সকালে ঘুমটা যখন মুধুর হয় ঠিক তখনই কানে ভেসে এলো “এসো হে বৈশাখ”।
আরে বাবা ঘুমাতে দে, বৈশাখ আসতে এখনো এক দিন বাকি! এই সাত সকালে কেন ডেকে আনছো বৈশাখকে?
দোতলা বাসার এই জানালা দিয়ে হুড়মুড় করে ভেসে আসছে রাস্তার মোড়ের ফ্লেক্সি লোডের দোকানে বাজা গান। এর পর শুরু হলো “কিনে দে রেশমী চুড়ি”। লাবনীর মনে কি যেন খেলে গেল। তড়াক করে বিছানা থেকে উঠে পড়লো। মুখে মিটিমিটি হাসি নিয়ে মোবাইল থেকে এসএমএস করলো কম্পু’কে।
কম্পু হলো লাবনীর ক্লাসমেট হাসান মাহমুদ। এই কম্পু নামটা দেয়ার পেছনে একটা উদ্দেশ্য আছে লাবনীর। এমনিতেই হাসান মাহমুদ ছাত্র হিসাবে ভাল কিন্তু তাকে আরো ভাল বা উৎসাহ দিতে কম্পিউটার থেকে “কম্পু”। যার মাথায় কম্পিউটারের মত জ্ঞান থাকবে, যে কোন প্রশ্ন করলে সহজেই উত্তর পাওয়া যাবে। আর তাই মাঝে মাঝেই এমন কিছু বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করে যেগুলোর উত্তর খুঁজতে কম্পুকে অনেক পড়াশোনা করতে হয়। তবে শুধু উত্তর দিলেই চলবে না, এমনভাবে বোঝাতে হবে যেন জলবৎ তরলং।
এসএমএস অনুযায়ী কম্পু সকাল ১০টায় নিউ মার্কেটে অপেক্ষা করছে। ঠিক ১০.০৫ এ লাবনী গাড়ী থেকে নামলো।
প্রথমেই গেল চুড়ির দোকানে। অনেকক্ষণ বাছাই করার পর ২ ডজন রেশমী চুড়ি কিনলো। এরপর গেল জেন্টস সপ’এ। চুড়ির কালারের সাথে ম্যাচিং করে সিল্কের পাঞ্জাবী গিফট করলো কম্পুকে। কম্পুও মাথা হেট করে ধন্যবাদ জানিয়ে জিজ্ঞেস করলো, তুমি কি জান এই পাঞ্জাবীর সুতা কিভাবে তৈরী হয়েছে?
না জানিনা, কিভাবে তৈরী হয়েছে কম্পু সাহেব?
এটা তৈরী হয়েছে পোকার লালা থেকে। বলতে গেলে মাকড়সা যেমন জাল বোনে তেমনি রেশম পোকাও জাল বোনে আর এ থেকেই সুতা তৈরী হয়। তবে প্রক্রিয়াটা বেশ অদ্ভুত।
অদ্ভুত কথাটা লবনীর মনে ধরেছে। যদিও সে জানে রেশম পোকা থেকে রেশমী সুতা হয় কিন্তু কিভাবে সেটা জানার ইচ্ছা জাগেনি কোনদিন। তবে আজ ভীষণ জানতে ইচ্ছা করছে। সে বললো, আমি জানতে চাই।
কম্পু বললো ঠিক আছে, তবে কাল বৈশাখী ভ্রমনে বলবো।
গত দিনে ঠিক করা সিডিউল অনুযায়ী নদীর ঘাটে উপস্থিত দুজন। আর গতকালই কম্পু সারাদিনের জন্য একটা নৌকা ঠিক করে রেখেছিল। এখন দুজন উঠে বসলেই যাত্রা শুরু।
লাবনীর হাতে বড় সাইজের এক ব্যাগ।
মাঝিসহ ওদের দুজনের খাওয়া আছে। ফ্লাস্ক ভরা চা, ছাতা, একটা ক্যামেরা আর কি লাগে?
ছবি তুলতে তুলতে শহরের কোলাহল ছেড়ে অনেকদুর এসেছে নৌকাটা। চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। লাবনী বললো, এবার একটু দম নেয়া যাক আর এই ফাঁকে রেশম সুতার অদ্ভুত প্রক্রিয়াটা শুনি।
কম্পু বলা শুরু করলো, এই পোকাটির নাম রেশম পোকা বা রেশম গুটি পোকা। এদের জীবন চক্র ৪টি স্তরে বিভক্ত। পূর্ণাঙ্গ পোকাকে বলে মথ। এরা ডিম দেয় তা থেকে হয় শূককীট, তারপর মূককীট। এরা দেখতে সাদা রেলগাড়ীর মত লম্বা হলেও ৩০দিন বয়সে হলদেটে হয়। যদি দেখতে চাও তবে এই দেখ
লাবনীঃ এরা কি খায়?
কম্পুঃ খুব মজার একটা প্রশ্ন। শূককীট অবস্থায় ৪ দিন তুঁত গাছের পাতা খায় আর ১ দিন ঘুমায়। এই ১দিন তারা খোলস বদলায়। এভাবে এরা ২০ দিনে ৪ বার খোলস বদলায়।
লাবনীঃ ইন্টারেস্টিং তো...... তারপর
কম্পুঃ ২৮-৩০ দিন বয়সে মূককীটে পূর্ণতা পায়। তখন কিছু খায় না। এসময় মুখের লালা দিয়ে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে নিজের চারপাশে গুটি তৈরী করে। এই হলো সেই গুটি।
এই গুটি তৈরীর পর ২টি আলাদা ধাপ আছে। (১) সুতা (২) বংশ বিস্তার, কোনটা শুনবে বলো।
লাবনী চোখ বড় বড় করে বললো, দুটোই শুনবো...... সুতা কিভাবে হয় আগে সেটা শুনি তারপর শুনবো বংশ বিস্তার।
-সুতার জন্য গুটিগুলোকে রোদে শুকাতে দেয় যেন ভিতরের পোকা মারা যায়। এর পর আধাঘন্টা সেদ্ধ করতে হয়। সেদ্ধ করার পর প্রতি গুটি থেকে একটা করে সুতার মাথা বের হয়। একটা গুটি থেকে ৪০০-৫০০ মিটার সুতা পাওয়া যায় তবে সেগুলো খুব চিকন। এজন্য ৮/১০টা গুটির মাথা একসাথে মেশিনে দিয়ে পেঁচতে হয়। প্রায় ২৫০০ গুটি থেকে ১ পাউন্ড সুতা পাওয়া যায়। আর এই সুতা থেকেই তোমার দেয়া এ পাঞ্চাবী তৈরী।
লাবনীঃ আচ্ছা হয়েছে, হয়েছে! এবার বংশ বিস্তারটা শুনি। ইন্টারেস্টিং কিছু?
কম্পুঃ তা বলতে পার। গুটি অবস্থায় ১০দিন রাখলে প্রজাপতির মত মথ হয়ে গুটি কেটে বেরিয়ে আসে তখন আর এই গুটি থেকে সুতা পাওয়া যায় না। মথ দেখতে এই রকম
প্রতি গুটি থেকে একটা নর এবং একটা নারী বের হয়। এরা একটানা ৬ ঘন্টা মিলনে রপ্ত থাকে এবং এর পরেই নারীটা ৪০০-৫০০ ডিম দিয়ে মারা যায়। প্রায় ১০দিন পর ডিম থেকে শূককীটের জন্ম।
কম্পু খেয়াল করলো নারী মথ মারা যাবার কথা শুনে লাবনীর মুখটা মলিন হয়ে গেল। সে তাকিয়ে আছে পশ্চিমাকাশে যেখানে সূর্যটা ডুবুডুবু করছে।
তথ্য নেট থেকে সংগৃহীত। ছবি
বিশেষভাবে ধন্যবাদ “জাদিদ” ভাইকে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:৫২