ঘুমের ঘোরে টেবিল ঘড়িটা চেক করে দেখলো ভোর হয়েছে কিনা।
কেবল রাত ১২.৩৫, ইস!! কখন যে ভোর হবে!!!
ভোর ৫টায় গাড়ী ছাড়বে।
শিক্ষা সফরে উত্তরবঙ্গের মহাস্থান গড়ে যাচ্ছে মৃনরা।
সারারাত এপাশ ওপাশ করে ভোর তিনটায় উঠেছে।
ফোলা ফোলা লাল চোখ নিয়ে ভোর সাড়ে চারটায় কার্জন হলের সামনে হাজির মৃন।
গাড়ীটা এখান থেকেই ছাড়বে।
শুধু গাড়ী আছে কিন্তু কেউ আসেনি। নিজেই নিজেকে বকা দিচ্ছে।
ভোরের আঁধারে নভো দেখবে ভেবে ঠিকমত সাজতেও পারলো না।
কি আর করা, নিজের গাড়ীতেই অপেক্ষা করতে লাগলো।
দুরন্ত স্বভাবের কারণে ক্লাশমেটরা নভোকে এই ট্রিপের টীম লিডার বানিয়ে সমস্ত দায়িত্ব ওর ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে।
নভো এসবে অভ্যস্ত। প্রতিটা কাজ সে ছক বেঁধে করতে শিখেছে সেই তখন থেকে যখন বিভিন্ন জেলায় তাকে আন্ডার-১৯ ক্রিকেট টিম নিয়ে খেলতে হয়েছে।
গাড়ীর উইন্ডোতে টক টক শব্দে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল মৃনের। চোখদুটো খচখচ করছে, দেখে নভো ঈশারা করছে গাড়ী থেকে বের হতে।
শিক্ষা সফরের গাড়ীতে উঠে মৃনের চোখ ছানাবড়া, ওমা সবাই এসে গেছে।
ভেবেছিল নভোর পাশে বসবে কিন্তু নভোরি সিট নেই সে বসেছে ইঞ্জিন কভারের উপর। যেহেতু সে টীম লিডার তাই তাকেই সেক্রিফাই করতে হলো।
গাড়ী ছাড়ার আগ পর্যন্ত সবাই হৈচৈ করলেও গাড়ী ছাড়ার পর সবাই চুপ, বেশীর ভাগই ঘুমাচ্ছে।
হোটেল এ্যারিট্রোক্রাটে আধা ঘন্টার যাত্রা বিরতি। গাড়ী যখন চান্দাইকোনা ক্রস করছে তখন বমির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল অনেকের। মৃন তার সামনের সিট ভাসিয়ে দিয়েছে। পাবলিক বাসে চলাচলে অভ্যস্ত না সে। সবাই তো হো হো করে হাসতে লাগলো। লজ্জ্বা পেয়ে মৃন মাথা নিচু করে আছে, তার বমি এখনো শেষ হয়নি। চোখের কোনায় দেখতে পাচ্ছে একটি পলিথিন। মুখ তুলতেই দেখে নভো দাঁড়িয়ে আছে পলিথিন, পানির বোতল আর মেডিসিন নিয়ে।
নভো জানতো এমন কিছু ঘটতে পারে তাই টীম লিডারের দায়িত্ববোধ থেকে কিছু এ্যাভোমিন ও পলিথিন ব্যাগ নিয়ে রেখেছিল।
এতক্ষণ রূপসচেতন সিন্থিয়া বসেছিল মৃনের পাশে কিন্তু আর বসতে চাচ্ছে না। শুধু সিন্থিয়া কেন ওর পাশে কেউই বসতে চাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে নভো ইঞ্জিন কভার ছেড়ে মৃনের পাশে বসলো।
মৃন ঔষধ খেয়ে চিন্তা করছে, ইস.... বমিটা আরো আগে এলো না কেন!!!
নভোর তড়িৎ রিফ্লেকশন মৃনকে আবারো মুগ্ধ করলো।
সে ভাবছে এমন ছেলেই টীম লিডার হবার যোগ্য এবং এমন ছেলের হাতেই নিজেকে সঁপে দেয়া স্বার্থক। আর ভাবতে পারছে না, শরীরটা খুব দুর্বল লাগছে তাই চোখ বন্ধ করে ফেললে।
এসে গেছি, এসে গেছি চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে গেল মৃনের।
নভো ইচ্ছা করেই ওকে জাগায়নি। ঘুমন্ত মৃনকে সে অপলক চোখে চেয়ে দেখেছে, চোখে চোখ পড়ার ভয় নেই। মৃনের চুল যখন বাতাসে উড়ে নভোর মুখে পড়ছিল তখন চুল কিছুটা ছুঁয়েও দেখেছে।
গাড়ী থেকে নামার পর মহাস্থানগড়ের বাউন্ডারী ওয়ালের উপর দিয়ে হাঁটছে সবাই। মৃন চাচ্ছে নভোর পাশাপাশি থাকতে কিন্তু নভোর গতির সাথে পাল্লা দিয়ে কুল পাচ্ছে না।
অনেক্ষণ হাঁটার পর এলো যাদুঘরে। ঘুরেফিরে সবাই দেখছে, তাও মাঝে মধ্যে নভো কিছু বর্ণনা করে শোনাচ্ছে বন্ধুদের। টীমের দায়িত্ব পাওয়ার পর মহাস্থান সম্পর্কে গুগল থেকে অনেক কিছু জেনে এসেছে এখন সেগুলো মিলিয়ে দেখছে আর বলছে।
যাদুঘর থেকে বেরিয়ে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান দেখছে আর বর্ণনা করে শোনাচ্ছে নভো।
সম্প্রতি খনন করে পাওয়া কিছু স্থাপনা
হাঁটাহাটির পর সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। বিশ্রামের জন্য তারা এলো জিয়ৎ কুন্ড বা জিয়ৎ কূপের কাছে।
মৃত মানুষকে কূপের মধ্যে ফেললে আবার জীবিত হয় এই গল্পটা নভো সবাইকে শোনাচ্ছিল। মৃন খেয়াল করে দেখছে নভোর বর্ণনা খুব সাবলিল এবং গোছানো সে ভেবে পায় না একটা মানুষের এতটা ভালদিক কীভাবে থাকতে পারে।
সবাই যখন বিশ্রামের সময় মহাস্থানগড়ের কটকটি খেতে ব্যস্ত মৃন তখন নভোকে ঈশারা করে কূপের কাছে আসতে। নভো এলে দুজন মিলে কূপের ভেতরটা দেখে। অনেক গভীর আর পানিগুলো কালো দেখাচ্ছে। মৃন ভয় পেয়ে যায়।
নভো বলে একটা মজার জিনিষ শুনবে ?
মৃন বলে কী?
নভো তখন কূপের ভিতর মুখ দিয়ে চিৎকার করে বলে মৃন
প্রতিধ্বনি হয়, মৃন মৃন ন নননন
মৃন মজা পেয়ে ডাকে নভো
নভো নভো ভো ভো ভো
অনেক বেলা হয়ে গেছে। খাওয়া দাওয়া সেরে ফেরার পথে গোকুলের বেহুলা বাসর ঘর দেখার জন্য দল বেধে সবাই গাড়ী থেকে নামলো। যে যেদিকে পারছে ঘুরে ঘুরে দেখছে ছবি তুলছে।
মৃন নভোকে বললো আমার কয়েকটা ছবি তুলে দাও। ক্যামেরা নেয়ার সময় নভোর আঙ্গুলের স্পর্শে মৃনের শরীর শিহরিত হয়ে উঠে। মহুর্তের জন্য চোখ বন্ধ করে অনুভূতিটাকে মনের গভীরে পোঁছে দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে।
নভোনীল পর্ব -১ ব্লগার রিম সাবরিনা জাহান সরকার
নভোনীল পর্ব-২ পদ্ম পুকুর
নভোনীল পর্ব-৩ ব্লগার মেঘশুভ্রনীল
নভোনীল পর্ব -৪ ব্লগার খায়রুল আহসান
নভোনীল পর্ব-৫ ব্লগার আখেনাটেন
নভোনীল পর্ব-৬ ব্লগার পুলকঢালী
নভোনীল পর্ব – ৭ ব্লগার নিযাজ সুমন
নভোনীল পর্ব- ৮ ব্লগার কবিতা পড়ার প্রহর
নভোনীল পর্ব-৯ ব্লগার মনিরা সুলতানা
নভোনীল পর্ব-১০ ব্লগার বিলুনী
নভোনীল পর্ব-১২ ব্লগার মোঃ মাইদুল সরকার
নভোনীল পর্ব-১৩ ব্লগার কল্পদ্রুম
ছবিঃ নেট থেকে।
যাদের এক একটি মন্তব্য আমাকে কাছে টেনেছে, যাদের ছায়ায় শিখছি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাঃ
“বিজন রয়, নেওয়াজ আলি, রাজীব নুর, ইসিয়াক, সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, পুলক ঢালী, খায়রুল আহসান, মিরোরডডল, সেলিম আনোয়ার, আহমেদ জী এস, মা.হাসান, মনিরা সুলতানা, শায়মা, মুহা: ইয়াসিন, রাকু হাসান, মোঃ মাইদুল সরকার, কাজী ফাতেমা ছবি, সোহানাজোহা, সাড়ে চুয়াত্তর, নূর মোহাম্মদ নূরু, ইফতেখার ভূইয়া, পার্থিব হোসেন, বিএম বরকতউল্লাহ, গিয়াস উদ্দিন লিটন, আজাদ প্রোডাক্টস, ঠাকুরমাহমুদ, কল্পদ্রুম, সাহাদাত উদরাজী, আকিব ইজাজ, জুন, মোহাম্মদ গোফরান, মুক্তা নীল, এস এম মামুন অর রশীদ, ফুয়াদের বাপ, পগলা জগাই, বিদ্রোহী ভৃগু, লরুজন, স্বপ্নের শঙ্খচিল, মৌরি হক দোলা”
(পাসওয়ার্ড পাওয়ার পর এ পর্যন্ত ৪টি লেখা পোস্ট করেছি, প্রথম পোস্টে ১ম মন্তব্যকারী থেকে নাম শুরু করা হয়েছে। সবাই আমার কাছে সম্মানীয়, আশাকরি নামের ক্রম নিয়ে ভুল বুঝবেন না।)
ভুল স্বীকারঃ প্রকৃতপক্ষে জিয়ৎ কূপ মাটি দিয়ে ভরাট। গল্পের প্রয়োজনে গভীর উল্লেখ করা হয়েছে।
মহাস্থানগড় সম্পর্কে কৌতুহল থাকলে
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৩৪