বাস থেকে নেমেই দিপ্ত ঠিক করলো আজ বৃষ্টিতে ভিজবে।ধানমন্ডি থেকেই আকাশে মেঘ।প্রথমে হালকা ছাই রঙা ছোপ,তারপর একটু কালোর আঁচড়,শেষমেশ তা রূপ নিয়েছে ঘন কালোতে।বিজয় সরনী এসে বাস মোড় ঘুরতেই ঝুম বৃষ্টি।যাত্রীদের মাঝে জানালা বন্ধ করার তোড়জোড় দেখা গেল।বাসের যাত্রী, ড্রাইভার,হেলপার সবার মাঝে অন্যরকম ব্যস্ততা।
দিপ্তর হাতে উপন্যাসের বই।জটিল ধরনের না।হালকা মেজাজের সুখপাঠ্য উপন্যাস।সেখানেও বৃষ্টি হচ্ছে।পশ্চিমা বৃষ্টি।বিষন্ন মনে নায়িকা অ্যাপার্টমেনটের জানালায় দাড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে।তার মন খারাপ।এমন সময় সে বই বন্ধ করলো।আলো ভীষন অল্প।এত অল্প আলোয় নায়িকার মন খারাপের কারন জানতে ইচ্ছে করছে না।
.
বাসের পেছন দিক থেকে এক যাত্রীর সাথে হেলপারের কলহ ভেসে এলো।কুড়ি টাকার পর অতিরিক্ত চার টাকা কেন অবৈধ তা যাত্রী চিৎকার করে বর্ননা করছে।হেলপার দিপ্তর কাছে ভাড়া চাইতে এলো।সে দশ টাকার কড়কড়ে একটা নোট ধরিয়ে দিলো।
-মামা আর দুই টেকা দেন।স্টুডেন্ট ভাড়া বারো টেকা।
-দশ টাকাই ভাড়া।
হেলপার স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।দিপ্ত নিস্পৃহ দৃষ্টিতে বাইরে তাকালো।
.
সে যখন বাস থেকে নামলো তখন ধরে আসা বৃষ্টিটা নব উদ্যমে শুরু হয়েছে।তার কাধে কলেজ ব্যাগ,পায়ে কালো সু,পড়নে সাদা কালো কলেজ ইউনিফর্ম।আইডি কার্ডটা শার্টের ভেতর অসহায় ভাবে লটকানো।ঠিক এমন সময় সে ঠিক করলো আজ বৃষ্টিতে ভিজবে।রাস্তা পার হওয়া দরকার।গাড়ীগুলো আজ জায়গা দিতে চাচ্ছেনা।পথচারীদের সাথে তাদের আজ অদৃশ্য বিরোধ।
.
দিপ্ত রাস্তা ধরে এগিয়ে যাচ্ছে।দোকানপাটের সব বাতি এখনই জ্বলে উঠেছে।আজ সন্ধ্যার আগেই সন্ধ্যা নেমেছে।দোকানপাটের আলো গুলো কুৎসিত লাগছে।
ভিজতে ভিজতে তার বাসার কথা মনে পড়লো।ছোট্টবেলার গোমড়ামুখো ডাক্তারের বৃষ্টিতে ভিজতে মানা করার কথা মনে পড়লো।মনে পড়লো বৃষ্টিতে বেশী ভিজলে শ্বাস কষ্ট হবার সম্ভাবনার কথা।দিপ্ত একটা দোকানের ছাউনী তলে আশ্রয় নিলো।
.
দোকানের সামনে চিপসের প্যাকেটের সারি ঝুলছে।ছেলেমানুষী হলেও সত্যি তার চিপস্ খেতে ইচ্ছে করছে।ছোট ছোট রিং চিপস্ গুলো আঙুলে গেথে খাওয়া।ছোট ছোট ইচ্ছেগুলো অপূর্ন রাখতে নেই।একসময় ইচ্ছেগুলো মরে যায়।দিপ্ত দশ টাকা দিয়ে এক প্যাকেট রিং চিপস কিনলো।
খোচা খোচা দাড়ি আছে এমন উঠতি বয়সের যুবক আঙুলে চিপস গেঁথে খেতে খেতে যাচ্ছে।দিপ্তর কাছে এসব অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।আর তার মন আনন্দে পূর্ন।
সে আনন্দপূর্ন মন নিয়ে ফ্ল্যাক্সিলোডের দোকানে ঢুকলো।
-কত টাকা রিচার্জ?
-ঊনিশ টাকা।সে নাম্বার বললো।
-আপনি কি বিশ টাকার নোট দিবেন বলে ঊনিশ টাকা ভরতে চাচ্ছেন?
-নাহ।আমি আপনাকে পঞ্চাশ টাকার কড়কড়ে নোট দেবো।আপনি ত্রিশ ফেরত দেবেন।
-বিশ টাকা রিচার্জে কি সমস্যা হবে?
-একুশ টাকা মেলাতে পারবোনা।
-আপনি বিশ টাকাই দিয়েন।ছাত্র মানুষ।এক টাকা ছাড় দিলাম।
লোকটি একটাকা ছাড় দিতে চাচ্ছে।কি আশ্চর্য!ঘন বর্ষন দেখি সবার মন নির্মল করে দিলো।দিপ্ত হাটতে থাকে।দুটো বাচ্চা বাচ্চা মেয়ে দৌড়ে এক দোকানের ছাউনি থেকে আরেক খানে গেলো।
বৃষ্টি আরও জোড়ে আসছে।দিপ্তর প্রায় কোঁকড়া চুল সজারুর কাটার মত খাড়া হয়ে উঠেছে।ঠিক ছোট্টবেলার মত।ক্লাস ফোরে একবার স্কুল থেকে বাসায় আসতে ঠিক বাড়ির রাস্তার মাথায় বৃষ্টিতে আটকা পড়লো।তখন তার বৃষ্টিতে ভেজা বারন।ঘন বর্ষন একটু ধরে আসতেই সাথের বন্ধুর সাথে ভো-দৌড়।হঠাৎ ধপাস শব্দ।কান্নার আওয়াজ ভেসে এলো।সঙ্গেরজন পড়ে গিয়ে কাদঁছে।আশপাশ থেকে চেনাজানারা দৌড়ে এলো।
অর্থহীন কথা ভাবতে ভাবতে।দিপ্ত বাড়ি চলে এলো।সিড়ি বেয়ে উঠছে।সিড়িতে ঝড়ে পড়ছে সুখ।একটু আগের নরম বর্ষনের পরম অনুভূতি।
.
দিপ্ত এখন কম্পিউটারের সামনে।ক্লান্তিহীন ভাবে অনুভূতি ছড়াতে ব্যস্ত।মাউসটা ঠিকঠাক কাজ করছে নাহ,কিবোর্ড এর সাথে আঙ্গুল বেইমানী করছে মাঝে মাঝেই।তাতে কিছু যায় আসে না।সে লিখতে ব্যস্ত।
রান্না ঘরে ছোটবোন কিছু একটা তৈরী করছে।ভাত,ডিম,তেল,মসলা একসাথে ফ্রাইপ্যানে ঢেলে অদ্ভুত রান্না।বাড়িতে এটা মাঝে মাঝেই হয়।ছোট্টবেলা থেকে হয়ে আসছে।প্রথমদিকে মসলা ব্যবহার হতো না।দিনকালের বিবর্তনে এখন তাও হয়।তীব্র সুঘ্রান ভেসে আসছে।বাইরে অঝোর ধারার বর্ষন।
দিপ্তর হঠাৎ মন হলো জীবনটা অসহ্য সুন্দর।সে টাইপিং শেষ করলো।
.
বি:দ্র:বাস্তবে পাওয়া স্বর্গীয় অনুভূতিগুলো মারাত্নক জিনিস।তাদের হেলায় হারিয়ে ফেলতে নেই।লিখে ফেলতে হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৪