somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিজে না হয় ফেল করেছি, কষ্ট তেমন হয়না X(( বন্ধুটা যে ফার্স্ট হয়েছে সেই জ্বালা যে সয় না

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হাকিম সাহেব অফিসে পৌছে একটি চিঠি পেলেন। তাতে ছিলো তার বেতন বৃদ্ধির সুসংবাদ। তিনি পরম আনন্দে অফিস করতে থাকলেন। একে ওকে ফোন করে জানাতে লাগলেন। দুপুরে খাবার টেবিলে দেখা হলো কলিগদের সাথে। সবচেয়ে ঘনিষ্ট বন্ধু হাফিজকে জানালেন তার আনন্দের সংবাদটি। হাফিজ সাহেব খুশি হয়ে জানালেন যে তারও বেতন বৃদ্ধি হয়েছে। সেই সাথে তার পদোন্নতিও হয়েছে। ক্ষণিকের মধ্যে হাকিম সাহেবের মনের গভীরে চিন চিন কষ্ট দেখা দিলো। কথাবার্তার শুরুতে যতটা হাসিখুশি ছিলেন শেষের দিকে এসে তা চুপসে গেল। হাকিম সাহেবের সফলতার উচ্ছল আনন্দ হারিয়ে গেলো তার বন্ধুর অধিক সফলতার খবরে। এরই নাম পরশ্রীকাতরতা
এটি বিভিন্ন পর্যায়ে হয়। যেমন- ছেলে জিপিএ ফাইভ পেয়েছে শুনে বাসায় মিষ্টি খাওয়ালেন। পরে ফোনে জানতে পারলেন যে বন্ধুর ছেলে গোল্ডেন ফাইভ পেয়েছে। খুশির স্রোত মূহুর্তে থমকে যায়। আবার যেমন, নিজের মেয়ে হয়েছে। বন্ধুরও মেয়ে হয়েছে। যখন তুলনা হয় যে বন্ধুর মেয়েটি একটু বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে তখনই অন্তর্দহন শুরু। আমাদের স্বাভাবিক আনন্দ এবং সুখের বড় শত্রু এই পরশ্রীকাতরতা।
বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে আমাদের সম্পর্কে বলা আছে- আমাদের বাঙালির মধ্যে দুইটা দিক আছে। একটা হলো আমরা মুসলমান, আর একটা হলো আমরা বাঙাালি। পরশ্রীকাতরতা এবং বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের রক্তের মধ্যে রয়েছে। বোধ হয় দুনিয়ার আর কোন ভাষায়ই এই কথাটা পাওয়া যাবে না ‘পরশ্রীকাতরতা’। পরের শ্রী দেখে যে কাতর হয়, তাকে ‘পরশ্রীকাতর’ বলে। ঈর্ষা, দ্বেষ সকল ভাষায়ই পাবেন, সকল জাতির মধ্যেই কিছু কিছু আছে কিন্তু বাঙালিদের মধ্যে আছে পরশ্রীকাতরতা। ভাই, ভাইয়ের উন্নতি দেখলে খুশি হয় না। এজন্যই বাঙালির সকল রকম গুণ থাকা সত্ত্বেও সারা জীবন অন্যের অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। সুজলা সুফলা বাংলাদেশ সম্পর্দে ভর্তি। এমন উর্বর জমি দুনিয়ায় খুব অল্প দেশেই আছে। তবুও এরা গরিব। কারণ যুগ যুগ ধরে এরা শোষিত হয়েছে নিজেদের দোষে। নিজকে এরা চেনে না, আর যতদিন চিনবে না এবং বুঝবে না ততদিন এদের মুক্তি আসবে না।
বাঙালির বড় দোষ পরশ্রীকাতরতা। এটা নিয়ে কৌতুক আছে যে, এক লোক নরকে ভ্রমণ করতে গেছে। সে দেখলো নরকের অধিবাসীরা বিভিন্ন গর্তে পড়ে আগুনে দগ্ধ হচ্ছে। তাদের গর্তের মুখে বড় বড় ঢাকনা দেয়া যাতে কেউ বের হতে না পারে। কিন্তু বাঙালীদের গর্তে কোন ঢাকনা নেই। সে আশ্চর্য হয়ে নরকের প্রহরীকে জিজ্ঞেস করলো যে কী ব্যপার? বাঙালীরা তো বের হয়ে পালিয়ে যাবে! নরকের প্রহরী বললেন- দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এদের কেউ উপরে উঠতে চাইলে অন্যরা তাকে নিশ্চিত টেনে নামাবে।
পরশ্রীকাতরতা আমাদের কী দেয়? এটি প্রথমত, আমাদের শান্তি নষ্ট করে। নিজের কাজে মনোযোগ নষ্ট করে। অস্থিরতার জন্ম দেয়। এর ধারাবাহিকতায় অনেক ক্ষেত্রে কেউ কেউ অসুস্থও হয়ে পড়েন। কিন্তু যার ব্যপারে আমি কাতর, সে ঠিকই শান্তিতে আছে। তার প্রমোশনে আমার ঘুম নেই, কিন্তু সে হয়তো নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে। আমার এই কষ্ট তাকে বিন্দুমাত্র স্পর্শ করছে না।
দ্বিতীয়ত, সম্পর্কে দূরত্ব তৈরী করে। সেই বন্ধু বা নিকটজনকে পরবর্তীতে দেখা হলে টিকা টিপ্পনী- আরে ভাই, আপনি তো এখন বড় অফিসার। এখন কি আপনার দেখা পাওয়া যাবে সহজে? এ কথাটা তাকে শ্রদ্ধা করার জন্য নয়, নিজের কষ্টটাকে তির্যক মন্তব্যে প্রকাশ করা হলো মাত্র। মনের দূরত্ব হয়ে গেছে আপনার পক্ষ থেকে। তার পক্ষ থেকে আচরণের পরিবর্তন না হলেও, পরশ্রীকাতরতার কারণে আপনিই অস্বস্তি অনুভব করবেন তার সাথে মিশতে গেলে।
তৃতীয়ত, শত্রুতার মানসিকতা সৃষ্টি করে। টিকা টিপ্পনী দিয়ে শুরু হয়। পরবর্তীতে তার কী কী খারাপ স্বভাব আছে সেটির আলোচনা হয়। তারপর, তার পরবর্তী উন্নতি ঠেকাতে কোন ধরনের চাল চালতে হবে তা মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে।
অবশ্য আমরা নিজের স্বভাবে যতটা না পরশ্রীকাতর হই, তার চেয়ে বেশি হই পরিবেশের প্রভাবে। অর্থাৎ বাসায় স্ত্রী যখন টিটকারি দেয়- অমুক ভাইয়ের পদোন্নতি হয়, তোমারটাই শুধু হয় না। কিংবা সন্তানকে যখন বলা হয়- করিম সাহেবের ছেলে ফার্স্ট হলো, তুমি সারাদিন কী লেখাপড়া করো? ফার্স্ট হতে পারো না! অনেক ক্ষেত্রে বন্ধুমহল এমনকি তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী যেমন ড্রাইভার/পিয়নও টিটকারী করে বা সেই স্যারের সুনাম গেয়ে আপনাকে পরশ্রীকাতর করে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে মনে রাখা উচিত- প্রশংসা বা পরনিন্দায় প্রভাবিত না হওয়াটা ব্যক্তিত্বের পরিচয়।
আমাদের উচিত পরশ্রীকাতরতার পরিবর্তে কাজের মান ও গুণের প্রতিযোাগিতায় লিপ্ত হওয়া। পরশ্রীকাতরতা এবং প্রতিযোগিতার মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে একটি ইতিবাচক এবং অন্যটি নেতিবাচক। রেসে একজন প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলার দু ধরণের পদ্ধতি আছে। একটি, নিজের দৌড়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। অন্যটি, কোনরুপ ষড়যন্ত্র করে তাকে পেছনে ফেলা। একটি ইতিবাচক প্রক্রিয়া, অন্যটি নেতিবাচক।
এক্ষেত্রে চক ডাস্টার পরীক্ষাটি উল্লেখ করা যায়। শিক্ষক ব্ল্যাকবোর্ডে চক দিয়ে একটি লম্বা দাগ টানলেন। তারপর একজন ছাত্রকে ডেকে চক এবং ডাস্টার তার হাতে দিয়ে বললেন- দাগটাকে ছোট করো। ছাত্রটি নিশ্চিন্ত মনে ডাস্টার দিয়ে দাগটির কিছু অংশ মুছে দিলো। শিক্ষক তখন বললেন- এটিকে ছোট করার অন্য কোন উপায় কি নেই? তিনি দাগটির পাশে আরেকটি বড় দাগ দিলেন। তারপর আগের দাগটি দেখিয়ে বললেন ‘এখন এটা কি বড় নাকি ছোট’? ছাত্ররা বললো- ‘ছোট’। তখন তিনি সে ছাত্রকে বললেন- ‘আমিতো তোমাকে চক ডাস্টার দুটোই দিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি গঠনমূলক চিন্তা করতে পারোনি’।
স্রষ্টা আমাদেরকেও চক এবং ডাস্টার দুটোই দিয়েছেন। আমরা কোনটা প্রয়োগ করবো সেটা আমাদেরই নির্ধারণ করতে হবে।

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:১৭
৩৬টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×