সামষ্টিক ভাবে হতাশগ্রস্ত হবার মত এমনসব ঘটনা কোন জনপদে খুব কম ঘটে। প্রযুক্তির সর্বশেষ সংযোজনটি যখন আমাদের হাতের মুঠোয় বা শোবার ঘরে, সেই সময়টায় জ্বলজ্যান্ত মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে কয়লায় পরিণত করে, পেট্রোল বোমা/ককটেল ছুঁড়ে মানুষ হত্যা করে আমাদের রাজনীতিকেরা ক্ষমতায় যাওয়া অথবা ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করতে চাইছেন!! স্কুল ছাত্র, পিয়ন, কেরানী, ট্রাক-বাসের হেল্পার, ফল ব্যাবসায়ী কিংবা কচি কচি শিশু- এরা নিতান্ত নিজের জন্যে খেয়ে বাঁচে মানুষ, একেবারে সাধারণ আমি বা আপনি..! যদিও এদেরকে নিয়ে যে নীতি সেটাই নাকি গণতন্ত্র তবু, গণতন্রের নাম ধুয়ে ক্ষমতাতন্ত্রের জঘন্য যুদ্ধে প্রাণ দিতে হচ্ছে এদেরকেই! বর্তমান বা ফেলে আসা শতাব্দীর বিভৎসতম বর্বরতা- আগুনে পুড়িয়ে এক একটি মানুষকে এক টুকরা কয়লা বানিয়ে ফেলা হচ্ছে! শুধুমাত্র ক্ষমতা আর গদির লড়াইয়ে একটা গোটা রাষ্ট্রের অর্থনীতি থমকে দাঁড়াতে যাচ্ছে। শ্রমজীবি প্রান্তিক মানুষ খাবার যোগাড়ের তাড়নায় পথে নেমেই আগুনে পুড়ে কয়লায় পরিণত হচ্ছে। পেশাজীবি মধ্যবিত্ত অসম্ভব আতঙ্ক, উদ্বেগ সাথে নিয়ে কাজে যাচ্ছে, এবং অবধারিতভাবেই (!) তাদের সবাই নিরাপদে ঘরে ফিরছে না বা ফিরছে লাশ হয়ে.. প্রতিদিন হাসপাতাল গুলোতে পোড়ারোগী এসে জমছে একের পর এক! বাস-ট্রাক-টেম্পু সহ গণপরিবহনগুলো পুড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাজারে নাভীশ্বাস উঠছে সাধারণ এবং নিম্ন আয়ের মানুষদের।
কেবল ক্ষমতা ধরে রাখা কিংবা ক্ষমতায় চড়ে বসবার এই নষ্ট হোলিখেলায় গত বছরের জানুয়ারী এবং তার আগের নভেম্বর/ডিসেম্বর জুড়ে শতে শতে মানুষ পুড়েছে, পুড়ে মরেছে। নুয়ে পড়েছিল অর্থনীতি। তার রেশ কাটতে না কাটতেই আবার শুরু হয়েছে সেই একই রক্তখেলা...! এর থেকে কি নিস্তার নেই খেটে খাওয়া মানুষজনের??? কে দেবে নিস্তার??
এইযে পেট্রোল বোমা আর ককটেলবাজী যারা করছে, তারা কী??? মানুষ??? যারা এসব বানাচ্ছে, তারা কী?? মানুষ??
না তারা মানুষ নয়। তারা সন্ত্রাসী। সন্ত্রাস এর কোন জাত-ধর্ম-পরিচয় হয়না, তার একটাই পরিচয়- সে সন্ত্রাসী। গণতন্ত্র মনে আর যাই হোক, শুধুমাত্র সন্ত্রাসের জোরে, শক্তির জোরে, মানুষকে অপারগ করে, অক্ষম করে, অসহায় করে দিয়ে, মানুষের চোখ বেঁধে খাদের কিনারে দাঁড় করিয়ে ক্ষমতায় থাকা বা ক্ষমতায় যাবার নীতি গণতন্ত্র নয়।
হরতাল আহ্বানকারীগণ বলছেন “গণতন্ত্রে”র জন্য জনগণকে এসব “সহ্য” করতে, আর ক্ষমতাসীনরা বলেন, সহিংসতার ছবি না দেখিয়ে সন্ত্রাসের বিপক্ষে অবস্থান নিতে। ছবি না দেখালেই কি যে মানুষগুলো মরে গেল তারা আবার জীবিত হয়ে চলে আসবে???! নাকি যারা মরেনি এখনো তারা মরবেনা, সেই নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে???!! নাকি কেবল প্রচার বন্ধ হলেই একটা সঠিক, সুষ্ঠু সমাধান তারা খুঁজে পাবেন???
নিঃসন্দেহে যে ইস্যুকে কেন্দ্র করে এই হরতাল-অবরোধ, সেটি রাজনৈতিক। সুতরাং এর সমাধান রাজনৈতিক ভাবেই হওয়া উচিত। আসলে এই “রাজনৈতিক ভাবে” মানে যে কীভাবে সেটা আমি জানিনা; আমার মত কোন রাম-শ্যাম-যদু-মধু ই জানেনা। জানেন রাজনীতির মধ্যে যারা আছেন তারা। সেই “কীভাবে”টা !যেভাবেই” হোক, অন্তত “এভাবে” না...নিরপরাধ সাধারণ মানুষ পুড়িয়ে বা দেশের অর্থনীতিকে বরবাদ করে দিয়ে না..!
যার পরিবারের মানুষটা পুড়ে মরেছে, সেই কেবল জানে তার কী গেছে। আমি বা আমরা কেবল নির্বিকার টিভি চ্যানেল তাকিয়ে দেখতে পারি আর চ্যানেল বদলে চলে যেতে পারি। কিন্তু যার সন্তান, বাবা, মা অথবা পরিবারের কোন সদস্যকে আগুনে পুড়ে এভাবে মরতে হয়েছে, এভাবে নষ্ট ক্ষমতানীতির বলি হতে হয়েছে, তারা কখনো তাদের স্মৃতি বদলাতে পারবেনা!! আজীবন এই ক্ষতি ও ক্ষত তারা বয়ে বেড়াবে! একদিন না একদিন- হয়তোবা- এই বিভৎসতা থামবে, একটা সমাধান আসবে, একটা নির্বাচন হবে, অতি কাঙ্ক্ষিত যে ক্ষমতা, সেটা হয়ত পাওয়া যাবে, কিন্তু যাদের ঘরের মানুষ পুড়ে যাচ্ছে, মরে যাচ্ছে, তারা আর কোনদিন ফিরে আসবেনা, ঐ পরিবার গুলোর খোঁজও আর কেউ নিবেনা....!
একটা ইজতেমা গেল, অবরোধ চলল। একটা স্বরস্বতী পূজা গেল, অবরোধ সাথে হরতাল ও চলল। সহিংসতায়, ধ্বংসযজ্ঞে, উদ্বেগে, আতঙ্কে গোটা রাষ্ট্র একটা ভয়াবহ অস্থিরতায়। সামনে একটা এসএসসি পরীক্ষা আসছে। লাখ লাখ শিক্ষার্থী অনিশ্চয়তায় দিন পার করছে তাদের পরীক্ষা নিয়ে- কেমন হয় পরিস্থিতি..! গোটা দেশে বিভিন্ন পাবলিক ইউনিভার্সিটি গুলোতে অনার্সের ফাইন্যাল পরীক্ষা হচ্ছে, পলিটেকনিক গুলোতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রত্যেক সেমিস্টারের বোর্ড ফাইন্যাল চলছে..! “হচ্চে” বা “চলছে” বলতে আদৌ কিছু চলতে পারছে না, চালিয়ে নেয়া হচ্ছে.. শুক্রবার দেখে দেখে এসব অনার্স এবং ডিপ্লোমা পরীক্ষাগুলো নেয়া হচ্ছে। প্রতিটা শিডউল ফেল করেছে!!
শিক্ষাব্যাবস্থায় চরম হতাশা এরকম অব্যাহত থাকবে, আর দেশে গণতন্ত্রের সুবাতাস বইবে- এটা কি খুব যুক্তির কথা???
রাজনৈতিক সমস্যাকে রাজনৈতিক ভাবে সমাধান করা দরকার; সন্ত্রাস দিয়ে নয়!!! উভয়পক্ষকে আগে মনস্থির করতে হবে তারা আসলেই সন্ত্রাসের বিপক্ষে, মানুষ ও মানবতার পক্ষে।। ক্ষমতাসীনদের একনায়কী মনোভাব বর্জন করতে হবে, বিরোধী পক্ষকে রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়া উচিত, যাতে তারা তাদের রাজনীতি চর্চার ফীল্ডটুকু পায়। বাকীটা সেইসব রাম-শ্যাম-যদু-মধু ই ঠিক করবে, তারা কাকে ক্ষমতায় নিয়ে যাবে বা যাবেনা।
কারণ সাংবিধানিক ভাবে “প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগন” (!!!)
প্রজাতন্ত্রের শ্রাদ্ধ সুসম্পন্ন হোক, আগে দয়া করে মানুষকে বাঁচতে দিন!!! অর্থনীতিকে সচল থাকতে দিন। দেশটাকে এমন হতাশার পচা ডোবা থেকে উদ্ধার করুন!! মানুষকে এমন আতঙ্ক, অরাজকতা আর বীভৎসতা থেকে রেহাই চায়।
আমরা চট্টগ্রামের ব্লগাররা আগামী ০৬ই ফেব্রুয়ারী,২০১৫ শুক্রবার দিন বিকেলবেলায় এই জঘন্য অরাজকতা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে একত্র হচ্ছি। চট্টগ্রামের জামাল খান-স্থ প্রেসক্লাবের সামনে আমরা ব্লগাররা সবাই একটি মানববন্ধন করতে যাচ্ছি। আমার মানব বন্ধনে দাঁড়াব এবং প্রতিবাদ জানাব অমানবিকতার বিরুদ্ধে। আন্দোলনের নাম করে যে যে পক্ষ এসব হত্যা-ধ্বংস চালাচ্ছে, মানুষ নিঃশ্বাস নিয়ে বাঁচবার ন্যূনতম অধিকার টাও যারা শেষ করে দিচ্ছে, আমার তাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে যাচ্ছি।।।
আগুনে পুড়ে মানুষ মেরে কখনো গণতন্ত্র আসবে না। গণতন্ত্র মানুষের জন্যেই, সে মানুষের জীবন নিয়ে এমন জঘন্য বীভৎসতম বর্বরতার প্রতিবাদ করতে আশা করছি চট্টগ্রামের সকল ব্লগার, অনলাইন একটিভিস্ট এবং সচেতন সাধারণ নাগরিকগণ এই মানব বন্ধনে আসবেন।
** মানববন্ধনের ফেসবুক ইভেন্টের লিংকঃঃ-
https://www.facebook.com/events/731333613601656
আমরা মানব বন্ধন করে/প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে এই ভয়ংকর সন্ত্রাস রোধ করতে পারবনা; করা সম্ভব নয়- কারণ আমরা সশস্ত্র নই!! মাঠে সংঘটিত সন্ত্রাস রোধ করবার কাজ সশস্ত্র আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর! আামাদের নয়। কিন্তু প্রশাসন/আইন প্রয়োগকারী ইউনিট সবকিছুর অস্তিত্ব থাকা সত্ত্বেও যখন এসব ভয়ংকর সন্ত্রাস ঘটছে, দিনে কয়েকটা করে মানুষ কয়লা হচ্ছে, এবং একূল-ওকূল দুইকূলের নেতারাই যখন নির্বিকার বসে আছেন, তখন বুঝতেই হয় যে, সামথিং ইজ ভেরী ভেরী রং!!! উই শুড শাউট এ্যাগেইনস্ট দ্যা রং!! উই মাস্ট!! আমি যে এই পোস্টটি লিখছি, আমিও এই “রং” এর আওতার বাইরে নই, আপনি যিনি এটি পড়ছেন, আপনিও নন...! আমাদের বাজার খরচ, কলেজের এক্সাম- সবকিছুতেই এই “সামথিং রং” এর শীকার আমরা হচ্ছিই- শুধু কয়লা হয়ে যেতে বাকী আছে হয়তো..
সো লেট’স শাউট..!
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৩২