সুখী মানুষের গল্পটা প্রায় সবাই জানেন। গল্পটা এ রকম-
এক রাজার ভীষণ অসুখ হলো। বহু চিকিৎসক, বৈদ্য, হেকিম, ওঝা দেখানো হলো। কেউই রোগ সারাতে পারছেন না। অবশেষে একজন চিকিৎসক এসে রাজাকে ভালোভাবে দেখে বললেন -'রাজাকে সুস্থ করা যাবে। তবে উপায় হলো একজন সত্যিকারের সুখী মানুষের জামা লাগবে। সে জামা গায়ে দিলে রাজা সুখী হয়ে সুস্থ হয়ে উঠবেন'। তো সেনাপতি পাইক পেয়াদা নিয়ে বেরিয়ে গেলেন সুখী মানুষের খোঁজে। এক সুদর্শনকে চোখে পড়লো। তার শারিরীক সৌন্দর্য দেখলে যে কেউ মুগ্ধ হবে। তারা ভাবলো এ ব্যক্তিই সত্যিকারের সুখী। কিন্তু তার সাথে কথা বলে জানা গেলো যে সে মানসিক ভাবে বেশ বিপর্যস্ত। তার মতে তার চাইতে দুখী কেউ নেই। সেনাপতি হতাশ হয়ে নতুন কারো সন্ধান করতে লাগলেন। একজনকে বিত্তশালীকে দেখে তার সাথে আলাপ করতেই তার যত দুঃখ কষ্ট বেরিয়ে এলো। এভাবে বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করতে করতে ক্লান্ত সেনাপতি নদীর ধারে চলে এলেন। সেখানে দেখলেন এক লোক বেশ আনন্দ করছে। তাকে জিজ্ঞেস করলেন তার বাড়ী কোথায়- সে জবাব দিলো এই নদীর ধারেই আমার বাড়ী ঘর। জিজ্ঞেস করা হলো- ঘর- বিছানা কোথায়? সে বললো- এই যে ছায়াদার গাছ, প্রয়োজন হলে এখানে ছায়ায় ঘুমিয়ে পড়ি।
তার প্রতি কথায় হাসি আর আনন্দ। তার কাছে জানতে চাওয়া হলো সে কী খায়? সে বললো গাছের ফল, নদীর জল, যখন যা পাই তাই খাই। সেটা নিয়ে আমার কোন ভাবনা চিন্তা নাই। বোঝা গেল যে সে সুখী মানুষ। তখন সেনাপতি বললেন -তোমার জামাটি আমাদের দিতে হবে। সেজন্য তোমাকে কত স্বর্ণমুদ্রা দেবো? সুখী মানুষটি জবাব দিলো- সাহেব আমার তো কোন জামা নেই। মূল গল্পটি এখানেই শেষ।
প্রলম্বিত অংশ-
সুখী মানুষটি জবাব দিলো : 'হাহাহা সাহেব। জামার কথা বলছেন?আপনি তো দেরী করে ফেললেন। আমার একটি জামা ছিল। সেটি শুকাতে দিয়েছিলাম এই গাছের ডালে। বাতাসে সেটি উড়িয়ে নিয়ে নদীতে ফেলে দিয়েছে। আর প্রচণ্ড স্রোতে সেটি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। '
আর সে নদীটি ছিল পদ্মা নদী। পদ্মা পাড়ে এক ধোপা কাপড় ধুচ্ছিল। সে দেখতে পেলো একটি জামা ভেসে আসছে। সে সেটি নিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ইস্ত্রি করে তার লন্ড্রিতে রেখে দিলো। সে সৎমানুষ ছিল। ভাবলো যদি কেউ এসে এটির দাবী করে তাহলে তাকে দিয়ে দিবে। লন্ড্রিতে সুখী মানুষের জামার পাশে যে কাপড়গুলো ধোপা প্রতিদিন ইস্ত্রি করে রাখতো সে জামাকাপড়গুলোতে সুখী মানুষের জামার সুখের পরশ লাগতো। সুখ ছড়িয়ে যেতো সে কাপড়গুলোতেও। ফলে সেসব কাপড় যারা পরতো, তাদের জীবনেও সুখ চলে এলো। আর এভাবেই পদ্মাপাড়ের শহর রাজশাহী সুখী মানুষের শহরে পরিণত হলো।
(বছর দুই আগে একটি জরীপে রাজশাহী শহর সুখী মানুষের শহর হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পেছনের কল্পিত গল্প এটি। আপনার শহরের ক্ষেত্রে শুধু নদীর নামটি পরিবর্তন করে দিলেই হবে।)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:২৮