এই সরকার যে কি চায় সেটা এখন সম্ভবত তারাও জানেনা! শিক্ষার মতো একটা বিষয়ে উন্নত বিশ্ব যখন পারলে ফ্রি করে দেয় সেখানে আমাদের সরকার বাড়তি টাকা আয়ের ধান্দা করে ভ্যাট নামক প্রহসনে লিপ্ত হতে চায়! সেটাতেও আবার বৈষম্য! সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে মাফ প্রাইভেটে পড়লে দিতেই হবে! বলি কেন?
এই ব্যাপারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রথমেই প্রতিবাদ করলেও আর সবার জন্য ব্যাপারটা গত সপ্তাহের প্রথম দিকেও সরকারের আর দশটা অন্যায় আবদারের মতোই বিতর্কের মধ্যে আবদ্ধ ছিল। সরকারের ভাষ্যমতে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্ররা সব ধনীর-দুলাল। কিন্তু সরকারের সব ভুল ধারনা ভেঙ্গে দিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা একত্রিত হয়ে রাজ পথে নেমে এসেছে। কারন একসময় ধনীর দুলালরাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেও বর্তমানে উচ্চ শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনুযায়ী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপ্রতুল আসনের কারনে উচ্চ শিক্ষার প্রয়োজনে অনেক মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্তের সন্তানেরাও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে বাধ্য হচ্ছে এবং পড়ছে। তাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চড়া বেতনের সাথে ভ্যাট নামক অন্যায় ভার বইবার ক্ষমতা অনেকেরই নেই! কিন্তু এবারও সরকার ভুল করেছে। তারা পুলিশ দিয়ে নিরীহ ছাত্রদের উপর গুলি চালিয়েছে! তারা ভেবেছে এইসব ধনীর দুলালকে দাবড়ানি দিলেই সব আম্মুর কোলে লুকিয়ে পড়বে কিংবা এইসব ওরা নিতে পারবেনা। এবং এবারও তাদের সেই পুরানো ভুল ধারনা ভেঙ্গে দিয়ে সমগ্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা গর্জে উঠলো! অবস্থা বেগতিক দেখে সরকার পক্ষ এবার পুরান গানে নতুন সুর ধরল, যার ফলে দুই দিন ধরে সরকার পক্ষ থেকে সবার ফোনে একটা মেসেজ এসেছে, যাতে বিভিন্ন ভাবে বলা হয়েছে-‘টিউশন ফি'র মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ভ্যাট পরিশোধ করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের, ছাত্রদের নয়।‘
বলি, দেশের আমজনতা যাও কিঞ্চিৎ শিক্ষিত হচ্ছে, কিন্তু সরকার গুলা বুঝি কখনই শিক্ষিত হবে না! সরকার যতোই ঘুম পাড়ানি মাসি-পিসি গান শুনাক, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে তাদের দায়িত্বে এই টাকা ছাত্রদের বাবা'র পকেট থেকেই আদায় করবে সেটা বোঝার ক্ষমতা দুগ্ধ-পোষ্য শিশুরও আছে!
তাই প্রত্যেক ছাত্র ভাই-বোনদের প্রতি (বিশেষ করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের প্রতি) আহ্বান, দাবি আদায় হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ভাবে রাজপথে থাকো। প্রয়োজনে ঢাকা সহ দেশের প্রধান শহর গুলো ক'দিনের জন্য অচল করে দাও। আমি জানি অনেকেই বলবে যে, এতে দেশের ক্ষতি হবে, হেন হবে, তেন হবে। কিন্তু আমার কথা হলো-কুলাঙ্গার রাজনীতিবিদ আর ধ্বংসের রাজনীতির জন্য এম্নিতেই আমরা অনেক ক্ষতির মধ্য দিয়ে গিয়েছি, যাচ্ছি আর এভাবে চলতে থাকলে আরও কতো ভয়াবহ ক্ষতি হবে সেটা এখনই অনুমেয়। তাই প্রয়োজনে আরও একটু ক্ষতি হোক কিন্তু সেই ক্ষতির বিনিময়ে একটা ভালো পরিবর্তন আসুক। আর ওরাও(শাসক শ্রেণী) বুঝুক যে মনগড়া তত্ত্ব দিয়ে জনগন'কে ঠকানোর দিন শেষ! উপরে রঙচঙয়ে বড়-সড় এতোসব পোস্টার লাগিয়ে ভেতরের ফাঁপা গহ্বর ঢেকে আর লাভ নেই।
আর একটা ব্যাপার-বর্তমান অর্থমন্ত্রী লোকটা নাকি বেশ ঝানু অর্থনীতি এবং গনিত জানা লোক! উনার তো এই ব্যাপারে আরও ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা! কিন্তু উনার প্রতিদিনকার মন্তব্য শুনে উনাকে শিক্ষিত বলতে আমার আপত্তি হচ্ছে! এছাড়া মনে হচ্ছে ব্যাপারটাকে তিনি এখন ব্যক্তিগত গোঁয়ার্তুমির মধ্যে নিয়ে যাচ্ছেন! রাজনৈতিক কারনে নিজেকে আর কতোটা মস্তিষ্ক বিকৃত প্রমান করলে উনার মন্ত্রিত্ব বজায় রাখতে পারবেন বলে মনে করেন উনি?’
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৫৭