সালমান শাহ হত্যার সবচেয়ে সন্দেহভাজন আসামী এই আজিজ মুহাম্মদ ভাই । উনি একজন বড় শিল্পপতি । অলিম্পিক ব্যাটারী, অলিম্পিক বলপেন, এমবি ফার্মাসিটিউক্যাল, এমবি ফিল্ম, টিপ বিস্কুট, অলিম্পিক এনার্জি প্লাস বিস্কুট এগুলোর মালিক তিনি । তিনি সালমানের মৃত্যুর সময় থেকেই একজন ধনকুবের নামে পরিচিত আবার অনেকে উনাকে ডনও বলে থাকেন । সবার শুরুতে জানা যাক উনার নামের সাথে ভাই এলো কোথেকে । এটা "ডন" জাতীয় ভাই নয়, আসলে উনি একজন বাহাইয়ান অর্থাৎ "বাহাই’ নামক সম্প্রদায় বা ধর্মের অনুসারী । সম্ভবত উনার পিতাও বাহাইয়ান ছিলেন । সেই থেকে নামের সাথে বাহাই যা ডাকতে ডাকতে সংক্ষেপে ভাই'তে পরিণত হয় । উনার ছেলেদের নামের সাথেও এই ভাই শব্দটি আছে । এখন কথা হচ্ছে - সালমান শাহের মৃত্যুর সাথে উনার সম্পর্ক কোথায় ? - এই আজিজ ভাই একজন বড়মাপের প্রযোজক ছিলেন যার ফলে সালমান শাহের পরিবারের সাথে তার সখ্যতা ছিল । জানা যায় - সালমান শাহ তার মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে এক পার্টিতে তার স্ত্রী সামিরাকে কিস করার জন্য এই আজিজ ভাইকে প্রকাশ্যে থাপ্পর মাড়েন । সেই পার্টিতে শাবনুরও তার মাসহ উপস্থিত ছিলেন । সালমান শাহর মৃত্যুর পর তাকে হত্যা করা হয়েছে এমন সন্দেহ যখন থেকে তৈরি হয় তখন থেকেই এই চড় মারার বিষয়টা মিডিয়ার সামনে চলে আসে । তাছাড়া সালমান শাহ এর মা নিলা চৌধুরি অভিযোগও করেছেন এই আজিজের লোকেরা সালমান হত্যাকাণ্ড বিচারের সময় তাকে এবং তার ছোটছেলেকে মারার চেষ্টা করেছিল যার ফলে তিনি নিরাপত্তার অভাবে লন্ডনে চলে যান ।
সালমান হত্যা মামলায় তাকে দুবার গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে আমার মনে পরে তবে দুবারই হত্যার উপযুক্ত কোন প্রমাণ না পাওয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় । সালমান ভক্তদের মতে, মিডিয়ার পিড়াপিড়িতে সবই লোক দেখানো ব্যাপার সেপার - আজিজ সব কিছু আগে থেকেই ঠিকঠাক করে রেখেছিলেন । তবে এই আজিজ ব্যতিতও সালমানের আরও শত্রু অবশ্য ছিল । একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ফিল্ম না করায় তাকে হুমকি দেয়া হয় যা নিয়ে মৃত্যুর আগে তিনি প্রেস কনফারেন্সও করেন । সামিরার পরিবারের সাথেও সালমানের দ্বন্দ্ব ছিল । এমনটাও অনেকে ধারনা করে থাকেন যে - যদি সালমানের মৃত্যু হত্যাকাণ্ড হয়েও থাকে এমনও হতে পারে যে এটা তার সকল শত্রুর মিলিত পরিকল্পনা । সালমান শাহ হত্যার জন্য আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে সবচেয়ে বেশি কেন সন্দেহ করা হয় - কারণ সালমান শাহের জনপ্রিয়তা এতটা তুঙ্গে ছিল যে আজিজ মোহাম্মদের মতন লোক ছাড়া আর কারও পক্ষে তাকে হত্যা করার কথা ভাবাও হয়ত সম্ভব ছিল না , কিংবা তাকে হত্যা করে পাড় পাবার নিশ্চয়তাও কারও থাকার কথা নয় ।
এই আজিজ মুহাম্মদ ভাই স্বপরিবারে এখন ব্যাঙ্ককে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। সাম্প্রতিক এই ছবিগুলো দেখে বোঝাই যাচ্ছে বেশ ফুর্তিতে আছেন তিনি । উল্লেখ্য সালমান শাহ হত্যার প্রায় সকল আসামীই বিদেশে সেটেল হয়ে গিয়েছেন । সালমানের মৃত্যুর পর তারা একে একে বিদেশে সেটেল হতে শুরু করেন । এমনকি তার স্ত্রী সামিরাও এখন থাইল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন । হত্যা-মামলা থেকে বাঁচতে উনারা গা ঢাকা দেননিতো আবার ?? কাল সালমান হত্যার তদন্তপ্রাপ্ত পিবিআই অফিসারের এক সাক্ষাতকারে দেখতে পেলাম - তিনিও এই বিষয়টিকে সন্দেহজনকভাবে দেখছেন ।
এই আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বিরুদ্ধে একজন পত্রিকা সম্পাদককে শ্বাসরোধ করে হত্যা এবং তারপর তার মৃত্যুকে হার্ট অ্যাটাক বলে চালিয়ে দেয়ার অভিযোগ আছে । এরপর তার ১৪-১৫ বছরের কন্যাকে উঠিয়ে নেয়ার অভিযোগও আছে । আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের পরিবারও বাংলাদেশের স্বনামধন্য ধনী পরিবার । তার পরিবারের অনেকের বিরুদ্ধেও ক্রাইমের অভিযোগ আছে । বেশ কয়েকবছর আগে উনারই আপন ভাগিনা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইয়াবা গডফাদার হিসাবে ধরা পড়েন এবং ৯০ বছরের সাজা পান - যিনি এখন জেলে আছেন । অভিনেত্রী দিতির স্বামী এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা সোহেল চৌধুরীকে ঢাকা ক্লাবে দিনেদুপুরে গুলি করে হত্যা করা হয় যা উনার ভাইয়ের প্রত্যক্ষ পরিকল্পনা ও উপস্থিতিতে হয়েছে বলে শুনেছি। জানা যায়, এই হত্যার মূলে ছিল তখনকার রমরমা ডিশ ব্যবসা যা সোহেল চৌধুরীর পরিবারের এক চেটিয়া অধীনে ছিল - যা আজিজের পরিবার দখল করে নিতে চেয়েছিল ।
ছবিঃ এনার্জি প্লাস বিস্কুটের দ্বিতীয় প্রজন্ম
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:৫৮