তখন তোমার শৈশব।
বাবার হাত ধরে পুতুল ঝুটি করে স্কুলে যাও তখন।
পরিত্যক্ত আবদারে কেদে ভেজাও ইউনিফর্মের হাতা।
অথচ তুমি জানলেই না,
রাস্তাটা পার হলেই ও পাড়ার বিচ্ছুটা ঠিক দাঁড়িয়ে ছিলো লেবেঞ্জুস হাতে।
.
তখন তোমার কৈশোর।
আলতো রঙা ফিতে আর ফুল ফুল গাথা মাথার ব্যান্ড কিনবে বলে সে কি আবদার।
বাজে খরচ হবে ভেবে মায়ের ঝাঝালো বকুনি শেষে তুমি মন খারাপের বাড়ি বানিয়ে বসে থাকলে বারান্দার দোর গোড়ায়।
অথচ চোখ তুললেই দেখতে,
লাজুক মুখো ওই ছেলেটা লেস ফিতের বাক্স নিয়ে ঘুরে মরছে পাড়া জুরে ভীষন।
.
কৈশোর যৌবন ছোয়াছোয়ি তখন তোমার।
অষ্টাদশী মেয়ে তুমি মেঘ হয়ে সুখবৃষ্টি ঝড়ালে অচেনা বখাটের বুকে।
মাস ছয়েকের অসাম্য সাম্যতার পর সেদিন তোমার হৃদয় জুরে কালবোশেখী।
দরজার ওপাশে সস্তা দামে আবেগ বিকোনোর কান্না।
অথচ তুমি বুঝলেই না-
কবাট সরালেই জানালায় পরতো ঝরে কাঁচা পাকা হাতে লেখা অজস্র অচেনা দিনলিপি।
সেখানে তুমি থাকো,আর থাকে নিখাদ জলে ভাসতে থাকা মুক্তো হাসির গল্প।
.
তখন অষ্টাদশী ছক পেড়িয়ে আটাশে এসেছে জীবন।
তারপর আরো হাত এসেছে নীলপদ্ম নিয়ে।
ধরেছো বা ধরনি।
তুমি শুধু বোঝো বড্ড বেশি বোঝো তুমি।
হিসেব নিকেশের দোলাচালে ধীরে কাটালে বছর।
আপোস করলে,কখনো করলেনা।
তেল, নূন,পড়ে যাওয়া চুল।
কিংবা টিউটর দেয়া বাচ্চা কে অফিস ফিরে পড়াতে পড়াতে ঘিরলো বেলা।
অব্যক্ত ডায়েরী কখনো সখনো মনে করায় তোমায়-
কয়েক দশকে শরীর ছোয়া হলো সহস্র বার-
তবু চোখে চোখ রাখা হলো না যেনো কত শতাব্দী ধরে।
তখন চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা তোমার।
চোখে চোখ রাখা বাহুল্যতা সংসারে তখন।
অথচ তুমি দেখলেই না-
কত সহস্র বছর আগে কয়েক শতাব্দীর মাস কাবারি ফর্দ লিখে বুক পকেটে আগলে রেখেছে যুবক।
সেখানে নূন,পান্তা, পোলাও আর বাচ্চা স্কুল অফিসের সাথে 'চোখে চোখ রাখা' ও ছিলো।
।
জীবন অতঃপর সায়াহ্নে পৌছলো তোমার।
ঘুমের ঘোরে হুট করে নিজেকে ভীষন পলকা লাগলো কেমন।
ঠিক সেই ছোট্ট বেলার লেবেঞ্জুসের আবদারের সময়টা,
তুমি হাত বাড়িয়ে বিচ্ছুটার হাতের লেবেঞ্জুস নিতে চাইলে।
দেখলে তোমার হাতে আর জগত ছোয়া যায় না।
পাশের ওই মানুষটা কেমন ঘুমোচ্ছে তখন।
অথচ কল্পনাতেও এলোনা তোমার,
ঠিক কতটা আকাঙখা নিয়ে,
কাধে কাধ ঠেকিয়ে মৃত্যুর অপেক্ষায় ছিলো কালের ক্ষেপনে অশীতিপরায়ন বৃদ্ধ হওয়া মানুষ এক।
.
এখন পৃথিবী জুরে নির্লিপ্ততা ভীষন।
বোঝা না বোঝার বোঝায় বোঝাসর্বস্ব মানুষ এখন।
কেউ ভাবে,অনেক গুলো জন্ম মানুষের।
পরের জন্মে বুঝবে।
কেউ ভাবে, এই জন্মেই বুঝেছিলো বোধহয়।
সব বোঝার পরিনতি হবে এমনটা তো নয়।
ওই বিচ্ছুটা কি ভাবে?
ওই লাজুক ছেলে,দিনলিপিকার,যুবকোত্তর যুবক,
বা অশীতিপরায়ন বৃদ্ধটা কি ভাবে?
তুমি কি জানো?
জানো বা না জানো-
ভালো থেকো।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:২৬