'জানেন ভাবী, ছেলেটা খেতেই চায় না। সকালে নাশতা দিয়েছি। খাবে না, না। ঠাটিয়ে একটা চড় দিলাম। কাঁদতে কাঁদতে খেলো। কী যে করি। মেরে মেরে খাওয়াতে হয়।' এভাবেই পরম আদরের সন্তানকে মায়েরা মেরে থাকেন।
এর বিকল্প কী?
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শারিরীক শাস্তি প্রদান আইনত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু বাসা বাড়ীতে কি পরিবর্তন এসেছে?
প্রথমেই বলে নিচ্ছি আমি সন্তানকে কেবল আদর করার পক্ষপাতী নই। 'কেবল আদর' এবং শাসনহীনতা সন্তানকে স্বেচ্ছাচারী করে তোলে। সন্তান তখন বাস্তবতাবিমূখ হয়। নিজেকে সারাজীবন ননীর পুতুল এবং আদরের শিরোমণি ভাবতেই পছন্দ করে। ঐশীর মত বিপথগামী হয় তখন। এ ধরণের পরিস্থিতি মূলত এখনকার ব্যস্ত এবং নব্যধনী পরিবারগুলোতে। তবে অন্যান্য পরিবারগুলোতে বাবা মায়ের শাসন থাকে পর্যাপ্ত এবং কখনো মাত্রাতিরিক্ত।
এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, শাসন এবং 'মারামারি' আলাদা জিনিস। বাবা মায়েরা শাসন বলতেই বুঝে নেন যে, তিনি কতটা মারেন। মারামারি হলো পারস্পরিক শক্তি পরীক্ষার মতো। আর শাসন হলো অপরাধের নির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগ যাতে করে সে সংশোধিত হয়। সন্তানকে শাসন বিষয়ে বাবা মায়ের উক্তি হয় অনেকটা এমন- 'জিদ না মেটা পর্যন্ত পিটাইছি', কিংবা 'রাগ পানি না হওয়া পর্যন্ত মারছি' অথবা 'এমন রাগ উঠছে যে চামচটা দিয়াই বারি মারছি'। আসলে এগুলো শাস্তি হয়না। এগুলো রাগের প্রতিক্রিয়া মাত্র। হযরত আলী রা. এক উক্তিতে বলেছেন- রাগের মাথায় শাস্তি না দিতে। বরং ফলাফল হয়: পেটানোর পর মায়েরা নিজেরাই কাঁদতে থাকেন (বাবারা কাঁদেন না, তাদের অনুভূতির প্রকাশমাত্রা ভিন্ন)। কারণ, আদরের সন্তান। তার গায়ে আঘাত করা নিজের গায়ে আঘাত করার চাইতে বেশি কষ্টের। কিন্তু সন্তান এটা বোঝে না। বোঝার বয়স তার হয়নি। সে 'মারামারি'র পর মা/ বাবাকে তার প্রতিপক্ষ ভাবতে থাকে। এর কারণ হলো তাকে তার অপরাধ বোঝার পরিবেশ এবং সময় দেয়া হয়নি।
সন্তানের যে কোন আচরণ কিংবা কর্মকাণ্ডের শাস্তি দিতে হলে আগে তাকে তার অপরাধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো দরকার (বাচ্চা কথা বোঝার বয়সী না হলেও বাবা/ মায়ের মুখভঙ্গি দেখে রাগ/ অভিমান বুঝতে পারে)। তাকে অনুতপ্ত হবার সময় ও সুযোগ দেয়া দরকার এবং সে আচরণের জন্য তার প্রাপ্য শাস্তি তাকে দেয়া দরকার। আর শাস্তি অনেক রকম (শারিরীক/মানসিক) হতে পারে। এ ব্যপারে মনে রাখা দরকার- হাদীসে জন্তু জানোয়ারকেও মুখে আঘাত করতে নিষেধ করা হয়েছে। অপরাধ বোঝার পর বাবা মায়ের কষ্টকর মুখভঙ্গিই অনেক সন্তানের জন্য 'পর্যাপ্ত শাস্তি' হয়ে যায়। যেসব সন্তানের উপলব্ধি ও অনুভূতি দুর্বল তাদের ক্ষেত্রে বয়স বিবেচনায় শারিরীক শাস্তি দেয়া যেতে পারে।
শেষ কথা হলো, আমাদের ঐতিহ্যগত পরিবার ব্যবস্থা একটি অসাধারণ প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান। সন্তানকে জীবনধর্মী, সামাজিক এবং আত্মমর্যাদা সম্পন্ন করে গড়ে তোলার জন্য এখানে ধাপে ধাপে যে পদক্ষেপগুলো রয়েছে তার সুষ্ঠু প্রয়োগ দরকার। বাবা-মা, ভাই-বোনের সম্প্রীতিপূর্ণ পরিবেশ পেলেই একটি ছেলে/ মেয়ে মানুষের মত মানুষ হয়ে ওঠে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫৬