুরে এসে দিল্লীর উদ্দেশ্যে রওনা দিব।“
নাস্তা সেরে গাড়িতে উঠে গেলাম। গন্তব্য এবার “সোলাং ভ্যালি”। যাওয়ার পথে দেখতে পেলাম পাহাড় ধসের চিত্র। আগেরদিনের তুষারপাতের কারণেই এই পাহাড় ধস। ঐদিন রোদ না উঠলে আমরা সোলাং ভ্যালিতে যেতে পারতাম না। যাওয়ার পথে একটা দোকানের সামনে আমাদের গাড়ি দাঁড়াল। বরফের পাহাড়ে যাওয়ার জন্য আলাদা পোশাক প্রয়োজন হয়। ঐ দোকান থেকে গরম কাপড় আর জুতা ভাড়া নিলাম। তারপর আবার গাড়িতে উঠলাম। একেবারে সরু পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলছিল। বরফ গলতে থাকায় রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে গিয়েছিল। অনেক ঝুকিপূর্ণ রাস্তা। কিন্তু কেন যেন ভয় লাগছিল না। মনে তখন একটায় চিন্তা কখন আসল গন্তব্যে পৌঁছাবো। প্রথমবারের মত বরফের পাহাড়ে যাচ্ছি। সে এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছিল মনে। গাড়ি থেকে নেমে নিজের অস্তিত্ব আবিষ্কার করছিলাম। শুধু ভাবছিলাম আল্লাহর সৃষ্টি এত সুন্দর কেন! জীবনটাই বা কেন এত ছোট! যদি অনন্তকাল এই পৃথিবীতে কাটাতে পারতাম তাহলে কত মজাই না লাগত। যাই হোক, এই ছোট জীবনে যতটুকু পারা যায় উপভোগ করে নিতে হবে। বরফ নিয়ে মারামারি করলাম কিছুক্ষণ। ছবি তোলার প্রতিযোগীতা তো ছিলই। মনে হচ্ছিল সবাই ছোট হয়ে গিয়েছে। ছোটবেলার কথাও কিছুটা মনে হচ্ছিল তখন। আহা! সেই কি আনন্দ। নেই পড়ালেখার চাপ, নেই কোন বকাঝকা। ছাত্র শিক্ষক সবাই যেন বন্ধু হয়ে গেল। অসাধারণ লাগছিল সবকিছু। সত্য কথা হল এই ধরণের অনুভূতি প্রকাশ করা যায় না।
মজার অনেক স্মৃতি সঙ্গী করে ফিরে এলাম গাড়িতে। গরম কাপড় আর জুতা ফেরত দিতে গাড়ি থামল সেই দোকানের সামনে। যখন হোটেলে ফিরে যাচ্ছিলাম খুব খারাপ লাগছিল। আরো কিছু সময় যদি কাটানো যেত। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেতে গেলাম। খাওয়া শেষ করে ব্যাগসহ বের হলাম আবার। এবার উদ্দেশ্য দিল্লী। ভারতে যেখানে সেখানে বাস দাঁড়ায় না। মানালীতে বাসে উঠতে হলে আগে জিপ গাড়িতে করে বাস স্টেশনে যেতে হয়। বাস ছাড়বে ৪টায়। আর আমরা স্টেশনে পৌছালাম ৩টায়। সবাই অনেকক্ষণ গল্প করলাম। সময় পার করা আর কি! ঠিক ৪টায় বাস যাত্রা শুরু করল। যাত্রাপথে “খুল্লুক” নামক একটি স্থানে নামার কথা থাকলেও সময় স্বল্পতার কারণে তা বাদ দেওয়া হয়। পাহাড়ি রাস্তার বাঁক সম্পর্কে সবার কম বেশি ধারণা তো আছে। কিন্তু মানালীর পাহাড়ের বাঁকগুলো ছিল অনেক বিপদজ্নক। আমাদের দেশে এমন বাঁক নেই বললেই চলে। ধীরে ধীরে সূর্য ডুবে গেল। রাতের অন্ধকার নেমে আসল সর্বত্র।