বাচ্চারা ঈদে একটু ঘুরবে বাইরে এটাই স্বাভাবিক । সারা বছরই তো একটা না একটা ব্যস্ততা লেগেই থাকে । কখনোৱই সময় হয়েই উঠে না । ঈদ মৌসুমে এই যা একটু বাইরে বের হতে হয়। ঈদের দিন অবশ্য আবহাওয়া অনেক ঠান্ডা ছিল এবং আমার আর বাচ্চাদের ইচ্ছে ছিল রিক্সা করে ঘুরবে কিন্তু বাচ্চাদের বাবা রোজা রেখে টায়ার্ড তাই কথা দিল যে ঈদের পরের দিন ঘুরতে যাবে। সেই অপেক্ষায় ঈদের দিন কেটেছে আমাদের । একেবারে বোরিং টাইম । কোন মেহমান নাই। আমরাও কোথাও বের হইনি ঘর থেকে । সারাদিন একটু টিভি দেখি একটু মোবাইলে নেটে ফেবু ঘাটি আবার একটু শুয়ে বসে দিনটি একেবারেই অলসতায় কেটে যায়।
ঈদের পরেরদিন সকাল থেকেই বাচ্চারা কাউকাউ করতেছে বাইরে বের হওয়ার জন্য কিন্তু সকালে একটু রোদ বেশী হওয়ায় তাদের বাবা বলল দুপুরের খাওয়া খেয়েই বের হবো। কথা মেনে নিয়ে দুপুরে খাওয়ার পরই বের হলাম আমি টমজেরীর বাপ আর ভাসুরের ছেলে । দুইটা রিক্সা করে রওয়ানা হলাম । বের হয়ে তো দেখি আহা রাস্তাঘাট এমন ফাঁকা আর সুনসান। বারে বা ঢাকা আমার এমন সুন্দর শুধু ঈদ সিজনেই দেখতে পাই তোমায়। গাড়ির হর্ণ নেই, কালো ধোঁয়া নেই, নেই মানুষ জট নেই যানজট। শুধু রিক্সায় রিকশায় স্বপরিবারের বেড়ানোর দৃশ্য। মা বাবার কোলে বাচ্চাদের স্নিগ্ধ হাসি সারা বিকেল জুড়েই ছিল। এদিক সেদিক চোখ বুলালেই দেখতে পেয়েছি বিতর্কিত পাখি জামার সমাহার। উচ্ছল তরুণীরা লং জামা পড়ে বের হয়েছে ঘুরতে। সবার চোখে মুখেই আনন্দের ঝিলিক উপসে পড়ছিল। তবে একটা জিনিস খেয়ার করলাম এবার ঈদে মেজেন্ডা কালারেরই জয় জয়কার। আমি জানি না শুধু কি আমার চোখেই মেজেন্ডাকালারটা চোখে পড়ছিল না অন্য সবারও চোখে পড়ছে।
বিকেলের রোদটা বেশ তীক্ষ্ণ ছিল। বেসামাল রোদ্দুরের ঝাঁঝ থাকলেও সে আমাদের ভ্রুকুটি দেখাতে পারেনি কারণ তার শত্রু এলোমেলো বাতাস ছিল আমাদের পক্ষে। আহ কি মধুর বাতাস........ রোদ্দুর খানিক বাদে বাদেই লজ্জায় শুভ্র মেঘের আড়ালে লুকিয়ে থাকে। আমরা তখন তাকে জিহবা দেখিয়ে ভেংচি কাটি smile । আকাশটা ছিল বেশ স্বচ্ছ। খানিক বাদেই বুঝতে পারবেন কেন বলেছি আকাশটা সুন্দর স্নিগ্ধ আর স্বচ্ছ।
তবে বিরক্তির একটা কারণ ছিল......বলেন তো কি হতে পার।
না থাক আমিই বলে দেই। রাস্তার বেহাল অবস্থা । জেরীটা কোলে থাকাতে আমার রিকশায় বসে থাকতে খানিকটা বেগ পেতে হয়েছিল । খানাকন্দ ভাঙ্গাচূড়া রাস্তা বেশ বিরক্তির সৃষ্টি করেছিল। তবুও শেষ মুহুর্তের আনন্দগুলোর কাছে এসব বিরক্তি ম্লান হয়ে ঝরে পড়েছিল আকাশ থেকে।
রিকশায় গিয়ে থামে সায়েদাবাদ শিশু পার্ক । আমরা প্লান করেই গিয়েছিলাম সেখানে। কারণ অন্য পার্কে তিল ঠাঁই থাকবে না সেটা আমরা আগে থেকেই জানতাম। কারণ গত কয়েক ঈদে সেই জায়গাগুলোতে যেয়ে বুঝেছি যে কত ধানে কত চাল বাপরে অসহ্য কষ্ট সহ্য করেও বাচ্চাদের কোন রাইডে চড়াতে পারিনি। সেদিক থেকে সায়েদাবাদে ভীড় কম থাকে।
টিকেট করে ঢুকলাম ভিতরে...... প্রথমেই দেখুন কি সুন্দর দৃশ্য । মৌমাছির ফুল থেকে মধু আহরণ.......
(ছবি তুলতে বেশ কষ্ট হয়েছিল। টম জেরীর বাপ থাকলে হাবিজাবি ছবি তুলতে পারিনা কখনো। বেচারা সবই দ্রুততার সাথে করে । হেটে চলে যায় বাচ্চাদের নিয়ে তখন আমি তাদেরকে হারাবার ভয়ে বেশী ছবি তুলি না । যেমনে তেমনে কিলিক করেই পিছু ছুটি)।
১। কসমস থেকে মধু সংগ্রহ করছে মৌমাছিটি। ছবিটি দ্রুততার সাথে ক্লিক তাই অস্পষ্ট......
প্রথমেই ট্রেণে উঠার টিকিট কাটা হলো ..... আমি টম জেরী আর ভাসুরের ছেলে আর ওদের বাবা দাঁড়ায়ে শুধু দেখে যাচ্ছিল......
২। আমার বড় আব্বা আর ভাসুরের ছেলে.......
৩। দুই ভাই একসাথেই ছিল সারাক্ষণ
ট্রেনে চড়া শেষ করেই টিকিট কাটা হলো...... এই রাইডের নাম জানি না কিন্তু.....
৪। আকাশটা কি নীল ছিল কালকে......
৫। বড় আব্বা আর ভাসুরের ছেলে কি খুশি আমার আব্বুটা। আমার সাথে ছিল দুষ্টু জেরী তাই ওর ছবি উঠাতে পারিনি।
৬। ছেলে বুড়া বুড়ি তরুণ তরুণীদের উপসে পড়া আনন্দ ঝরে পড়ছিল এই রাইডে.......
উপরের রাইডে আমরাই মনে হয় সবোর্চ্চ ঘুরেছি........ বারো বার ঘুরানো হয়েছিল কারণ পরবর্তী ট্রিপের জন্য লোকজন ছিল না তাই আমাদেরকে নামাতে দেরী করেছিল সেখানকার লোকেরা।
সেখান থেকে নেমে হাঁস নৌকার জন্য টিকেট কাটা হলো। এবার আমরা চারজনই এক নৌকায়।
৭। হাঁস নৌকায় একটা বাবু
৮। স্বপরিবারে উঠেছেন হাঁস নৌকায়......
৯। আমরা স্বপরিবারে....
তারপর আমরা খানিক্ষন বসে জিরোলাম। হঠাৎ শুনলাম মাইকে...... যাদু দেখাবে তাই বাচ্চাদের নিয়ে সেখানে গিয়ে দাঁড়ালাম.......
১০। যাদুর খেলা শুরু হয়ে গেছে। প্রাণের পক্ষ থেকে ফ্রি উপহার......... যাদু করে যাদুকর অনেকগুলো প্রাণ জেমস চকলেট বের করে বাচ্চাদের ছুঁড়ে দিতে লাগলেন........ আনন্দ ছড়িয়ে পড়লো মুহুর্তে.......
তারপর যাদু দেখাতে আসেন টিভির ছোট যাদুকর শিল্পী নামটা ভুলে গেছি সম্ভবত নওশীন শিকদার হতে পারে ।
১১। সুন্দর আপুটি আরো কয়েকটি যাদু দেখাল আমাদের.......
১২। আপুটিও যাদু করে চকলেট আনলো বাচ্চাদের দিকে ছুড়ে মারলো । তারপর যাদু করে নিয়ে আসলো শান্তির সাদা কবুতর।
১৩। ডোরেমন আসল হঠাৎ করে। ভাববেন এটা ছবি.........এটা কিন্তু জীবন্ত ডোরেমন। যা দেখে টম জেরী খিলখিলিয়ে হেসে উঠল। একেই বলে আনন্দ......
১৪। দেখুন কত ফাঁকা ছিল এই শিশু পার্কটি..... ভীড়ে যাওয়ার চেয়ে এখানেই ভাল কেটেছে আমাদের
এখানে আর বেশীক্ষণ থাকা হলো না। ওদের বাবা বলল এখন কোথায় যাব আর। চল বাসায় যাই কিন্তু ওরা মানলে তো। সময় বাজে সাড়ে তিনটা এত তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে নারাজ বাচ্চারা। কি আর করা উনি বাচ্চাদের জন্য মেনে নিলেন যে অন্য কোথাও যাওয়া যেতে পারে কিন্তু কোথায় যাবে চিন্তা করতে করতে শেষে বলল চল তাইলে বুড়িগঙ্গা ইকো পার্কেই যাই । রাজী হয়ে গেলাম আমরা। বাইরে বের হয়ে অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম। একটা গাড়ি সিএনজি বা রিক্সা অইদিকে যেতে রাজীই হচ্ছে না । আর সেদিকে রোদ্দুর আমাদেরকে ভেংচি দেখিয়ে পুরো আকাশ জুড়ে দখলদারিত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জ্বালা রে জ্বালা গরমে আর রোদে বাচ্চারা কিছুটা বিমর্ষ হয়ে গেছিল। যখন অপেক্ষায় ছিলাম একটা যানবাহনের তখন আকাশে রোদ্দুর থাকলেও বেশ সুন্দর আর স্নিগ্ধ আর স্বচ্ছ। কেন বলেছিলোম আগে এখন দেখুন ছবিটি।
১৫। ফ্লাইওভারের ফাঁক দিয়ে উঠানো ছবিটি
১৬। রেললাইন ধরে দাঁড়িয়েছিলাম আমরা। আকাশটা একদিকে নীল । অন্যদিকে শুভ্র মেঘ আবার মেঘের ফাঁক গলে সূর্যটাও উঁকি দিচ্ছিল.....
অবশেষে একটা সিএনজি পাওয়া গেল.....তাও শ্যামপুরে যাবে না। শুধু বুড়িগঙ্গা ব্রীজের নিচে নামিয়ে দিবে। তাও রাজী হতে হলো। সেখানে গিয়ে রিকশা নিলাম আবার।
........ বাকিটুক আগামী পর্বে............