somewhere in... blog

উন্নত জাতির লক্ষণ ও ভাষা - ১

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ রাত ৮:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উন্নত জাতির লক্ষণ-১

জাতি হিসেবে কারা উন্নত? যারা ক্ষুধা পীড়িত? যাদের দেশের সম্পদ অন্যরা লুন্ঠন করে? যারা আধ্যাত্মিকতায় ষোল আনা আর বিজ্ঞানে শূন্য? অন্য সবকিছুর মত এটাও আপেক্ষিক, কোন স্থির সংজ্ঞা দেয়া কঠিন। তাই একটি পক্ষ নিতে হয়। আমি উন্নত জাতি বলতে ধরবো তাদের, যারা জ্ঞান-বিজ্ঞানের শীর্ষে ও একইসাথে যারা তার ব্যবহারে পৃথিবীতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব রাখতে সক্ষম। বলতে পারেন ইংরেজ, জার্মান, ফ্রেঞ্চ, স্ক্যান্ডিনোভিয়ান, আমেরিকান, চৈনিক, এরা। (তালিকা নিখুঁত নাও হতে পারে এবং অবশ্যই সম্পূর্ণ নয়)

এই তালিকা প্রদানের কিছু সুবিধাও আছে। দ্বীনদারির কথা বাদ দিলে, দুনিয়াদারিতে এরা দাপটে আছে। এমন কোন দুনিয়াদারি পথ পাবেন না, যা দিয়ে তাদেরকে আপনি (মানে অন্য বিশ্ব) তাদের ব্যাপকভাবে শাসন করতে পারবেন। তারা নানভাবে যেটা বহুদিন করে যাচ্ছে।

তাদের উন্নত হবার নমুনা হল বিশ্বে তাদের ধারণা, মতবাদ আর অন্যান্য পণ্যের ব্যাপক প্রসার, প্রভাব। আর তাদের উন্নত হবার কারণ হিসেবে আমি দেখতে পাচ্ছি, রেনেঁসা পৃথিবীকে যা দিয়েছে, চিন্তার বাঁধ ভাঙা জোয়ার, জ্ঞানের মুক্তি, তার সবটুকুকে ধর্মে, দর্শনে, সাধারণ জীবনে গ্রহণ ও তার সবটুকুকে প্রতিটি স্তরে কাজে লাগানো।

পৃথিবীকে দ্রুত পরিবর্তন করছে কি? বিজ্ঞান, টেকনলজি। এগুলার ধারক-বাহক ও শ্রেষ্ঠ ব্যবহারকারী কারা? ওই জাতিগুলোই।

উন্নত জাতির একটা আঁচ পাওয়া গেল। এবার হল, জাতি। জাতি বলতে কি বোঝায়। ধর্ম ভিত্তিকভাবে জাতি ধরা যায়, নৃতাত্ত্বিক বা বংশানুক্রমিকভাবে জাত হিসেবে জাতি ধরা যায়, আবার ভাষাগতভাবেও জাতি ধরা যায়। প্রত্যেকটাই ব্যবহারক্রমে উপযুক্ত বা অনুপযোগী হতে পারে।

তবে, আমি যদি একটি জাতিকে সবচেয়ে বেশি অখণ্ড হিসেবে দেখতে চাই, তবে ধর্মের ভিত্তিটা দুর্বল হয়ে পড়ে। কারণ যতই আমরা একটি ধর্মকে এক জাতি হিসেবে দেখতে চাই, বাস্তবতা এই, কোন একটি ধর্ম পাওয়া যাবে না, যারা জাতি হিসেবে অখণ্ডতার পরিচয় দিয়েছে। শেষ মহাযুদ্ধটার দুই মূল প্রতিপক্ষের উভয় ছিলো খ্রিস্টান। ক'দিন আগেও ইরাক, ইরান, দুই মুসলিম রাষ্ট্র যুদ্ধ করেছে। ধর্মের ভিত্তিতে সবচেয়ে সংগঠিত জাতি সম্ভবত ইহুদীরা। তবে তারা আজকে সংগঠিত হয় নি। হাজার বছরের ইতিহাস আছে, শপথ আছে তাদের পিছনে।

বংশানুক্রমিকভাবে জাত হিসেবে জাতি ধরাটা ছিলো ইউরোপে গত শতাব্দীর প্রথম ভাগের ফ্যাশন। ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বে ইউরোপ এমন বিহবলিত হয়ে পড়ে, তারা মানুষের ভিন্ন ভিন্ন জাতির মাঝেও বিবর্তনগত পার্থক্য বিচারে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সেকালের ইউরোপীয় এলিটরা মনে করতেন, ইউরোপীয়রা বিবর্তনের কারণে জীনগতভাবেই শ্রেয়তর। নিচের দিকে আছে কৃষ্ণাঙ্গরা। জাতিগত এই বড়াইতে ইংরেজদের তুলনা ছিল না। আমেরিকাতেও এলিট ও বৈজ্ঞানিক সমাজে এই ধারণা উঠে আসে - যেহেতু শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গদের চেয়ে উন্নত, তাদের পারস্পরিক প্রজননে শ্বেতাঙ্গদের গুণগত মান নষ্ট হবে।

জার্মানরা ইংরেজদের কালিমা মোচনে সাহায্য করেছিল ওই সময় আরো একধাপ এগিয়ে। তারা এমনকি দেখাতে চায়, ইউরোপীয় জাতিগুলোর মধ্যে আবার জার্মানরা শ্রেয়, কারণ তাদের করোটির মাপ সবচেয়ে বড়। তাদের কিছু প্রজেক্ট ছিলো, যেখানে কেবল জার্মান নাৎসী বা এস এস অফিসার ও সুস্থ জার্মান নারী, যাদের সকলের পিতা মাতা বা প্রপিতা বা মাতামত সবাই জানামতে একশত ভাগ জার্মান, তারা প্রজনন করত অজস্র সন্তান। একে বলে সুপ্রজননবিদ্যা, যা মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রে হরহামেশাই আমরা ব্যবহার করি। মানুষের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা আমেরিকাতেও চলছিল বলে অভিযোগ আছে।

জার্মানরা পরবর্তীতে তাদের এই জাতিভেদকে যখন ব্যাপক গণহত্যায় রূপ দিল, তখন গিয়ে পশ্চিমাদের কাছে বংশানুক্রমিকভাবে জাতভিত্তিক জাতি নির্ধারণ দেখা দিলো বর্বরতা বা অসভ্যতা হিসেবে। আমেরিকা আস্তে আস্তে কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি মনোযোগী হল ও বৈচিত্র্যের ধারক-বাহকে পরিণত হল। এরপর থেকে জাতি বলতে পশ্চিমারা মূলত বিশেষ ভাষাভাষীকে বোঝানো শুরু করে। তাছাড়া, একত্রে ধরে রাখার ব্যাপারে ভাষার প্রভাব ব্যাপক। কারণ ভাষাই যোগাযোগের মূল বাহন।

উপরে যে কয়টি জাতির কথা উল্লেখ করেছি, তাদের নিজেদের ভাষাও এক। এটাও একটা লক্ষণ ধরতে হবে।

সাথে আরও কিছু যোগ করে বলতে হয়, এরা প্রত্যেকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের মৌলিক গবেষণায় জড়িত। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তারা কোয়ান্টাম বিজ্ঞান শুধু বোঝে না, সেটাকে আরো বিস্তারিত করে ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং সমরাস্ত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে। (তুলনা করুন, আমরা কোয়ান্টাম বিজ্ঞান তো বুঝিই না, বরং পুরাতন হয়ে যাওয়া তথ্যপ্রযুক্তি ও সমরাস্ত্রগুলো আমাদের আমদানী করতে হয়)। এরা প্রত্যেকে নিজেদের ভাষার ব্যাপারে সচেতন, জ্ঞান-বিজ্ঞানের মৌলিক গবেষণা নিজেদের ভাষায় করার মত যথেষ্ট উপকরণ তাদের মধ্যে বিদ্যমান। যেমন, নিজের ভাষায় উন্নত মানের বিজ্ঞানের বই, নিজের ভাষায় বিজ্ঞানের জার্নাল।

তারা অন্য জাতির এমন কি ভাষার উপর প্রভাব রাখে। যেমন, ইংরেজরা বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, গদ্যরূপ তৈরি, তথা প্রমিতকরণে ব্যাপক প্রভাব রেখেছে। একে বলে মৌলিক গবেষণা। আর আমাদেরকে নিজেদের ভাষাকে রক্ষার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে। অনেক জাতি নিজেদের ভাষার উপর নানা অত্যাচার মেনে নিয়েছে। আমরা তা করি নি, এটা আমাদের গর্ব। কিন্তু উন্নত জাতিতে এমন ঘটনা নেই কেন? কারণ তাদের উপর কোন কিছু চাপিয়ে দেবার মত কোন জাতিই কখনো ছিলো না, তাও আবার ভাষার মত এমন মূল বিষয়ে।

অন্যভাষায় বিজ্ঞান পড়ার দুইটি ধকল, বিজ্ঞান পড়া আর অন্য একটি ভাষা শেখা থাকা। অন্য ভাষা শেখাটা দোষণীয় নয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আমরা একই কাজ করতে তাদের চেয়ে দ্বিগুণ খাটছি।

উন্নত জাতির আরেকটি নতুন মাপকাঠি আমার মনে হয় :

নিজস্ব ভাষায় উইকিপিডিয়ার প্রবন্ধ সংখ্যা /ভাগ ওই ভাষাভাষীদের মোট সংখ্যা।

শেষেরটা একেবারেই প্রাথমিক ধারণার পর্যায়ে আছে। উপাত্ত এখনো সংগ্রহ করি নি। করে আবার আসবো।

আজ এই পর্যন্তই।


সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ রাত ৯:৩৪
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: প্রভূ-ভৃত্য নয়, চাই সমতা ও ইনসাফভিত্তিক মৈত্রী

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:৫০

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: প্রভূ-ভৃত্য নয়, চাই সমতা ও ইনসাফভিত্তিক মৈত্রী

ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের ছবিটি http://www.gettyimages.com থেকে সংগৃহিত।

ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ভৌগোলিক নৈকট্যের গভীর বন্ধনে আবদ্ধ। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ‘হয় পানি, না হয় তোমাদের রক্ত​এই নদীতেই প্রবাহিত হবে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:২০




কাশ্মীরের পহেলগামে ভয়াবহ হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। এ ঘটনায় সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে নয়াদিল্লি। এমনকি পাকিস্তানকে এক ফোঁটা পানিও দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাঁধলে বাংলাদেশের কি করণীয় ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:১৬


কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ নাগরিক মুসলিম হওয়ায় এবং ভারত বিদ্বেষী(যৌক্তিক কারণ আছে) হওয়ায় এই ঘটনাকে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে মুসলিমদের উপর নির্যাতন থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউসুফ সরকার

লিখেছেন তানভীর রাতুল, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:২৭

নৈতিকতা এবং নীতিবোধ কখনোই আইনের মুখে পরিবর্তিত হয় না (দুঃখিত, বলা উচিত “হওয়া উচিত নয়”)।

নৈতিকতা ও নীতিবোধ কখনোই সহিংসতা বা আইনী চাপের মুখে বদল হয় না (দুঃখিত, বলা উচিত “হওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাক-ভারত যুদ্ধ হলে তৃতীয় পক্ষ লাভবান হতে পারে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:২৭



সাবেক ভারত শাসক মোগলরা না থাকলেও আফগানরা তো আছেই। পাক-ভারত যুদ্ধে উভয়পক্ষ ক্লান্ত হলে আফগানরা তাদের বিশ্রামের ব্যবস্থা করতেই পারে।তখন আবার দিল্লির মসনদে তাদেরকে দেখা যেতে পারে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×