১৯১৯ সালে খুলনার তেতুলিয়া গ্রামে সিকান্দার আবু জাফরের জন্ম হয়। সিকান্দার আবু জাফরের বাবা সৈয়দ মঈনুদ্দীন হাশেমী ছিলেন একজন কৃষিজীবী ও ব্যবসায়ী।
সিকান্দার আবু জাফর স্থানীয় তালা বি. দে. ইন্সটিটিউশন থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর তিনি কলকাতা বঙ্গবাসী কলেজে পড়াশোনা করেন।
কর্মজীবনের শুরু থেকেই তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। প্রথম দিকে কলকাতার দৈনিক নবযুগ পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন।
দেশ বিভাগের পর ১৯৫০ সালে কলকাতা ত্যাগ করে তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং রেডিও পাকিস্তানে চাকরি শুরু করেন। ১৯৫৩ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের সহযোগী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন, ১৯৫৪ সালে তিনি দৈনিক মিল্লাতের প্রধান সম্পাদক হন। ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত তিনি মাসিক সাহিত্য পত্রিকা সমকালের সম্পাদনা করেন। তিনি ছিলেন এ পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।
তৎকালীন পূর্ব বাংলায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও সংস্কৃতি চর্চার যে ধারা প্রবাহিত হয় তিনি ছিলেন তার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। পাকিস্তান সরকার রেডিও ও টিভিতে রবীন্দ্র সঙ্গীত প্রচার বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলে তিনি তার তীব্র বিরোধিতা করেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় তিনি স্বাধীন বাংলা সরকারের পক্ষ নিয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন।
একজন বিপ্লবকামী কবি হিসেবে অসংখ্য গণসঙ্গীত লিখে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। তার কবিতায় যুগ যন্ত্রণা বলিষ্ঠভাবে প্রতিফলিত হয়। তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম হচ্ছে, কবিতা : প্রসন্ন প্রহর, বৈরীবৃষ্টিতে, তিমিরান্তক, কবিতা ১৩৭২, বৃশ্চিক লগ্ন ইত্যাদি। নাটক : সিরাজউদ্দৌলা, শকুন্ত উপাখ্যান, মহাকবি আলাওল ইত্যাদি। উপন্যাস : মাটি আর অশ্রু, পূরবী, নতুন সকাল ইত্যাদি। গল্পগ্রন্থ : মতি আর অশ্রু। কিশোর উপন্যাস : জয়ের পথে, নবী কাহিনী ইত্যাদি। অনুবাদ : রুবাইয়াৎ ওমর খৈয়াম, সেন্ট লুইয়ের সেতু, বারনাড মালামুডের জাদুর কলস, সিংয়ের নাটক ইত্যাদি এবং গানের মধ্যে মালব কৌশিক উল্লেখযোগ্য।
সিকান্দার আবু জাফর ১৯৬৬ সালে নাটকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান।
১৯৭৫ সালের ৫ আগস্ট তিনি ঢাকায় মারা যান।
আজ ৫ আগস্ট সিকান্দার আবু জাফরের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে গভীর শ্রদ্ধা জানালাম।
শুনুন সিকান্দার আবু জাফরের তুমি বাংলা ছাড়ো (আবৃত্তি : গোলাম মুস্তাফা)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০০৯ সকাল ৮:৫৬