somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফ্রেমবন্দির গল্প (মোবাইলগ্রাফী)-৮

০২ রা ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
১।



©কাজী ফাতেমা ছবি
=ফ্রেমবন্দির গল্প=
আমি যেন টোপাপানা, আমি যেন কচুরীপানা, ভেসে ভেসে চলে এসেছি কোথা হতে কোথায়। অথচ আমার শৈশব কৈশোর আর তারণ্য কেটেছে টোপাপানা আকাশে উড়িয়ে, টোপাপানার নিচে কত চিংড়ি মাছ ছিলো, কালো চিংড়ি ছোট। তবুও জল বোয়ামে রেখে দিতাম তুলে । সেই দিনগুলো এখনো যেন হাত বাড়িয়ে ডাকে। আর আমি পিছনে ফিরে তাকালেই দেখি কোথাও কিছু নেই । কোথাও কেউ নেই । নেই শৈশবের সখিরা, নেই সেই খেলার সাথীরা।

একদিন টোপা পানার নিচের জলে খুঁজতাম ঠান্ডা, তপ্ত গরমে পানার নিচের জল আহা শান্তি ঝরানো বেলা আমার। কী সুন্দর পাপড়ি মেলা সুখী জীবন যেন টোপা পানা, শুধু ভেসে থাকতাম সুখে। আজ এবেলা সব ছেড়ে কেবল বেছে নিয়েছি জঞ্জাল জীবন। বেছে নিয়েছি ব্যস্ততা। বেছে নিয়েছি পরাধীনতা। এ হওয়ার কথাই তো ছিলো..... নারী যে। নারীরা তো টোপা পানাই, জলে ভেসে ভেসে অন্য কোনোখানে অন্য মুল্লুকে হয় চিরস্থায়ী বসবাস।

আর সেই ডানা মেলা দিনগুলো হয় মনের নাগালহীন। কেবল স্মৃতিতে রয়ে যায় আমার কচুরীপানা টোপাপানা দিনগুলো। জলের আয়নায় আর দেখা হয় না মুখ। আর হয় না আঙ্গুলের ঢেউয়ে জল আঁকাবাঁকা করা। মাঝে মাঝে স্মৃতিগুলো জাগিয়ে তুলতে ফিরে যাই শৈশবে ফিরে যাই কৈশোরে, ফিরে যাই তারণ্যে।

জল ভরা স্বচ্ছ পুকুরে বসে থাকি নিরব নিশ্চুপ, খুঁজে বেড়াই আমার মেয়েবেলা। খুঁজে বেড়াই নাঁটাই হাতে ঘুড়ি উড়ানো দিন। খুঁজে ফিরি, তাল খেজুরের ছায়ায় বসে ভাইবোনের আড্ডা গল্প প্রহর। সবই যেন অচেনা আজ। সবই যেন ঢং, আহ্লাদি পনা। অথচ সেগুলো যে আমার আবেগী দিন আদুরে ক্ষণ আমার খঞ্জন প্রহর। এখনো কান পাতলে শুনি স্বচ্ছ জলের পুকুরে সাঁতার আওয়াজ ঝোপঝাপ। রাতের আঁধারে খেজুর রস চুরি। হিম ঠান্ডা জমে যাওয়া হাতে খড় জ্বালানো আগুনের উত্তাপ । আহা সেই দিনগুলো এখনো মন ছুঁয়ে থাকে। বাড়ী গেলেই আমি শৈশবে কৈশোরে ঘুরে ফিরি। আমার স্বাধীনতাটুকু সেখাইনে ফিরে পাই বারবার।

২।



৩।



০১। এই যে আমি ঠাঁয় দাঁড়িয়ে , ছোটো বেলা খুঁজি
এই যে আমি স্মৃতির বুকে মনটারে আজ গুঁজি,
ভালো লাগে বড় ভালো, রঙ বাহারী প্রহর,
মুগ্ধতাদের ছেড়ে আমি, আছি আজব শহর।

এই যে আমার মেয়েবেলা, রঙে ভরা প্রহর,
যেথায় বইতো মন জমিনে মুগ্ধতারই লহর,
খালি পায়ে সারাবাড়ী, দৌঁড়াদৌঁড়ি বেলা,
আজ সেখানে বসে নাতো কোনো রঙের মেলা।

যে যার মত চলে গেলাম, মেয়েবেলা ছেড়ে,
বসলাম গিয়ে অন্য কোথাও স্থায়ী আসন গেঁড়ে;
বোনেরা আজ তিন মুল্লুকে, হয় না দেখা রোজই,
একটুখানি ক্লান্তি এলে মেয়েবেলা খুঁজি।

মন বাগানে যেথায় উড়তো ফড়িং প্রজাপতি,
আজ এখানে ব্যস্ত জীবন সুখে টানলাম যতি;
সুখও আছে দুঃখও খুব, এই শহরের মাঝে,
মেয়েবেলা বেজে উঠে তাইতো বুকের ভাঁজে।

পুকুর জলে ছিপের সুতায়, টেংরা পুটি উঠতো,
কাঁকড়া ধরলে টেনে সুতো, মনটা যে খুব টুটতো;
হায়রে আমার দিনগুলো সেই উড়তাম ডানা মেলে,
আজ এখানে ব্যস্ততাতে লাগে এলেবেলে।

৪।



৫।



০২।
আমি কী টোপাপানা, অথবা কচুরীপানা,
ভেসে যাই, ভেসে আসি, উদাস যে মন খানা!
এই আমি কী পরাধীন এখন, আমার স্বাধীনতা কই?
ইচ্ছে হলেই যে পারি না যেতে সেই বেলায়
খুব উতলা রই!

ছাতিম ফুলের ঘ্রানে যে বেলা হতাম মাতাল,
মন ভরা থাকতো মুগ্ধতায়, সুখের বাম্পার ফলন
খুশিতে ভরা থাকতো মনের চাতাল
আমি টোপা পানা, মেয়েবেলা হতে হয়ে গেলো স্খলন।

টোপাপানা আকাশে উড়িয়ে যে শান্তি করেছি আহরণ,
আহা বড়বেলা সে সব করে নিলো হরণ,
ইচ্ছে হলেই দৌঁড়ঝাপ যায় না আর দেয়া,
আমি যে উঠে পড়েছি বয়স ভেলায়, আমায় নিয়ে যাচ্ছে
দূর বহুদূর সময়ের খেয়া।

যেখানে সুখ ছড়ানো ছিলো, যেখানে ছিলো স্বাধীনতা
যেখানে গাছ গাছালি পাখ পাখালি শুনতো মনের কথা,
এখানে কত কথা করে ফেলি নির্দ্বিধায় হজম,
এখানে সময় আমার অন্ধকার থমথম!

সেই শিমুল ফুল কুঁড়ানো, আর ঢিল মেলে জলে
ব্যাঙ লাফ খেলা, সেই সাতঘর, সবই অতীত জলের তলে;
স্নিগ্ধ প্রহর গুলো হয়ে গেলো টোপাপানা,
এবেলা আর স্বাধীনতার আকাশে মেলতে পারি না ডানা।

৬।



©কাজী ফাতেমা ছবি
=ফ্রেমবন্দির গল্প=
স্বচ্ছ জলের আয়নায় আকাশ দেখতে গিয়ে দেখি জলের উপর কালো রঙে ছাপা পাতারা, একটুখানি আঙ্গুল ছুঁয়াতেই জল এলোমেলো। পাতারা আঁকা বাঁকা। জলের ঢেউয়ে টকটকে সবুজ কচুরিপানা, টোপাপানা আহা আমার মনোহারী ক্ষণ। জলে পা ডুবিয়ে আমি রোমন্থণ করি সুখ বর্তমান আর অতীত মিলিয়ে। ঘাটলায় ছিপ হাতে বসে সেই পার করা দিনগুলো চোখের আয়নায় পড়ে ঝুঁকে।

কত টেংরা পুটি অনায়াসে ঝুলে থাকতো ছিপের সুতায়, ওরা উঠে আসতো আমার লোভনীয় টোপ এর ছলে। বাঁশের বেতের ঝুড়িতে রূপালী মাছ প্রহর। এখনো কান পাতলে শুনি টুপর টাপুর জল পুকুরের মাছের ঘাই। কত বেলা এখানেই কেটে গেছে অনায়াসে কেবল ছিপ হাতে। পুকুর পারের সাথে সেই সখ্যতা এখনো অটুট, আমার তালপুকুরের পার, আমার তাল পুকুরের জল। সাঁতার কাটা প্রহর। কত উচ্ছ্বলতার দিনগুলো ছিলো। কিছুই বদলায় নি। এই প্রকৃতি এই স্বচ্ছ জল পুকুর। বদলে গেলাম কেবল আমি। সময় ঘড়িটা বুকের উপর হন হন করে হেঁটে যাচ্ছে আর আমি বয়সের বিকেলে বসেও উচ্ছ্বলতা খুঁজি।

সেই ডানপিঠে তারুণ্য আমার মনে এখনো হামলে পড়ে, বয়স অশীতিপর অথচ আমি যেন কুড়ি। কত মুগ্ধতা এসে মনের দুয়ারে দেয় হানা। আমি মনের দুয়ার করি না বন্ধ। আসুক সুখগুলো উড়ে উড়ে। আমায় নিয়ে ভাসুক স্বচ্ছ জল পুকুরের ঢেউয়ে ঢেউয়ে।

এখানে বসে নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দেয়া একেকটি প্রহর ফিরে আসুক বারেবারে । আমি বেলা শেষের খেয়ায় উঠার আগেও মুগ্ধতাদের তুলে নেবো আঁচল পেতে। বয়স কমলা পাতা হোক তাতে কী। মন আমার চিরসবুজ। মন আমার ডালে বাঁধা গরুর রশির দোলনা। মন যেন সবুজ কচুরী পানা কেবল ভাসতে জানে মুগ্ধতার ঢেউয়ে।

৭।



৮।



০১।
মন যে আমার স্বচ্ছ জলে, ডুব সাঁতারে মত্ত,
মন যে আমার হয়ে গেলো আমায় অনায়ত্ত;
মন যে আমার সবুজ পানা, মন যে চিরসবুজ
মুগ্ধতাদের টানতে কাছে মন হয়ে যায় অবুঝ।

মনের বাড়ী সুখের ছোঁয়া, মন যে সুখের নদী,
মন যে আমার বয়ে চলে সুখে নিরবধি
তাল পুকুরের দিনগুলো সেই, মনে দিলো হানা,
মন যেন আজ টকটকে ঐ সবুজ কচুপানা।

পা ডুবিয়ে বসলে জলে মন হয়ে যায় সুখী,
জলের আয়নায় আকাশ দেখি হই না উর্ধ্বমুখী;
মন হারালো আজকে আমার মুগ্ধতারই ভিড়ে,
কত সুখের বাজে বাঁশি আমার মরে নীড়ে।

মন হলো আজ উদাস বাউল, মন যেন আজ খুশি,
মনের খাঁচায় সুখ পাখিটা যতন করে পুষি,
স্বচ্ছ জলে দেখি চেয়ে সুখী মুখোচ্ছবি,
মুগ্ধতার রঙ ছুঁয়ে আজকে আমি উদান কবি।

কত ছন্দ জলে ঢালি, কত ছন্দ মনে
সুখের ছোঁয়ায় জল পুকুরে কাঁপি শিহরণে
মনটা যেন খঞ্জন পাখি, ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ উড়ে,
উচ্ছ্বলতার বাজনা বাজে মনের শাখে সুরে।

৯।




০২।
পা ডুবিয়ে বসে আছি বন্ধু, আছি নিরিবিলি একা,
ইচ্ছে হলে এসে করতে পারো দেখা,
এসো বসো পাশ ঘেঁষে,
এবেলা যাবে মুগ্ধতার জলে ভেসে।

কাঠের পৈঠায় অনায়াসে কাটিয়ে দাও আমার সঙ্গে
আকাশ ছবিটা জলের আয়নায় দেখো,
ছুঁয়ে দাও জল, সুখ শিহরণ জাগুক সারা অঙ্গে;
কী সুনসান নিরবতা, হেমন্ত দিন
মিহি হাওয়া বাজে শুনো কান পেতে পাতার বীন।

ঝরা পাতার গল্প শুনবে? অনুভব করবে জীবন?
বন্ধ চোখে ভাবো একবার, কী মুগ্ধতায় ভরা এ ভুবন,
একদিন তুমি আর আমি হবো ঝরা পাতা,
ছিঁড়ে যাবে জীবনের ছন্দ, মলিন হবে জীবন কাব্যের খাতা।

এসো বসো ঘাটলায়, দেখো ঝরা পাতার গান বাজে,
থেকো না এবেলা ব্যস্ত নৈমিত্তিক কাজে,
নিজেকে দাও অবসর, শুনো তুমিও ঝরা পাতার দলে,
এত কড়ি আশা করে কী হবে শুনি, সবই মিশে যাবে মাটির তলে।

তুমি আর আমি এখন সবুজাভ কমলা পাতা, জীবন এখন মধ্য দুপুর
এসো পরিয়ে দেই মাথায় তোমার কচুরিপানার টোপর;
অথবা রঙিন ঝরা পাতার মালা পরিয়ে দেই গলে,
এই তুমি কী ভালোবাসি বলবে এবেলা সুখে থাকার ছলে?

১১।



১২।

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:২৫
৩৭৫ বার পঠিত
২৫টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভারতীয় পতাকার অবমাননা

লিখেছেন সরলপাঠ, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ ভোর ৪:৪৩

বাংলাদেশের ২/১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় পতাকার অবমাননা আমার কাছে ছেলেমী মনে হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করার কারণে বাংলাদেশের মানুষের মনে প্রচন্ড রকমের ভারত বিদ্বেষ তৈরি হয়েছে।

কিন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভিসা বন্ধ করায় ভারতকে ধন্যবাদ।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩



ভারত ইদানীং ভিসা দিচ্ছেনা; তারা ভিসা না দিয়ে আমাদেরকে শিক্ষা দিতে চায়! তাদের করদ রাজ্য হাতছাড় হওয়া খুবই নাখোশ, এতোই নাখোশ যে মোদী মিডিয়া দিনরাত বয়ান দিচ্ছে এই দেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতের চিকিৎসা বয়কট এবং

লিখেছেন পবন সরকার, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫৬


ভারতের এক হাসপাতাল ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশের কোন রুগিকে তারা চিকিৎসা দিবে না। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যে হাসপাতাল থেকে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার জন্য বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। চামচা পুঁজিবাদ থেকে চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছিল দেশ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:১৩






চামচা পুঁজিবাদ থেকে দেশ চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা মিলে চোরতন্ত্র করেছে।

সোমবার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনাকে ভারত ফেরত পাঠাবে তবে............

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪২


শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে বিচারের জন্য ভারতের কাছে ফেরত চাইতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশকে প্রতিহিংসামূলক বিচারপদ্ধতি বাদ দিতে হবে। বিচারে শেখ হাসিনা যাতে ন্যায় বিচার পান বাংলাদেশকে আগে তা নিশ্চয়তা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×