ঘটনা ১.
মাস তিনেক আগে ময়মনসিংহ থেকে এক ব্যবসায়ী [তার ভাষায়] এসেছেন অফিসে। তিন বাচ্চার বাপ। চেহারা সুরত মাশাল্লাহ ভালো। টুপি সাপ্লাইয়ের ব্যবসা তার। বয়স ৩৮। এই বয়সে তার অদ্ভুত খেয়াল, 'নায়ক' হবেন। এবং বিপরীতে নায়িকা শাবনূরকে লাগবেই লাগবে! প্রয়োজনে তিনি নিজের টাকায় ছবি বানাবেন। জিজ্ঞেস করলাম, পুঁজি আছে কত? বললেন ভিটেমাটি বিক্রি করলে সব মিলিয়ে লাখ পাচেক টাকা যোগাড় করতে পারবেন। টানা একঘণ্টা তাকে বুঝালাম। অফিসের সবাই বিরক্ত হয়ে তাকাচ্ছিল বারবার, আমি বিব্রত বোধ করতে লাগলাম। কিন্তু মমিনুল নাছোড়বান্দা, তাকে একটা ব্যবস্থা করে দিতেই হবে। এক পর্যায়ে রেগে গিয়ে কিছু কঠিন কথা শোনালাম। ঘরসংসারি হওয়ার পরামর্শ দিলাম। তার বড় মেয়েটা এইটে পড়ে। বললাম আপনার সব চাওয়া-পাওয়া এই মেয়েটাকে দিয়ে পূরণ করেন, যদি ওর ইচ্ছে থাকে। এখনই ওরে অভিনয় শেখানোর ব্যবস্থা করেন, পড়াশোনাটাও জরুরি। কীসের কী! লোকটা আগে নিজের খায়েস মেটাতে চান। উপায় না পেয়ে প্রায় ঘাড় ধাক্কা দিয়ে লোকটাকে বের করে দিতে হলো।
ঘটনা ২.
দুই সপ্তাহ আগের ঘটনা। সেদিন কুমিল্লা থেকে জাহিদ ইসলাম নামের এক কিশোর এসেছে আমার কাছে। বাস ভাড়া দিয়ে পকেটে আছে আর ৫০ টাকা। গীতিকার হতে চায়। তার ধারনা, আমার বিশাল ক্ষমতা। আমি ইচ্ছে করলেই নাকি সে গীতিকার হয়ে যাবে! আমার মাথায় ধরে না, আমার সম্পর্কে এমন অদ্ভুত ধারনা তার কেন হলো! তবুও আগ্রহ নিয়ে তার গীতিকবিতা শুনলাম। হতাশ হলাম। কিছু বইয়ের তালিকা দিয়ে সেগুলো পড়তে বললাম। ফোন নাম্বার দিলাম। সতর্ক করে দিলাম, বেশি ফোন দিলে কিন্তু ধরব না। মাসে একবার। কি কি বই পড়া হলো, সেগুলো জানব। এক সময় বুঝিয়ে-সুজিয়ে তাকে কুমিল্লায় পাঠিয়ে দিয়েছি।
ঘটনা ৩.
আজকের ঘটনা। অফিসের রিসেপশনে একটা কিশোরী মেয়ে বসে আছে। একজন খবর নিয়ে এলেন, আপনার কাছে একটা মেয়ে এসেছে, যাত্রাবাড়ি থেকে। বললাম, কেন? কে? বললো, চিনি না। মডেল হতে চায়। একটু চুপসে গেলাম। এর পর বললাম, গিয়ে বলেন আমি নাই।
................................
এই ঘটনা অনেক। প্রথম দিকে মজা পেতাম। পরে ভাবলাম, এরা কেন আসছে আমার কাছে? আমি কে? মাঝেমধ্যে দুই-একবার পত্রিকায় নামসহ লেখা ছাপা হয়। এর বাইরে আমি কিছুই না। আম জনতার ধারনার মূলে কী? না কি তারা ভাবেন, সাংবাদিকরা চাইলে সব পারেন! না না, এটা খুবই বিপজ্জনক ভাবনা। সাংবাদিকের ইমেজ এমন হওয়া উচিত না।