গ্রামের বাড়ি থেকে ফিরলাম চারটা বিড়ালছানা সঙ্গে নিয়ে।
প্রতিবেশীর ঘরে জন্ম নিয়েছিল এই বিড়ালশিশুরা। তিন সপ্তাহ বয়সী এই বিড়ালগুলোর ম্যাঁও ম্যাঁও ডাক সহ্য হলো না আমার প্রতিবেশী ঘরের তরুণ কর্তার। নির্দয়ভাবে পিটিয়ে সেগুলোকে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। আর তাদের মাকে মেরে প্রায় আধামরা করে বাড়ি ছাড়া করলেন।
আমার বউয়ের বিড়ালপ্রীতির কথা আমি আগে থেকেই জানি। আমার মধ্যেও নাকি মাঝে মধ্যে বিড়ালের অঙ্গভঙ্গি/স্বভাব খুঁজে পায় সে। [কী ভয়ঙ্কর সব কথা! এই আলোচনা এখানে থাক ]
মা হারা বিড়ালগুলোর আহাজারিতে চারপাশ ভারি হয়ে আসল। পোলাপান সেগুলারে খোঁচায়ে চরম আনন্দ পাচ্ছে। পুরো একটা দিন বাচ্চাগুলো না খেয়ে রইলো। জয়া সেগুলোকে কোলে করে ঘরে আসল। বাজার থেকে দুধ কিনে আনলাম, একটা ঝুড়ি আর পিডারও আনলাম। পরম মমতায় জয়া সেগুলোকে দুধ খাইয়ে কান্না থামালো। সকাল ১১টার আগে আমাদের ঘুম ভাঙে না। কিন্তু পরদিন সকাল ৭টায় ঘুম ভাঙলো দুজনের। বাচ্চাদের খাওয়াতে হবে। জয়ার দেবর-ননদরা তাকে নতুন নাম দিল 'বিলাই-র মা'। সবাই এমনভাবে তাকাতে লাগল, যেন বিড়ালের প্রতি মমতা প্রকাশ করে আমরা কঠিন বোকামির পরিচয় দিচ্ছি। দূর সম্পর্কের কেউ কেউ ঠোঁট উল্টে বলছেন 'যত্তসব আদিখ্যেতা'।
আমার দাদি তাঁর নাতি-বউয়ের বিড়ালপ্রীতিতে মুগ্ধ হলেন। মুখ গম্ভীর করে বললেন, 'নবীজি বিড়াল খুব পছন্দ করতেন।' আমরা একটু সাহস পেলাম। এদিকে বিড়ালছানাগুলোর মা এই দুইদিনে একবারো তার সন্তানদের কাছে আসেনি। আমি ভেবেছিলাম, মা বিড়াল হয়ত বাচ্চাদের ফিরে পেতে ভয়াবহ কোনো ঘটনা ঘটাবে। এই বিড়ালদের হয়ত ঢাকায় আসা হবে না। কিন্তু এরকম কিছুই হলো না। সারাটা পথ জয়ার কোলে বসে সহি-সালামতে ঢাকায় আসল বাচ্চাগুলো।
এখন ভাবছি অন্যকথা। আবু হোরায়রা নামে একজন সাহাবি ছিলেন। সারাক্ষণ বিড়াল কাঁধে নিয়ে ঘুরতেন তিনি। এই জন্যই তার নাম হয়েছিল আবু হোরায়রা, মানে বিড়ালের বাবা। ভাবছি, জয়াকে এখন থেকে উম্মে হোরায়রা বলে ডাকব, মানে বিড়ালের মা।
.................
বি. দ্র : চারটি বিড়াছানার দুটি আমরা রেখে দিব। বাকি দুটি আমরা কাউকে উপহার হিসেবে দিতে চাই। শর্ত একটাই, যারা বিড়াল ভালোবাসেন কেবল তারাই যোগাযোগ করবেন। বিড়ালপ্রীতির পরীক্ষা শেষে আমরা আপনার হাতে দুটি/একটি বিড়াল তুলে দিব।