০১। =জলে ভেসে যায় অভাবের কালিমা=
স্বচ্ছ জলের পুকুরে ভেসে যায় অভাবের কালিমা,
দেহের শক্তি ফুরোলে গরীবের কপালে বিষাদের নীলিমা;
একবেলা অন্ন জুটাতে উপেক্ষায় থাকে দেহের যত রোগ ব্যাধি,
দিনমজুরের মনে থাকে ভয় ব্যাধির চেয়ে আধি।
পাতিলের কালির সাথে ভেসে যায় জীবনের প্রতি কিছু অবজ্ঞা
গরীবেরা বুঝে না জীবনের কী সংজ্ঞা;
সারাজীবন খাটুনি, অন্যের সংসারের এঁটো পাতিল ধুয়ে,
কারো জীবনে পরিবর্তন আসে নেমে, আর কেউ
সুখ দেখতে পারে না আর ছুঁয়ে।
০২। =তবুও ওরা সুখে হাসে মন খুলে=
দারিদ্র্যতার ফোঁটা কপালে আঁকা, ঘামের বিনিময়ে রিযিকের দু'দানা
দিনের রোজগার দিনেই ইতি, তবুও সুখি সুখি ওদের মুখখানা!
ঝড় বৃষ্টি তুফান কিংবা ঠাঁঠা রোদ্দুর, সকাল বিকেল দুপুর,
ওরা ফেরি মাথায় ছুটে চলে খালি পায়ে, পায়ের তলায় ইট সুরকির নুপূর।
ওরা ফেরিওয়ালা, কখনো রসনার ফেরী মাথায় নিয়ে,
পরিবারের জন্য দুটো পয়সায় রিযিক আনে ছিনিয়ে!
মলিন বসনে রেললাইনের পাশে, মাথায় শ্রমের বোঝা,
হন্যে হয়ে হন্তদন্ত হেঁটে হেঁটে হয় ওদের সুখ খোঁজা।
স্থান -শায়েস্তাগঞ্জ রেল স্টেশন)
০৩।=আরশিতে তুলে রেখেছি মেঘ=
কিছু মনোমুগ্ধকর মেঘমালা তুলে রাখলাম আরশিতে,
আকাশ দেখুক উপুর হয়ে, কী মনোহারী রূপ তার, নাচুক আজ খুশিতে,
কিছু নীলও থাকুক আরশির বুকে,
আরশি বুজুক হাসি খুশি মুখ নয়, কিছু বিষাদ প্রতিচ্ছবিও
তার বুকে মুখ রাখে!
সূর্যটাও বুঝুক তার চোখ রাঙানির ভয় রাখি না আজ চোখে
মেঘ দেখতে আকাশে তাকালেই সে ঝাঁঝা তেজে আসে সম্মুখে,
আজ তাকাবো না আকাশে, আরশিটা করে রেখেছি তাক,
মেঘ'রা ধ্বসে পড়ুক, উড়ে আসুক মর্তে মেঘ'রা ঝাঁক ঝাঁক।
(স্যামসাং, ঢাকা)
০৪। =এসো হাত ধরো, হেঁটে চলি অনন্ত পথ=
এ পথ গিয়ে যেখানে থেমেছে, সে পর্যন্ত চলো হাঁটি
বিকেলের পথে নিস্তেজ আলো, দেখো পায়ের তলায় নরম দূর্বা মাটি;
সারি সারি গাছের নিয়ে আলো ছায়ার লুকোচুরি খেলা,
এখানে এই পথে বসেছে দেখো সুখালোর মেলা।
গোধূলীয়া আকাশ ছুঁয়েছে, আকাশ হয়ে আছে রক্ত বর্ণ,
এসো হেটে হেটে সুখ কুঁড়াই , যত বিষাদ মনে করি চুর্ণ বিচুর্ণ;
তোমার আমার একাকিত্ব যাক আজ ঘুচে
ব্যস্ততায় ঘিরে ধরা আমাদের, কিছুটা সন্তাপ যাক মুছে।
(স্যামসাং, গ্রীণ মডেল টাউন)
০৫ ।=ওদের হাসি ভালোবাসি=
সূর্য উঠার আগেই ওদের জেগে উঠতে হয়, ওরা পরিচ্ছন্ন কর্মী
ওদের উপেক্ষা করতে হয় ঝড় বৃষ্টি রোদ্দুর গরমি,
ওরা আছে বলেই শহর রোদ্দুর ঝলমলে আলোয় হাসে,
ধুলোর কুন্ডুলিতে উড়ে ওদের সুখ স্বপ্ন, ওরাও যে জীবন ভালোবাসে।
আমাদের উচ্ছিষ্টগুলো নিজ হাতে ছুঁয়ে ওরা শহর করে দেয় দুর্গন্ধমুক্ত,
একদিন কাজে না দাঁড়ালে ওদের থাকতে যে হয় অভুক্ত,
ওদের শ্রমের ঘাম শুকোনোর আগেই, চাই দেয়া হোক শ্রমের মূল্য,
ওরা আমাদের পরিচ্ছন্ন প্রতিনিধি,ওদের মূল্য হীরের তূল্য,
শ্রম মাথা পেতে নিয়েও ওদের ঠোঁটের এক টুকরো হাসি
আহা আমি বড্ড ভালোবাসি।
০৬। =কেউ শোয় ইটের বালিশে মাথা রেখে=
কেউ তুলতুলে নরম বিছানায় শোয়, স্বপ্ন ঘুমে আচ্ছন্ন হবে বলে
নির্ঘুম রাত্রির বুকে মাথা কুটে, চোখ তার যায় জ্বলে,
কেউ এসির হিম হাওয়ায় শোয়, আসে না ঘুম,
ইলেক্ট্রিক পাখার ঘূর্নিতে হিমাবেশ কারো রুম।
আর কেউ ইট পাথরে গুঁজে মাথা, ইট সুরকির বিছানা,
তার ঘুম সঙ্গী হয় কুকুর, কখনও ছাগল ছানা,
ঘুমে কাতর কেউ শক্ত মাটির খাটে, শান্তির ঘুম চোখে নামে,
কেউ একবেলা খেয়েও সুখ কিনে দুদন্ড ঘুমের দামে।
০৭। =হারিয়ে গেছে সেই সুরগুলো=
রোজ বিহানে কান পাতলেই শুনতে পেতাম ফুল পাখিদের কুচকাওয়াজ
কানে ভেসে আসতো "আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি" সে আওয়াজ,
প্রথমেই দেশ ভালোবাসার শপথ হাত রেখে সম্মুখ,
সেই সুর, সেই শপথ কালের ডহরে যায় ডুবে, শুনতে যে হয়ে আছি অপেক্ষায় উন্মুখ।
বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে কলকাকলি নেই, নেই ফুল কলিদের মেলা,
বন্দি ঘরে ছাত্র/ছাত্রীরা কাটায় অফুরন্ত অবসর বেলা;
বিদ্যালয় কক্ষে কী ঘাস গজিয়েছে, বেঞ্চগুলোতে ধরেছে শ্যাওলা?
হে মাবুদ করো করোনা মুক্ত বিশ্ব, ছাত্র/ছাত্রীরা আছে তোমারই হাওলা।
০৮। =কিছু মুগ্ধতার ক্ষণ কেবল আমার হোক=
জীবনের রঙ গাঢ় করে নিয়েছি, যেমন ঝরা পাতার মতন,
মন সাজিয়েছি সবুজে সবুজে করে খুব যতন;
ঠোঁটে মেখেছি খয়েরী চায়ের রঙ,
যত বিষাদ পিছনে ঠেলে দেই বরং!
নিভৃত্ত প্রহরে আমি ভাবনাতে রঙ মিশাই ,
দুঃখগুলোকে নিত্য কেঁটে ছেঁটে করে রাখি বনসাই,
দুঃখদের ডালপালা আর মেলে না, বিষাদ থাকে স্তব্ধ,
আর আমি উষ্ণ চায়ের সাথে মনে বুনি সুখের শব্দ।
(ডিভাইস-স্যামসাং, #স্থান_চুনারুঘাট)
০৯। =সুখের মেলা বসেছিলো একদিন=
একদিন শুকনো উঠোনজুড়ে বসেছিলো আড্ডার মেলা,
আমরা ভাইবোনের ভাসিয়েছিলাম শূন্যে আনন্দ ভেলা,
একদিন জ্বালিয়েছিলাম আগুন দাউ দাউ, কয়লার বুকে,
মাংস পুড়িয়ে ছাই করে জিভে পুরেছিলাম, আহা
দিনটি কেটেছিলো কী যে সুখে।
কাঠিতে মাংস ঢুকিয়ে মসলায় ডুবিয়ে আগুনে তুলেছিলাম
আমাদের সুখ আড্ডার আয়োজনে কিছু অলিখিত সুখ
করেছিলাম নিলাম,
আমাদের সময়গুলো করেছিলাম উপভোগ,
ভাইবোনেরা সে আসরে দিয়েছিলাম যোগ।
১০। =ফুলপাখিরা কবে সুর তুলবে লেফট রাইট=
ভোরের আলো জেগে উঠলেই, পাখির সাথে জেগে উঠতো শিশুফুল,
মাঠে দাঁড়িয়ে এসেম্বলির সুর, প্যারেটে পা তুলে পা ছেড়ে হতো দুষ্টুমিতে মশগুল,
কেড়ে নিলো করোনা ছাত্রজীবন, কেড়ে নিলো সব দুরন্তপনা,
বিদ্যালয়, দৌঁড়ঝাপ, দুষ্টুমি সবই যেন আজ কল্পনা।
কবে খুলবে বিদ্যালয়, কলকাকলিতে উঠবে ভরে খেলার মাঠ,
মনোযোগী হবে পড়ায় কবে ওরা, কবে হবে শুরু বই পাঠ;
হায় করোনা নিবি কবে বিদায়, কবে যাবি ধরা ছেড়ে,
কেনো রে হতচ্ছাড়া এখানে বসেছিস্ আসন গেঁড়ে।
১১। =ঘ্রাণেরও কী বয়স হয়েছে বন্ধু=
নাক টেনে পাই না অতীত ইলিশের ঘ্রাণ,
ইলিশের প্রতি তাই কমে গেলো টান,
স্বাদ ঘ্রাণের বেলা পেরিয়ে কোন কুক্ষণে আছি দাঁড়িয়ে,
আমি ইলিশের স্বাদ চাই ফিরে ফের, দেই মন বাড়িয়ে।
অতীত ইলিশের কথা মনে কী পড়ে বন্ধু,
একটি ইলিশ এলে ঘরে, মনে সুখ সাত সিন্ধু!
সরষে মাখা ইলিশের মৌ মৌ ঘ্রাণে বাড়ি মাতোয়ারা,
ইলিশ রান্না হচ্ছে এ খবর জেনে যেতো পাড়া।
১২। =নামাজ ছাড়া উপায় নেই আর=
তোমরা যারা দৈনিক মজুর, কষ্ট করো ভীষণ,
শ্রম ঘামের এই দুনিয়ায়, জটিল জীবন মিশন,
রোদ্দুর বৃষ্টি মাথায় নিয়ে, করো কত কষ্ট,
রিযিক দানা আয়ের জন্য, খুব পরিশ্রম পষ্ট।
তোমরা যারা শ্রমিক ও ভাই, মাথায় জীবন বোঝা,
পরকালে তোমাদের হিসাব জানো কত সোজা?
ঘামের দামে জীবন চালাও, নিম্ন আয়ের মানুষ,
অভাবের মাঝ ওড়াও নিত্য, বিবর্ণ রঙ ফানুস!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০২১ সকাল ৭:০৩