পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানটি ছিল জমকালো । লোকে লোকারণ্য । সব টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে । আয়োজকদের মধ্যে প্রবল উত্তেজনা । উত্তেজনার মূল কারণ একজন ভারতীয় শিল্পী রানী মুখার্জী দয়া করে পুরষ্কার নিতে এসেছেন । তিনি নাকি যেকোনো মুহূর্তে চলে আসতে পারেন । শুধু পুরস্কার হাতে তুলে নিবেন এই কারণে তাকে বিপুল অংকের ডলার দেয়া হচ্ছে ।
রানী মুখার্জী এসে উপস্থিত হলেন । সঙ্গে বডিগার্ড । বাংলাদেশের অনেক শিল্পী ও শিল্পীর মায়েরা আধপাগল হয়ে গেলেন । তাদের আহ্লাদী দেখে আমি দূর থেকে লজ্জায় মরে গেলাম । একবার মনে হলো, জাতিগতভাবেই কি আমরা হীনমনা ? কবে আমরা নিজেদের উপর বিশ্বাস ফিরে পাবো ?
রানী মুখার্জী নিয়ে আহ্লাদের একটি উদাহরণ দেই । আমাদের দেশের একজন অভিনেত্রী ছুটে গেলেন । গদগদ ভঙ্গিতে ইংরেজি ও হিন্দি মিশিয়ে বললেন, আমি বিশ্বাস করছি না আমি আপনাকে চোখের সামনে দেখছি । আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে । আমি আপনাকে একটু জড়িয়ে ধরতে চাই ।
রানী মুখার্জী : Please no. You can take pictures.
বাংলাদেশী অভিনেত্রী : আমি কোনো কথা শুনবো না । আমি আপনাকে ছুঁয়ে দেখবোই ।
রানী মুখার্জী : Don't touch me. Take Picture.
বাংলাদেশী অভিনেত্রী : আপনার সঙ্গে হেন্ডশেক না করলে আমি মরেই যাবো।
রানী মুখার্জী নিতান্ত অনিচ্ছায় এবং বিরক্তিতে হাত বাড়ালেন । বাংলাদেশের নামি অভিনেত্রী সেই হাত কচলাতে থাকলেন।
আমি প্রতিজ্ঞা করলাম, জীবনে কখনো বিদেশের মাটিতে পুরস্কার নিতে যাবো না । এই জাতীয় দৃশ্য দ্বিতীয়বার দেখার কোনো স্বাদ আমার নেই ।
- হুমায়ূন আহমেদ,
দেখা না-দেখা (২০০৭)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৫৩