মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল পৃথিবীর বুকে একটা মানুষের দেশ বানাবার জন্য। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে সেটি বানিয়ে ছাড়তেন। ধাপে ধাপে তিনি সেটি করছিলেন। বঙ্গবন্ধু যখন বুঝেছিলেন যে ভারতের সাথে থাকলেও আসলে মানুষের দেশ হবে না, তখন তিনি পাশ কাটিয়ে ছিলেন, বিভিন্ন কৌশলে এগোতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি, সুযোগে তাকে হত্যা করে দেশটা চলে গিয়েছিল অমানুষের দখলে। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, হত্যাকারী, লুটেরা, ধাপ্পাবাজ, শয়তানেরা সব দখল করে নিয়েছিল।
যতই গত দশ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকুক না কেন দেশটা এখনও প্রধানত তাদেরই দখলে, অমানুষেরই দখলে। তারা সরকারে এবং সরকারের বাইরে বিভিন্ন চিপায় চাপায় লুকায়ে আছে, ফণা তুলে আছে। ধন সম্পদ হারানোর ভয়ে চুপ করে থাকে শুধু, কিন্তু সুযোগ পেলে ছোবল দেবেই, কারণ, এটাই তাদের বৈশিষ্ট্য, এটাই দুবৃত্তের বৈশিষ্ট্য হয়।
সেই যে অন্ধকারের শক্তি সবকিছু দখল করেছিল সম্ভব হয়নি তাদের হাত থেকে সবকিছু আবার মুক্ত করা, গত দশ বছরে আওয়ামী সরকার সে চেষ্টা করতে যে খুব সমর্থ হয়েছে তাও নয়।
তাই আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান কাজ এই উন্নয়ন হতে পারে না, প্রধান কাজ মানুষের দেশ বানানো, মুক্তিযুদ্ধের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা। আরও বেশি জনমুখী, সমাজবাদী, ধর্মনিরপেক্ষ হতে না পারলে শুধু গোজামিল দিয়ে বেশিদিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর সরকার দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না।
আগামী ৩০ তারিখ কোনোমতে একটা নির্বাচন অনুষ্ঠান করে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার যদি বাংলাদেশটাকে মানুষের দেশ বানানোর কাজে সর্বাংশে হাত দিতে না পারে, সর্বস্তর থেকে যদি অমানুষদের ক্ষমতা থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করতে না পারে, যদি আরও শক্ত হতে না পারে, যদি আরও নৈতিক হতে না পারে, তাহলে অবশ্যই নতুন প্রজন্মের মধ্য থেকে একটি শক্তি জেগে উঠবে, যারা সত্যিই প্রস্তুত হয়ে আছে।
নতুন প্রজন্মের মধ্যে অত্যন্ত সচেতন একটি গ্রুপ, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একটা শক্তি শুধু শেখ হাসিনার সরকারকে সুযোগ দিচ্ছে মাত্র। এর মানে এই নয় যে লাগাতার সুযোগ দিয়ে যাবে, আপনারা যদি ভেবে থাকেন গণজাগরণ মঞ্চ ব্যর্থ হয়েছে, আপনারা যদি ভেবে থাকেন ব্লগার হিসেবে আমার ভাইয়ের আত্মত্যাগ ব্যর্থ হয়েছে তাহলে ভুল করবেন।
জাস্ট আরেকটি সুযোগ। আর কিছু না। পদ্মা সেতু বানান, কিন্তু তার চেয়ে বেশি যেটা করবেন- মানুষের দেশ বানান, ধর্ম বর্ণ নারী পুরুষ নির্বিশেষে মানুষের দেশ বানান। লাগামহীন দুর্নীতি বন্ধ করেন, মানুষকে হয়রানি করা বন্ধ করেন, দেশটাকে কাগজে কলমে ধর্মনিরেপেক্ষ বানান। এই ভৌগলিক অবস্থানে, ‘৭১ এর শহীদের বুকের উপর দাঁড়িয়ে কোনো ধর্ম রাষ্ট্র টিকে থাকতে পারবে না, যেকোনো বিবেচনায় কতিপয়ের রাষ্ট্র টিকে থাকতে পারবে না। সেটিই ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রতিশ্রুতি, ম্যাটেরিয়াল উন্নতি দ্বিতীয় তৃতীয় ধাপ।