আমাদের বুয়া গরমের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে গেছে । বুয়া না থাকায় আমরা মোটামুটি এতিম হয়ে গেছি । আমার রান্না করার দৌড় পানি গরম করা পর্যন্ত । একদিন ডিম ভাজি করে বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছিলাম । আমার এক রুমমেট সেই ঐতিহাসিক বস্তু খেয়ে পরপর তিনদিন ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন দেখেছে । এটা আমার বিরুদ্ধে একটি মহলের আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মনে করে সাহস দেখিয়ে পুরোটাই খেয়ে আমি নিজেই সপ্তাহখানেক স্যালাইনের উপর ছিলাম । তারপর রান্না করতে খুব একটা ভরসা পাই নি।
হোটেলে খেতে গিয়ে দেখি ভাতের দাম বেড়ে গেছে । ম্যানেজারকে বললাম, ‘ভাইজান, আপনে জ্ঞানী-গুণী মানুষ, যদি কিছু মনে না করেন তাইলে এই অধম রে যদি দাম বাড়ার কারণটা একটু বুঝাইয়া বলতেন খুব উপকার হইত ।’
ম্যানেজার খুব বিরক্ত হয়ে বলল, ‘ভাইজান মনে হয় দুনিয়াদারি সম্পর্কে উদাসীন । পেপার-পত্রিকা পড়েন না? তেলের দাম বাইড়া গেছে খবর শুনেন নাই ?’
আমি মোটামুটি বেকুব হয়ে গেলাম, ‘তেলের দাম বাড়ার সাথে ভাতের কী সম্পর্ক !’
ম্যানেজারকে দেখে মনে হল সে এরকম অবাক জীবনে কোনদিন হয়নি, ‘আপনে তো দেখি বিরাট বুরবাক ! আরে মিয়া তেলের সাথেই তো সবকিছুর সম্পর্ক । এই তেল নিয়া পৃথিবীতে কত যুদ্ধ হইতাছে দেখেন না! এই তেল দিয়াই তো মানুষের চাকরি-বাকরি সব টিকা থাকে । আবার বড় বড় কবি-সাহিত্যকরা লেখে দেখেননা, মজনুদের তেল আনতে পান্তা ফুরায় । যাই হোক এইসব আপনেরে কইয়া লাভ নাই, আপনে বুঝবেন না! তেলের দাম বাড়ার কারণে এখন সবকিছুর দাম বাড়বে । সবার সাথে পাল্লা দিয়া আমিও যদি দাম না বাড়াই তাইলে আমার ইজ্জতটা থাকবে ?’
অকাট্য যুক্তি । আমি কী বলবো বুঝতে পারি না । তবে কেন জানি মনে হল সবার দাম বাড়লেও মানুষের দাম দিনকে দিন কেবলই কমছে ।