রোদ্দুরের মনের উঠোনে তখন সবে রোদ উঠা শুরু। ছলাৎ ছলাৎ উপছে পড়া উত্তাল ঢেউয়ের তোড়ে রোদ্দুরের ভাসার কথা ছিল তখন।ডিঙিতে বসেছিল সে সেদিন একা নয়, মাঝি ছিল ভরসায়, আশায়!!
ধীরে ধীরে ঝলমলানি সোনা রোদের ঝিলিক উঁকি দেয়ার কথা ছিল! কিন্তু রোদ উঠেনি তার মনের উঠোনে সেদিন। শুভ্র মেঘ সরে গিয়ে কালো মেঘ মনের উঠোন আঁধার করে দিয়েছিল।
রোদ্দুর সেদিনই বুঝতে পারে সে একা। তাকে একাই পাড়ি দিতে হবে জীবন নামক উত্তাল সমুদ্র। যেদিন রোদ্দুর ভয়ানক উত্তাপে তার গা পুড়ে যাচ্ছিল সেদিনের কথা তার মনে হলেই, বিমর্ষ বদনে স্থির বসে থাকে। কষ্ট চুয়ে চুয়ে পড়ে চোখের কোণা হতে।আৎকে উঠা প্রহর রোদ্দুর ভুলতে চায়, চাইলেই কি সে তা ভুলতে পারে।
সেদিন কর্মস্থলে পৌঁছলে হঠাৎ কাঁপুনি দিয়ে জ্বর উঠা শুরু হয় রোদ্দুরের। মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণায় কাতর রোদ্দুর বাসায় ফিরে আসে বিষন্নতায়। জ্বর সাথে বমি আর মাথা ব্যথা... উফ কি কঠিন প্রহরগুলো.. রাত বাড়ে যন্ত্রণা বাড়ে। সেদিন রোদ্দুর একাকি এক রুমে রাত কাটায়। পানির তৃষ্ণায় রোদ্দুর কাতরায় পানি পানি বলে। পরম শান্তিতে প্রিয়জনেরা পাশের রুমে বেঘোর ঘুমে। রোদ্দুর কাঁদে আর কাঁদে সাথে বাড়তে থাকে উত্তাপ মাথার যন্ত্রণা। রাত ভোর হয় তাপ তবু নামে না, একসঙে দুইটা করে প্যারাসিটামল গিলতে থাকে। খাওয়া প্রায় বন্ধ, খেলেই বমি। সেদিন রোদ্দুরের জন্মদাতা উপস্থিত এসে। মেয়ের যন্ত্রণা দেখে অস্থির বাবা বার বার মাথায় বাম দিতে থাকেন পরদিন সারা রাত জেগেছিলে বাবা পাশে তার। আবার রাত ভোর হয় জ্বর নামেনা। বাবা বাড়ি যান রোদ্দুরের বোনকে সেবার জন্য পাঠাবেন বলে। রোদ্দুর আবার একা হয়ে যায়। জ্বর নামার কথা নেই, এত করে বায়না ধরছে সে ডাক্তারের কাছে যেতে হাসপাতালে ভর্তি হতে। সেদিন প্রিয়জনদের অবহেলাই পেয়েছিল রোদ্দুর। অনেক বায়নার পর রোদ্দুর হাসপাতাল যায়, ব্লাড টেস্ট করালে ডেঙু ধরা পরে। রোদ্দুর তার শরীরের অবস্থা বুঝতে পেরে হাসপাতালে থেকে যেতে চায়, প্রিয় জনেরা রাজি নয়। বাসার উদ্দেস্যে রওয়ানা হতে রিকশায় উঠে হড়হড় করে বমি করা শুরু করে। উপায়ন্তর না দেখে শেষে হাসপাতাল ভর্তি হয়। অচেতন অবস্থায় দুদিন ছিল। রোদ্দুরের রক্তের চাপ ছিল তখন ৪৫/৫৫।
ছোট বোন পাশে ছিল প্রতিটি মুহুর্তে। ভালবাসার ঋণ যে শুধোবার নয়। পাঁচদিন হাসপাতাল থেকে অবশেষে বাসায় ফিরে সুস্থ হয়ে। অতি আপনজন একদিনও হাসপাতালে রোদ্দুরের গা ছুঁয়ে মন ছুঁয়ে ছিল না.... কি কঠিন মুহুর্ত আহ।
রোদ্দুরের জীবনটাই বিতৃষ্ণায় ভরা। রোদ্দুর এখন খুব পাষান হয়ে গেছে। সহানুভূতি, সহমর্মিতা কি রোদ্দুর বুঝে না! ভালবাসা নেই আর রোদ্দুরের হৃদয়ে। রোদ্দুর এখন তখন সবসময় দুপুরের মাঝ আকাশের ঝাঁ ঝাঁ রোদ্দুর হয়ে বেঁচে থাকতে চায়। কেউ কাছে এসো না অবেলায়। রোদ্দুর তার অভিমানি হিংসার তেজ দিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিবে।চোখেও আর জল নেই যে, সে জল দিয়ে তীব্র উত্তাপ নিভাতে পারে। সো সাবধান.....