বন্ধুরা, আপনারা এখন আছেন আমার সাথে আমি আরজে সাকিব। সময়টা এখন রাত ১১ বেজে ১০ মিনিট। আপনাদের অনুমতি নিয়েই আমি এখন একটা ফোনে যাচ্ছি...
-হ্যালো সাকিব, আমি শৈলি বলছি সিলেট থেকে।
: হাই শৈলি! কেমন আছো?
-ভাল নেই।
: আকাশে এত সুন্দর চাঁদ উঠেছে...আর তোমার মন ভাল নেই! কেন শৈলি কেন তোমার মন খারাপ?
-আমার বয়ফ্রেন্ড শাকিল কয়েকদিন ধরেই আমার সাথে খুব মিসবিহেভ করছিল। আমার ইউনিভার্সিটির ছেলে ফ্রেন্ড যারা আছে, তাদের সাথে তো ও আমাকে কথাই বলতে দিত না। ১ সপ্তাহ আগে আমার সাথে ওর এসব বিষয় নিয়ে অনেক ঝগড়া হয়। তখন ও আমার গায়ে হাত পর্যন্ত তুলেছে। সে স্যরি বলার জন্য আমাকে একবারও ফোন দেয়নি। আমিও যোগাযোগ করিনি। জানিনা ও আমাকে ভালবাসে কিনা। কিন্তু আমি কি করব? আমি তো ওকে অনেক ভালবাসি।
:শৈলি শুরুতেই আমি তোমাকে বলবো, এটাকে ভালোবাসা বলেনা। কারণ ভালোবাসা সন্মানের আরেকটা রূপ। আমি বুঝতে পারছি শৈলি, তুমি এগুলো সহ্য করেছো কারণ তুমি তাকে অনেক ভালোবাসো। বাট ইউ নো হোয়াট শৈলি, ও তোমাকে তোমার প্রোপার্টির মত ইউজ করছে। আমি আমার রেডিওর সব নারী শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে এটাই বলবো যে, প্লিজ প্লিজ প্লিজ ভেঙ্গে পড়বেন না। কোন পুরুষেরই অধিকার নেই যে সে তার সেল্ফ রেস্পেক্টের সাথে খেলবে এবং পুরুষ শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে বলছি, গায়ে পায়ে বড় হলেই কেউ আসল পুরুষ হয় নারে ভাই। জেন্টেলনেস-পোলাইটনেস-রেস্পেক্ট এর দ্বারাই আসল পুরুষ হয়।
শৈলি তোমাকে আরো বলছি, কোন নারীই রিলেশনশিপের নামে সাফারিং ডেজার্ভ করেনা। সো আমি তোমাকে এটাই বলবো যে, জাস্ট লিভ হিম। ওয়েল, থ্যাংকস ফর কলিং এন্ড ইউ টেইক কেয়ার।
সানজানা রেডিওতে স্বামী সাকিবের কথা শোনে আর ভাবে, ইশ! বাবা-মা যদি কখনো সাকিবের এই সফট সাইডটা জানতে পারত!
মনে পড়ে যায় সানজানার পুরানো ঘটনা। বিয়ের সময় সানজানার বাবা মা কেউই রাজি ছিল না। সানজানা ওর বাবা মায়ের খুবই আদরের সন্তান।
সানজানার বাবা ছিল একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরীজীবী। বাবার সন্মান, সানজানার মিষ্টি চেহারা-আচার ব্যবহার, একাডেমিক পড়ালেখা সব মিলিয়ে ওর অনেক ভাল বিয়ের প্রোপোজাল আসত।
সাকিবের সাথে ওর সম্পর্ক জানার পরে তো একটা বেসরকারি বিমান সংস্থার পাইলটের সাথে ওর প্রায়ই বিয়ে হয়ে যাচ্ছিলো। বিয়ের কয়েক দিন আগে ওই পাইলটের সাথে দেখা করে সানজানা তার রিলেশনের কথা জানায় এবং রিকোয়েস্ট করে বিয়েটা যেন ভেঙ্গে দেয়। লোকটা বুদ্ধিমান। সে সানজানার কথা মতই কাজ করেছিল।
সাকিবকে বিয়ে করার আগে শেষবার সানজানার বাবা বলেছিল, অনেকবার মানা করেছি, এবারই শেষবার বলছি মা, তুই একটু ভেবে দেখ। ছেলেটা কি করে? রেডিওতে বসে সারাদিন বকবক করে। সারাদিন বসে বসে বকবক করলে সংসার হয়না মা। আর ঐ ছেলের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ডই বা কি! তুই ওকে কতদিন জিনিস? ৬ মাস-ও না! তুই ওকে বিয়ে করলে ভাল থাকবি না মা। আমরা তোকে যেভাবে বড় করেছি, তোর চিন্তাধারা-মূল্যবোধ কোনোটির সাথেই ওর মিলবে না।
সানজানা চিৎকার করে প্রতিবাদ করে বলেছিল, আর ওই পাইলট, বুয়েটের টিচার ওদের সাথে যে আমার মিলবে তুমি জানলে কিভাবে বাবা? তাদেরকে তো আমি চিনিও না। তোমরা অচেনা অজানা একজন মানুষের সাথে বিয়ে দিলে আমি খুব হ্যাপি হবো সেটারও গ্যারান্টি কি?
সানজানার বাবা অন্য বাবাদের মত না। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে সে তার বন্ধুর ছেলে এক পাইলটের সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিল সাকিবের সাথে সম্পর্ক জানার পর। এটাও বুঝেছিল বিয়ে ভাঙ্গার জন্য সানজানার হাত ছিল। কিন্তু বুঝতে পেরেও চুপ ছিল। ও রেগে যাওয়া সত্ত্বেও মাথায় হাত বুলিয়ে ওর বাবা বলেছিল, তুই এখন বুঝতে পারছিস না মা। কিন্তু একদিন আমার কথাগুলোই মনে করবি। তোর অনিচ্ছায় আমি তোকে বিয়ে দেবো না। কিন্তু তুই এই ছেলেটাকে বিয়ে করার আগে সময় নে।
মায়েরও একই কথা, সাকিব তোর জন্য একেবারেই উপযুক্ত না।
সানজানা মাকেও উত্তর দিয়েছিল, সাকিব আমাকে ভালোবাসে আর ও আমাকে ভালো রাখার জন্য সবকিছু করবে। তোমরা অযথাই আমাকে কষ্ট দিচ্ছো আর নিজেরাও কষ্ট পাচ্ছো।
সানজানার বাবা বলেছিল, তোকে কষ্ট দেওয়ার জন্য না, আমরা তোর কথা ভাবি বলেই বলছি। তুই যা চাস তাই হবে কিন্তু কিছুদিন সময় নে। ছেলেটাকে ভাল করে জেনে বুঝে বিয়ে কর।
সানজানার বাবা মায়ের যুক্তি অর্থহীন মনে হয়েছিল। কিন্তু তাও সে বাবার কথা মত সময় নিতে চেয়েছিল আরো কিছুদিন। কিন্তু নিতে পারেনি। সাকিব ওকে এত প্রেশার দেয় যে একদিন ওরা কোর্ট ম্যারেজ করে ফেলে। সানজানা জানত, বাবা মা খুব কষ্ট পাবে। কিন্তু সাকিবকেও ছাড়তে পারছিল না।
সাকিব ইমোশনাল হয়ে বলত, আমি বোধহয় তোমাকে হারিয়ে ফেলবো সানজানা...
সানজানার সাথে ওর বাবা মায়ের তারপর থেকে যোগাযোগ নেই। সানজানা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তবে আজ ওর জন্য একটা বিশেষ দিন। ওর খুব ভালো একটা জব হয়েছে একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে। এই চাকরির জন্য ওকে যে কত কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল! এমবিএ শেষ হবার পর ওর এই কোম্পানি থেকে ডাক পড়লো টেস্টের জন্য। তাও যেমন তেমন পোস্ট না। ম্যানেজমেন্ট এসোসিয়েট! মাত্র ১ ঘণ্টার টেস্ট ছিল। ইন্টারভিউয়ার ছিল চারজন। ও এত নার্ভাস ছিল! এক্সেলে এক্সপার্ট হওয়া সত্ত্বেও সানজানার হাত কাঁপছিল। সবকিছু নতুন মনে হচ্ছিল। ৩০ মিনিটই লেগে গেল ক্যালকুলেশনের জন্য। তারপর ১৭ মিনিট লেগে গেল পাওয়ার পয়েন্ট স্লাইড প্রিপেয়ার করতে। তারপর ১৩ মিনিট ধরে প্রেজেন্ট করলো পুরো এসাইনমেন্টটা।
সাকিব ডোর বেল বাজাচ্ছিল। সানজানা দরজা খুললেই ও অবাক, কি ব্যাপার এত সেজেছো যে?
সানজানা হাসতে থাকলো।
ভিতরে ডাইনিং এ ঢুকে আরো অবাক! সানজানা ক্যান্ডেল নাইট ডিনারের আয়োজন করেছে। নিজ হাতে কেক বানিয়েছে। সাকিবের প্রিয় মাটন বিরিয়ানি রান্না করেছে। এসব দেখে সাকিব জিজ্ঞেস করল, কি ব্যাপার? আজ কি কোন স্পেশাল ডে?
সানজানা তখন ওকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল, সাকিব আমার জব হয়েছে।
সাকিব জিজ্ঞেস করে, কি জব? কি করবা তুমি?
সানজানা বলে, একটা মাল্টিন্যাশনালে, ম্যানেজমেন্ট এসোসিয়েট! সাকিব আজকে আমি অনেক খুশি। আমরা এখন সবকিছু করতে পারবো যেভাবে প্ল্যান করেছিলাম। একটা ছোট্ট বাসা আর ছোট্ট একটা গাড়ি...
সাকিবের ভ্রু কুচকিয়ে যায়। সে খুবই বিরক্তি নিয়ে বলে, তো তোমার কি মনেহয় আমার একার ইনকাম করা টাকাতে এইসব জিনিস আমি তোমাকে দিতে পারতাম না?
সানজানা বলে, না সাকিব। তুমি ভুল বুঝছো। আমি বলছি যে আমিও এখন থেকে যেহেতু কাজ করবো তাই এগুলো করা আমাদের জন্য আরো সহজ হয়ে যাবে।
সাকিব বলল, ও তাই না?
রাগ করে একটা গ্লাস ভেঙ্গে ফেলে সাকিব। সানজানা হতবাক হয়ে যায়।
তারপর সোজা বেডরুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। সানজানা খুবই অসহায় বোধ করে। সে দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে কাকুতিমিনতি করতে থাকে সাকিবের কাছে।
-সাকিব প্লিজ দরজা খোল। তুমি যা বলবে তাই হবে। তুমি না চাইলে জব আমি করবো না। আমি তোমার জন্য সব কিছু ছেড়ে এসেছি। তুমি প্লিজ এমন করো না...
(চলবে)
এটা আমার জীবনে লেখা দ্বিতীয় গল্প। আগেরটা অন্য নিকে পোস্ট করা। লজ্জা লাগে, কাঁচা হাত তো...

(মডুদের ধন্যবাদ আমাদেরকে কপিপেস্ট করার সুযোগ সুবিধা দিয়ে ব্লগিংটাকে আনন্দময় করে তোলার জন্য আর দুঃখিত তখন অযথাই ধৈর্য না ধরে মাথা গরম করে মডু ভাইয়া আপুদের দৌড়ের উপর রেখেছিলাম

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১:১৯