কর্মস্থানে কর্মরত অবস্থায় দেখা হয়েছিল। বোরকা পরা সেই টানা টানা নয়ন দুটো। জিজ্ঞেস করলাম - কি জন্য আসছেন? বলে- সেলিম স্যারের কাছে আসছি। সেলিম স্যার আছে? আমি বললাম হ্যাঁ আছে, ওনার অফিসে দেখা করেন।মেয়েটির সাথে আরও দুজন ছিল।একটা তার বড়বোন এবং বড়বোনের ছেলে।কিছক্ষন পর সেলিম স্যারের অফিসে গিয়ে দেখলাম খুব সুন্দর চেহারা তার তেমন তার মিষ্টি কন্ঠ।সবকিছুতেই সেই আকর্ষনীয় নারী । যাই হোক আমার কাছে বেশ ভালোই লাগছিল। সেলিশ স্যার কি একটা কাজের জন্য বাইরে গেল এই ফাঁকে আমি গেলাম সেলিম স্যারের অফিসে । জিজ্ঞেস করলাম - স্যার কোথায়? মেয়েটি বলে -স্যার একটু বাইরে গেছে, এখন আসবে।আপনার কোন জায়গা থেকে আসছেন? বলে - বটতলী থেকে আসছি। বটতলী আমাদের অফিস থেকে ৫ কিঃমি দুরে।এভাবে মিনিট পাঁচেক কথা বলি। ওই মেয়েটির নাম জিজ্ঞেস করি- নাম আফরোজা। এরপর আমি আমার অফিসে চলে আসলাম । মেয়েটির সাথে কথা বলার সময় বুঝিয়ে দিলাম আমি তাকে ফলো করেছি। তবে সেও বুঝতে পেরেছিল। আধঘন্টা পর তারা স্যারের রুম থেকে বের হল। সামনে দাড়িয়ে ছোট পিচ্চিটার হাতে একটা চিপস্ দিয়ে বললাম ভাল থাকিয়েন।অফিস থেকে নিচে নামার মিনিট পাঁচেক পরে পিচ্চিটা আমার রুমে আসল, বলল - আংকেল আম্মু বলছে আপনার নাম্বার টা দিতে। দেখি ওর হাতে মোবাইল। হঠাৎ আশ্চর্য্ হয়ে বুকের হার্টবির্ট বেড়ে যাচ্ছিল।তখন মুচকি হেসে বলি- দাও মোবাইল এদিকে দাও বলে ওর মোবাইল থেকে আমার মোবাইল কল দিলাম । তারপর পিচ্চিটাকে বললাম ডায়াল নাম্বারে আছে। ১০ মিনিট পর কল আসল বলে ভাইয়া আমি মেহেরিন, আফরোজার বড়বোন। ওহ আচ্ছা আপু কেমন আছেন? হ্যাঁ ভালো । বলে _ আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসিয়েন। বলি - দেখা যাক।আচ্ছা রাখি বলে লাইন কেটে দিল । ঐদিন রাত ৯ টার দিকে আমি কল দিলাম - তাদের ফ্যামিলির ডিটেইলস্ জানলাম। মেহেরিন আপুর স্বামী নাকি বিদেশে থাকে। এরপর আফরোজার কথা জিজ্ঞেস করলাম -তার নাকি এ্যাংগেজ হয়ে গেছে, স্বামী নাকি ডুবাই থাকে। একথা শুনে বললাম আপনারা কি বিদেশীওয়ালার সাথে আত্নীয়তা করেন নাকি ।সে বলে মা বাবা যেদিকে ভাল মনে করে ।আফরোজা কথা শুনে মনটা হঠাৎ বিষন্ন হয়ে গেল। এরপর আফরোজার সাথে কথা বললাম সেও নাকি বিদেশী পছন্দ করেনা।মা বাবা তার কথা রাখেনি ।পাকা বাড়ি দেখে বিয়ের কাজ সেরে ফেলছে। ডুবাই থেকে আসলে অনুষ্ঠান করে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যাবে।এভাবে ১০-১৫ দিন তাদের সাথে কথা বলি। একদিন কথার ছলে আমি তাকে যে আমার ভালো লাগে সেই কথাটি বলে দিলাম।
আফরোজা এ কথাটি শুনে কিছুক্ষন স্তব্দ হয়ে বলে-ভাইয়া ভাল লাগলেও এখন আর কিছু করার নেই, আমার মা-বাবা আমার জীবনটাকে মার্ডার করে দিছে। যা আমার পছন্দ না সেটা আমার ওপর চেপে দিয়েছে। আরও বলে -ভাইয়া সরি আপনি আমার সাথে আর কথা বলিয়েন না ।আমি বললাম -কেন? আপনার সাথে কথা বললে আমার দুঃখ বেড়ে যায়। মানে? তুমি কি বলতে চাও? আফরোজা বলে _ আমি চেয়েছিলাম আরও পড়ালেখা করব, আর আপনার মত একজন সরকারী কর্মজীবিকে বিয়ে করব । নিজেও একটা ছোট চাকরী করব। কিছুইতো আমার জীবনে হলোনা তাই বলে কি তুমি আমার সাথে কথা বলবেনা? আফরোজা তুমি অনেক ভালো মেয়ে । তুমি হাল ছাড়িও না, এখনো তোমার সময় আছে তুমি কলেজে ভর্তি হয়ে যাও । মা বাবা পড়ালেখার খরচ বহন করবেনা।বললাম তোমার স্বামীর কাছ থেকে নেবে। সে বলে আমার স্বামীই ত বলল আমার আর পড়ালেখার দরকার নেই । যা পড়ছি অনেক পড়ছি।ঐ দিন রাতে অনেক চিন্তা করলাম আসলে মেয়েটি অসহায় । পরিবারের চাপে তার মুখ বন্ধ। আর আমি যা ভেবেছিলাম মেয়েটির সাথে প্রেম করা তো দূরের কথা আরও টেনশনের মধ্যে পড়ে গেলাম। চিন্তিত মনে ঘুমিয়ে পড়লাম । সকালে ঘুম থেকে উঠে মোবাইলে টাইম দেখতে গিয়ে দেখি এস এম এসইংরেজিতে লেখা-"I LOVE U । আমার আবেগ আর ধরে রাখতে পারিনি সরি।" এইটুকু.........সত্যিই কি মেয়েটির কাছ থেকে ভালবাসা পেয়ে গেলাম ?
মেয়েটি কি সত্যিই আমাকে ভালবাসে? আমার মনে এরকম প্রশ্নের উদয় হতে থাকে। না না তার সাথে প্রেম করা যাবে না তার সাথে প্রেম করা মানে আগুন নিয়ে খেলা করা। কারণ সেই মেয়েটির স্বামী আছে তার বিয়ে হয়ে গেছে কিন্তু সেই বলেছিল এই বিয়ে তার পছন্দমতে হয়নি। তবুও সে স্বামীকে অস্বীকার করেনি। যতেষ্ঠ চিন্তা করলাম মেয়েটিকে নিয়ে। ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিলাম আর মেয়েটিকে কল দেব না। নাম্বার টি আমার মোবাইল থেকে ব্লক করে দিলাম । নাম্বার টি যে ব্লক করলাম তা আফরোজা বুঝতে পেরেছিল। তারপর অন্য একজনের মোবাইল থেকে আমাকে এস এম এস করল -
"কেন তুমি অসময়ে আমার জীবনে আসলে ? কেন তুমি আমাকে বুঝিয়ে দিলে যে ভালবাসা কি?প্রেম ভালবাসা আমি যখন বুঝিনি আমার মা বাবা বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দিয়েছে। আমার জীবনটাই বৃথা।"
মেয়েটি আমাকে এতই ভালবেসে ফেলেছিলো যে আমার নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছিল। এখনো সেই মেয়েটির কাহিনী স্মৃতি থেকে মুচতে পারি নি। কোনদিন ফোন ও করিনি সেই কেমন আছে।