somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের আবেগের জোয়ার-ভাটা

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এটা সম্ভবত আলেকজান্ডার কিংবা সম্রাট জাহাঙ্গীরের ঘটনা। বাঙলা জয় করতে এসে তিনি একই দিনে জোয়ার ভাটার ফলে নদীতে পানি প্রবাহের বিরাট পরিবর্তন লক্ষ্য করলেন। তিনি স্বগতোক্তি করলেন - ’যে দেশের নদী একই দিনে বিভিন্ন রুপ নেয়, সে দেশের মানুষের চরিত্রও নিশ্চয়ই বহুরুপী হবে।’ নদীর জোয়ার ভাটার মতই আমাদের আবেগের ওঠা-নামা। জলবায়ুর প্রভাব মানুষের বৈশিষ্ট্যকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। আমাদের ষড়ঋতুতে একই আকাশ-বাতাস, মাটি, গাছপালা যে বৈচিত্র্যময় পরিবর্তনে নিজেকে রাঙায়, আমাদের দেশের মানুষের স্বভাব চরিত্রেও একই রকম বৈচিত্র্য দেখা যায়। সামনে কাউকে স্যালুট করে পেছনে তাকে গালাগাল করতে আমাদের সময় লাগে না। আবেগের মাত্রায় আমরা অনেক অসাধ্য সাধন করে ফেলি আবার অনেক ক্ষেত্রে বেখেয়াল থাকি। যেমন, গানেই বলা আছে-

আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম...
কে হবে মেম্বার, কেবা গ্রাম সরকার
আমরা কী তার খবর লইতাম....

আমরা এতটাই শান্তিপ্রিয় আর বেখেয়াল ছিলাম যে আমাদের কারা, কীভাবে শাসন করছে সে বিষয়ে উদাসীন ছিলাম। তাই লর্ড ক্লাইভ নিজেই বলেছিল- পলাশী থেকে কলকাতায় ফেরার পথে যত মানুষ রাস্তার দু ধারে বিজয়ী ইংরেজ বাহিনীকে দেখার জন্য দাড়িয়েছিল, তারা যদি একটি করে ঢিলও ছুড়তো তাহলে ইংরেজ বাহিনী ধ্বংস হয়ে যেতো।
আমরা জাতিগতভাবে প্রচণ্ড আবেগসিক্ত। আর তাই-
১. কামানের সামনে তিতুমীর বাশের কেল্লা বানিয়ে যুদ্ধ করতে পেরেছিলেন।
২. ক্ষুদিরাম তরুণ বয়সে নির্ভয়ে ফাঁসির মঞ্চে এগিয়ে গিয়েছিলেন।
৩. নারী হয়েও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ব্রিটিশবিরোধী যুদ্ধে উন্মুখ হয়েছিলেন।
৪. নজরুল তরুণ বয়সে বলতে পেরেছিলেন-
এদেশ ছাড়বি কিনা বল
না হয় কিলের চোটে হাড় করিব জল
৫. আবেগ ছিল বলেই পর্যাপ্ত অস্ত্রশস্ত্র, প্রশিক্ষণ, আশ্রয় না থাকা সত্ত্বেও ১৯৭১ সালে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল মুক্তিযোদ্ধারা। নিছক যুক্তি আর বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্লেষণ করলে যুদ্ধে যাওয়া হতো না। আর আমরাও স্বাধীন দেশ পেতাম না।


কিন্তু আমাদের এই অনিয়ন্ত্রিত আবেগকে বিপথে পরিচালিত করার ফলে কী হয়? আমরা নিরপেক্ষ হতে পারি না। আমরা যৌক্তিক বোধে উদ্বুদ্ধ হতে পারি না। আমরা বিবেকবান- সচেতন হতে পারি না। শিক্ষিতের হার যতই বাড়ুক এখনো যৌক্তিক সচেতনতার দিক থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে। যেমন-
১. ব্রাজিল আর্জেন্টিনার খেলা হয় হাজার হাজার মাইল দূরে। আর আমরা এখানে তাদের পতাকা উড়িয়ে দেশপ্রেমের প্রমাণ দিই! তাদের হারজিত নিয়ে নিজেদের মাথা ফাটাই, খুনোখুনিও করি। নিজের গুরুত্বপূর্ণ কাজ রেখে খেলা দেখার পেছনে সময়দানের ক্ষেত্রেও আমাদের দেশের লোকজন মনে হয় রেকর্ড করতে পারবে।
২. ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষিত লোককেও বলতে শুনি- ভোটটা পচায়ে কী লাভ! অমুককে দিলে অন্তত বলতে পারবো যে আমার প্রার্থী জিতেছে, কিছু পাই আর না পাই!
৩. গণপিটুনিতে মানুষ মারার ঘটনা জরিপ করলে মনে হয় আমাদের দেশ উপরের সারিতে থাকবে। কেউ একজন ধর ধর বলে চিৎকার করলে জোয়ান-বুড়ো নির্বিচারে ঝাপিয়ে পড়েন শাস্তি কার্যকর করতে। কাকে মারছি, কেন মারছি কোন চিন্তা ভাবনার দরকার নেই।
৪. টিভিতে টকশোর টিআরপি অনেক বেশি। কারণ আমরা টকশোর ঝগড়া দেখতে খুব ভালোবাসি। চ্যানেলগুলোও চেষ্টা করে উৎকৃষ্ট ঝগড়া আয়োজন করে টকশো জমাতে! কিন্তু আমার জানা নেই টিভির টকশোর বুদ্ধিজীবি সংলাপ থেকে গত ১ যুগে কোন জাতীয় সমস্যার সমাধান এসেছে কিনা। তবুও আমরা টকশো দেখি আর বিভ্রান্ত ও উৎসাহিত হয়ে সকল আড্ডাকে রাজনৈতিক টকশোতে পরিণত করি।
৫. আমার নেতা নেত্রী ঠিক বললেন নাকি ভুল বললেন সেটা যাচাই বাছাই না করেই বিক্ষোভে ফেটে পড়ি। (অধ্যাপক জাফর ইকবালের বিরুদ্ধে সিলেটে একটি বিক্ষোভ মিছিলের ভিডিও দেখেছিলাম। সেখানে এক উত্তেজিত বিক্ষোভকারীকে জিজ্ঞেস করার পর সে লজ্জিত হয়ে বলেছিল- জাফর ইকবাল কী বলেছেন সেটাই সে জানে না।) অপরপক্ষকে নিরেট শত্রু বিবেচনা করে নির্বিবাদে গালমন্দ করি। সে ভালো কাজ করুক আর খারাপ কাজ করুক তার বিরোধিতা করাটাই কাজ হয়ে যায়। এখানেই শেষ নয়। রাজনৈতিক কর্মসূচির নাম করে সাধারণ মানুষের ক্ষতি করি, মানুষের জীবন-সম্পদের বিনাশ করে যাই অবলীলায়। বিপক্ষে কথা বললেই শত্রু ভেবে নিয়ে তাকে গুম/হত্যা করার মত জঘন্য ঘটনাও নতুন নয়।


শেষ কথা হলো- আমাদের সহজ সরল জনগনের হৃদয়ের আবেগকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিপথে পরিচালিত করে জাতীয় দূর্যোগ তৈরী করা খুবই সহজ। আবার একই আবেগকে সুনিয়ন্ত্রিতভাবে জাতীয় উন্নয়নের গতিধারায় নিয়োজিত করতে পারলে এ জাতির পক্ষে অসাধ্য সাধন করে ফেলা সময়ের ব্যপার মাত্র। কিন্তু এ ব্যপারে মূল ভূমিকা জাতীয় নেতৃবৃন্দের। আমাদের আবেগসিক্ত স্বভাবের পরিবর্তনশীলতা এবং বৈচিত্র্যের বিষয়টি তাদের খেয়াল রাখা দরকার।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৫৪
২০টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×