পাহাড়ে কিংবা সমতলে, গ্রামে কিংবা শহরে, রাস্তার ভীড় কিংবা নিরালা বাড়িতে, আরামদায়ক নাতিশীতোষ্ণ কর্পোরেট অফিসঘর কিংবা ঘর্মাক্ত গুমোট কারখানায় মেশিনের আওয়াজের ফাঁকে, দিনে কিংবা রাতে, “বস্তি”তে কিংবা আকাশের কাছাকাছি বসতিতে, সিঁদুরে কিংবা বোরখায়,
কোথায় হয়না নারীর সাথে অশ্লীল বীভৎসতা...???!
হয় যে তা তো সবাই জানি। আজকাল উৎসব পার্বণেও হয়- একুশের বইমেলা, কিংবা পয়লা বৈশাখ!!
একটা টিএসসি বিস্ফোরণ মাত্র, অমন অশ্লীলতা নারীর নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার, “বড়” হয়ে ওঠার পরিচায়ক! তার ডাকনাম শ্লীলতাহানি, ভাল নাম ধর্ষণ! আর পুরো নাম??? পুরো নাম মরে যাওয়া...
আমরা কয়েকজন চাইছি, “মেয়েমানুষ” গুলোকে মুক্তি দেব এরকম মরে যাওয়া থেকে। “মুক্তি” বড় কঠিন শব্দ, কাউকে দেয়া আরো কঠিন! কিন্তু আমরা লড়ব, আমরা তাদের মরে যাবার আগে অন্তত মারতে শেখাবো। তারপর আজ, কাল, পরশু করে করে একদিন হয়ত এভাবে মেয়েমানুষ আর মেয়েমানুষ থাকবেনা, “মানুষ” হয়ে যাবে, এবং বেঁচে যাবে...!
এই হয়তটার জন্যই আমাদের কাজ করা।।।
আধুনিক রাষ্ট্র এর (তাত্ত্বিক!) সংজ্ঞায় রাষ্ট্রকে জনকল্যাণী হবার শর্ত দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তার প্রায় সবটুকুই অদৃশ্য দেখি আমরা। রাষ্ট্র যদি চরিত্রগত ভাবে জনকল্যাণী হত, তাহলে কোন অপরাধীই অপরাধ করে নিরাপদে পার পেয়ে যেত না! ধর্ষক কখনো বেকসুর খালাস পেতনা,
ধর্ষণের শিকারকে ন্যায় বিচারের জন্য হেনস্তা হতে হতনা প্রশাসনিক কিংবা বিচারিক পর্যায়ে।
অপরাধ নির্মূলে যেমন রাষ্ট্রের আন্তরিকতা চাই, তেমনি চাই প্রশাসনিক স্বচ্ছতা এবং বিচারিক সুষ্ঠুতা।।। আমরা দৃষ্টিপাত করতে চাচ্ছি এ দিকটাতে। কিন্তু আমজনতার পক্ষে সরাসরি রাজার অন্দরমহলে ঢুকে সব উল্টে-পাল্টে দেয়া সম্ভব নয়! সুতরাং অপর যে রাস্তা থাকে, সেটা হল মানুষ। হ্যাঁ, মানুষের জন্য শেষ পর্যন্ত মানুষই থাকে! ছিল, থাকবে...!
আমরা তাই সামাজিক মনস্তত্বের দিকটাতেই বেশী কাজ করতে চাই। নারী ও পুরুষ- একই প্রজাতির দুই সদস্যকে চাই সামাজিকভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহমর্মী মানসিকতায় প্রতিষ্ঠা করতে। সমাজ যেন নারীকে খাবার জিনিষ, চাষের জমি বা প্রিয় ল্যাপটপ/আইফোনের মত কোন যন্ত্র মনে না করে। সমাজ যেন নারীকে “মানুষ” ভাববার সক্ষমতা অর্জন করে। নারী পুরুষের সহযাত্রী, সহকর্মী, সহধর্মী, সহযোদ্ধা, সহোদরা; পুরুষ নারীর পূর্ণতার একমাত্র শর্ত...!
নারী একটি প্রাণকে পৃথিবীতে আনবার জন্য স্রষ্টার মাধ্যম...!
টিএসসির বিস্ফোরণটির পর নারীর প্রতি সহিংসতার বিষয়টিতে গোটা দেশ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। কিন্তু আমরা বিষয়টিকে আর সব “ইস্যু”র মত একটি আপাত হুজুগে ব্যাপারের মত নিচ্ছি না। আমরা চাচ্ছি, ধারাবাহিকভাবে সিস্টেমের মধ্যে প্রোথিত সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করে যেতে। এটি নিঃসন্দেহে দীর্ঘ প্রক্রিয়া। কিন্তু লড়াইটা আমরা করে যেতে চাই। উত্তরপুরুষে ছড়িয়ে দিতে চাই মানবিকতার সবচেয়ে সহজ কিন্তু গূঢ় সূত্রটি।
আমাদেরকে পাওয়া যাবে এই ফেসবুক গ্রুপে---
https://www.facebook.com/groups/1588988727984708/
এই গ্রুপ থেকে আমরা একটা ইভেন্ট খুলেছি। ইভেন্ট লিংক--
https://www.facebook.com/events/1605830189673651/1605849446338392/
আগামীকাল ঠিক বিকেল চারটায়। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মীনার প্রাঙ্গন, নিউমার্কেট।
আমরা আশা করবো আমাদের এই লড়াইয়ের সাথে যারা একাত্নতা পোষণ করবেন, তারা আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবেন- একত্রে কাজটা চালিয়ে নেবার অভিপ্রায়ে। আগামী ২৩এপ্রিল বৃহস্পতিবার আমরা তাই শহীদ মীনারে আমরা একটি নাগরিক সংহতির আয়োজন করেছি। আমরা আশা করছি, সমাজের প্রতিটি বুদ্ধিভিত্তিক, সাংস্কৃতিক, পেশাভিত্তিক স্তর থেকে নাগরিকেরা আসবেন এবং নারীর প্রতি চলতে থাকা এবং স্বাভাবিকতায় পরিণত হওয়া (!) সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখবার প্রত্যয় ব্যাক্ত করবেন।।।