গল্পঃ-ফেরা -এর আগের পর্ব দেখুন
দিনটি রবিবার।সারা রাতের ভ্যাপসা গরমের পর গ্রামীণ জনপদের ভোরবেলার সূর্য্যটা তখনও পূর্ব আকাশে মেঘের আড়ালে ঘোমটা মুড়ে লুকিয়ে আছে।ঘন কালো মেঘের পেট চিড়ে মাঝে মাঝেই আগুনের ফুলকি চারদিকে ছড়িয়ে বিকট শব্দে জানান দিচ্ছে ঝড় হবে।এবাড়ী ওবাড়ীর জেগে উঠা হাতগুলি ঘরের খোলা জানালাগুলি ঝপাট-ঝপাট শব্দ তুলে বন্ধ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
ঝড় হ’ল না কিন্তু প্রায় ঘন্টাব্যাপী ভারী বর্ষণ শেষে আকাশ পরিস্কার হয়ে গেল।
সকালের সূর্য্যের চিকচিকে আলোয় কর্মব্যস্ত লোকগুলি যে যার কাজে উদ্যত।হঠাৎই গ্রামের পিচ ঢালা রাস্তা দিয়ে এক খানা মাইক্রো এপাশ ওপাশ দু’টো চক্কর দিল।গাড়ীতে থাকা ওয়্যারলেছ সেটটি অনবরত বকবক করে যাচ্ছে। দেখতে দেখতে আরও কয়েক খানা গাড়ী এসে মোড়ে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে যায়।রাস্তার লোকগুলি অনুচ্চ শব্দে একথা ওকথা বলাবলি করতে থাকে।একান ওকান করে তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো গ্রামে। কিছুক্ষণ পর মিডিয়ার লোকজনে ঠাসা আরেকটি গাড়ী এসে দাঁড়ালে র্যা ব পুলিশ ও সাদা পোষাকের লোকগুলি পুরো পুঁথিবাড়ী ঘিরে ফেলে।
সকালের ঠান্ডা হাওয়ায় পুঁথিবাড়ীর লোকেদের অনেকেই তখনও ঘুমের ঘোরে অচেতন।কাজে আসা লোক ও বাড়ীর হালে-চাকরদের হাকডাকে জেগে উঠে দেখে উঠানজুড়ে র্যা ব পুলিশে গিজগিজ করছে। এপ্রশ্ন ওপ্রশ্নে অনেকেই ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে পড়ে।
ঢাকা মুখি একমাত্র মহাসড়ক থেকে বেড়িয়ে থানা সদর মুখো রোডটি যে স্থানটিতে এসে মোড় নিয়েছে এখানেই দুঘলিকোল গ্রামের বকের ঠোটের মুখে পুঁথিবাড়ী। নতুন নয়, পুরনো জট ধরা দু’তলা বিশাল বিল্ডিং দু’পাশের রোড দু’টোকে পিছন দিয়ে পুরো বাড়ীটিকে আড়াল করে রেখেছে।এখনো ছোট-বড় সবাইকে নিয়ে যৌথ পরিবারের উদাহরণ হয়ে টিকে আছে বাড়ীটি। পিতা চন্দ্রলাল গত হয়েছেন আগেই।কিন্তু রেখে যাওয়া তিন সন্তান তাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে এখনও একই ছাদের নীচে সুখে-দু:খে এক সাথে আছে।
এ বাড়ীর মেয়ে সুশীলা দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যা পিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন মেধাস্থান দখল করে স্মাতকে ভর্তি হয় তখন সবার আনন্দের শেষ ছিল না। এ আনন্দের সিঁড়িটা তখনই তৈরী হয়ে গিয়েছিল যখন সুশীলা মাধ্যমিকে বোর্ড স্ট্যান্ড করে সবাইকে চমকে দিয়েছিল।কিন্তু এই সুশীলাই এখন পরিবারের দুঃখের কারন।
পুঁথিবাড়ীর সামনের পিচ ঢালা রাস্তাটি একটা মাঠ পেরিয়ে দক্ষিণে যেখানে গিয়ে শেষ হয়েছে সেখানে একটি পাড়ার মত,কিন্তু তা একটি গ্রাম।নাম বৈতলী। বৈতলী’র পর কেবলি মাঠকে মাঠ ফসলের ক্ষেত।পিচ ঢালা রাস্তা থেকে নেমেই একটা খাল। চৈত্র মাসেও লগি ডোবা জল থাকে।খাল পার হলেই একখানা খাড়া পথ দৃষ্টিকে টেনে নিয়ে যায় দূর, বহুদূর।এরপর আর শেষ দেখা যায় না।কিন্তু পিচ ঢালা রাস্তার মাথায় দাঁড়ালে দূরে কেবলি ঝোঁপের মত আবছা আবছা কিছু দেখা যায়।দৃষ্টির শেষ সীমানায় এটাই শেষ গ্রাম,আগৈলঝোর।নতুন নয়,সবচেয়ে পুরাতন গ্রাম।আগে যখন সড়ক-মহাসড়ক ছিল না,বর্ষায় পদ্মা পাড় উপচিয়ে মহাসমুদ্রে রুপ নিত। তখন আগৈলঝোরকে এই মহাসমুদ্রের মাঝে এক বিন্দু দ্বীপের মত মনে হ’ত।
আগৈলঝোরার অধিকাংশই জেলে পরিবার। এমনই একটা পরিবারের কৃতি সন্তান মুনীর।পুরো নাম মুনীর হোসেন। গ্রামের এই প্রতিকূলতা বুঝে মুনীর হাইস্কুলের মেছটাকেই নিজের আবাস করে নিয়েছিল। লেখাপড়ার প্রতি অদম্য আগ্রহ তাকে গ্রাম ছাড়া করেছিল।
পুঁথিবাড়ীর একটা গৌরবময় ইতিহাস আছে। চন্দ্রলাল পালের দাদা মতিলাল পাল ছিলেন একজন শিক্ষানুরাগী মানুষ।সনদ বিদ্যায় বেশী এগুতে না পারলেও জ্ঞান পাটাতনে ছিলেন মস্তবড় পন্ডিত।প্রাইমারী পেরিয়ে হাইস্কুলের লাইব্রেরী মাড়ানোর সৌভাগ্য কখনও হয়নি। অথচ নিজের পুরো বাড়ীটিই করেছিলেন একটা মস্তবড় লাইব্রেরী।সংগ্রহশালায় এমন কোন গ্রন্থ ছিল না যা জ্ঞানানুরাগীদের বিমুখ করত।বিনা মূল্যে পড়ে তা থেকে যে কেউ অমূল্যের বিদ্যা অর্জন করতে পারত। দূর্লভ এই সংগ্রহশালা বাড়ীটিকে আস্তে আস্তে মানুষের কাছে পুঁথিবাড়ী নামে পরিচিত করে তোলে।
মুনীরের একটা সু-অভ্যেস জন্মে বটে। আর তা হ’ল প্রতিটা পাঠের হ্যান্ড নোট করা।মুনীরের পরীক্ষার খাতায় শিক্ষকেরা এমন সব তথ্য পেত যা পঠিত পুস্তকে পাওয়া যেত না।বা পাওয়া গেলেও তা থেকে এগুলো হ’ত অনেক পরিমার্জিত।মুনীর এসব পুঁথিবাড়ীর সঙগ্রহশালার পুস্তক থেকে বের করে নিজের হ্যান্ড নোটের সাথে উৎসসহ জুড়ে দিত।
সদরের হাইস্কুল থেকে পুঁথিবাড়ী বেশি দূরে নয়।তাছাড়া এ বাড়ীর মেয়ে সুশীলা মুনীরের সহপাঠী।আরও মিল দু’জনেই মেধাবী এবং নিরহংকারী।
পুঁথিবাড়ীর পরিচিতিটা ব্যাপকমাত্রায় হলেও জৌলুসটা আগের মত নেই।আর যে কারও প্রবেশ এখন অবারিতও নয়।কেননা অনেক সংগ্রহই বাড়ীর লোকেরাই খুঁজে পান না।তার আবার কিছুটা ইঁদুর আর তেলাপোকার উচ্ছে হয়ে গেছে।কিন্তু সুশীলা মুনীরের অনুসন্ধিৎসু চোখ নিজেদেরটা খুঁজে পেতে খুব বেশি কষ্ট পেত না।এর ফলও দাঁড়ায়।ক্লাস ডিঙিয়ে মাধ্যমিকেও দু’জন ভাল রেজাল্ট করে।রেজাল্ট এতটাই ভাল যে দু’জন স্কুলটাকে পুরো জেলায় পরিচিত করে তোলে। উচ্চ মাধ্যমিকেও একই ফল।দু’জন দুই কলেজের দুই শর্ষে ফুল। উচ্চ মাধ্যমিক পেরিয়ে সুশীলা জায়গা করে নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর মুনীর উত্তরের সেরা বিদ্যাপিঠ রাজশাহী মেডিকেলে।
মুসলমানের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও পুঁথিবাড়ীতে মুনীরের অবাধ যাতায়াত বিশেষত বাড়ীর কারও কাছে প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়নি।তাছাড়া এ বাড়ীর ছোট-বড় কারও মধ্যে ধর্মের ভেদাভেদে মানুষকে আলাদা করার মানুষিকতা নেই।বংশ পরস্পরায় মতিলাল পালের শিক্ষা সবার মধ্যে যেন রক্তের মত সষ্ণালন হচ্ছে।
পুঁথিবাড়ীতে মুনীরের অবাধ যাতায়াত বাড়ীর কারও কাছে প্রশ্ন হয়ে না দাঁড়ালেও গ্রামের কারও কারও চোখ অন্য কথা বলত।কিন্তু মুনীর নেহায়েতেই গরীব ঘরের সন্তান বলে এ কূটতা সহানুভূতির বৃত্ত ছিঁড়ে মুনীরের কাছে পৌছেনী।মাধ্যমিক পেরিয়ে দু’জন দু’কলেজে ভর্তি হলে সে দৃষ্টি অনেকটা মিইয়ে যায়।এক্ষণে দু’জন দু’বঙ্গের শিক্ষার্থী হওয়ায় বাঁকা চোখগুলি তা ভূলতেও বসেছে।তাছাড়া দু’জনের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রায় আড়াই বছর পার হচ্ছে।ক্ষণকাল বটে! কিন্তু দিব্য দৃষ্টিতে অনেক সময়।কারণ চর্মচোখের দিব্য দৃষ্টিকে সমাজ সংসার বেশি মানে কিনা তাই।
সুশীলা-মুনীর কে কখন গ্রামে আসে দু’জনের কেউ কারও খবর রাখে না।তার সুযোগও নেই।তবুও বাড়ীর পথেই সুশীলার বাড়ী।বাড়ী ফেরা বা যাওয়ার সময় মুনীর কখনও কখনও পুঁথিবাড়ীর ধূলি নিতে পারলেও সুশীলার সে সুযোগ হয় না।বর্তমান এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে দু’জনের ব্যক্তিগত নাম্বারের একজনেরটি আরেকজন জানে না।
আজ সকালের বাসেই সুশীলা বাড়ীর উদ্দেশ্যে চেপে বসেছিল।কিন্তু হঠাৎ মহাসড়কের তীব্র জ্যামে আটকে পড়ে সকালের বাস বাসস্ট্যান্ডে পৌছায় বিকেলে।বাস থেকে নেমেই দেখা মুনীরের সাথে।দুপুরের খাবার খেয়ে মুনীরও বাড়ীর বাসে চেপে বসেছিল।উত্তরের মহাসড়গুলো সব সময় জ্যামমুক্ত।মুনীরের বাস পৌছতে তাই বাড়তি সময় নেয়নি।
বাবা বণি লালের শরীরটা সপ্তাহ খানিক ভাল যাচ্ছে না।বয়সও হয়েছে।সাথে পাল্লা দিয়ে ভিড়ছে অসুখ বিসুখ।সকালে মায়ের সাথে কথা বলতে গিয়ে সুশীলা বাবার অসুখের কথা শুনেছে।শুনেই ব্যাগ পত্র গুছিয়ে রওয়া দিয়েছে। একেতো বাবার অসুখের কথা অন্যদিকে রাস্তায় বিরক্তিকর জ্যামের বিড়ম্বণা সুশীলার মনে একদিকে ক্লান্তি অন্য দিকে দুঃচিন্তা ভর করেছিল।কিন্তু গাড়ী থেকে নেমেই মুনীরের দেখা মিলে কোন্থেকে একটা নির্ভরতা এসে যেন সুশীলাকে নির্ভার করে দিল।সুশীলার ছোট ভাই বাসস্ট্যান্ডে নিতে এসে ছিল।কিন্তু তার কেন যেন মনে হচ্ছে মুনীরই তাকে এগুনোর জন্য বাসস্ট্যান্ডে দৌড়ে এসেছে।কেন হবে না? এই তো সেই মুনীর যে কত কঠিন পড়ার হ্যান্ড নোট করিয়ে দিয়ে সুশীলাকে আজকের সুশীলা হতে সাহায্য করেছে।এমন পরোপকারী বন্ধুর হাত ধরে তো নির্ভয়ে অথৈ সমুদ্রেও পথ চলা যায়।মুনীরকে সাথে নিয়ে সুশীলা একখানা সিএনজিতে চেপে বাড়ীর দিকে রওনা দেয়।বাসস্ট্যান্ডের বিকেল বেলার আড়ক্ত চোখগুলি কেবল চেয়ে চেয়ে দেখে।কারও প্রশ্ন,কারও কৌতূহল বাড়ন্ত উচ্ছেপনায় কেবলি কানে কানে ঘুরপাক খায়।
বণি লালের অসুখটা বার্ধক্যের নয় রীতিমত জ্বর।হাতুরে ডাক্টারের ঔষুধে গা ঘেমে জ্বর ছেড়ে গেলেও কিছুক্ষণ পর কাঁপুনী দিয়ে আবার আসছে।মুনীরের এখনও ডাক্টার হয়ে উঠা হয়নি।কিন্তু কিছুটা শেখা হয়ে গেছে।ব্যাগে সরঞ্জামাদী সব সময় থাকে।বের করে লেগে যায় ডাক্টারীতে।মোবাইলে সিনিয়র ভাই ও স্যারদের সাথে আলোচনা করে কয়েকটি ঔষুধ লিখে দিয়ে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েও সুশীলার অনুরোধে ক্ষ্যান্ত দেয়।পুঁথিবাড়ীর মোড় থেকে আগৈলঝোর দশ কিলো পথ।মুনীরের বাবা-মার সাথে ফোনে কথা বলে সুশীলা মুনীরকে রাতটুকু পুঁথিবাড়ীতে রাখার অনুমতি পেয়ে যায়। এই নির্জন রাস্তায় মুনীরের বাড়ী পৌছতে কম করে হলেও আটটা বাজত। বিষয়টি মাথায় নিয়ে সুশীলা সহজেই অনুমতিটা আদায় করে নেয়।তাছাড়া অসুস্থ বাবার পাশে এমন বন্ধুর উপস্থিতির মূল্যটা কারও বোঝার বাকী থাকার কথা নয়।
মুনীরের লেখা ঔষুধ কিনতে সদরের সবচেয়ে বড় দোকানটিতে যেতে হ’ল।সাথে মুনীরও ছিল।এজন্য নির্দিষ্ট ঔষধ পেতে একটু ঘুরতে হলেও খুব বেশি বেগ পেতে হ’ল না।ঔষধ খাওয়ানোর ঠিক আড়াই ঘন্টা পর রাত বারোটার দিকে বণি লালের জ্বর কাঁপুনি দিয়ে ছেড়ে গেল। সেই গেল আর এল না।বাড়ী জুড়ে মুনীরের ডাক্টারী বিদ্যার ধন্যি পড়ে গেল।
তিন দিন পর বণি লালের ঔষধের কোর্স শেষ হয়ে গেল।জ্বর গেছে দুদিন আগেই।বয়স হয়েছে ঠিকই,কিন্তু খেটে খাওয়া শরীরে তা পাত্তা পায় না।কয়েকদিন জ্বরে শুয়ে থেকে মনে হয়েছে কয়েক যুগ যেন দুনিয়াটাকে দেখা হয় না।যেদিন জ্বর গেছে পরদিন থেকেই বাড়ীর গাভীর তরতাজা দুধে শরীরটাতে বল আসতে শুরু করেছে।আজ পুরো সুস্থ মানুষের মত সকাল সকাল স্নান সেরে ধুতি-পাজ্ঞাবী পড়ে বাড়ীর সামনের চায়ের দোকানে চা খেতে বসেছিলেন।ঠিক এমনি সময় মোড় ঘুরতে বৈতলীমুখী একখানা অটোর সাথে সদরের দিক থেকে আসা বাসস্ট্যান্ডমুখী আরেকখানা অটোর সংঘর্ষ হয়।যাত্রীরা রাস্তায় ছিটকে পড়ে কাতরাতে থাকে।এদের একজনের দিকে তাকিয়েই বণি লাল চমকে উঠে। একি, এত মুনীর!
দু’একজন ধরতেই মুনীর একজনের কাঁধে ভর করে উঠে দাঁড়ায়।পিচ ঢালা রাস্তায় বাঁ পাটা ছিলে গেছে।কাঁধের ব্যাগ থেকে ফাস্ট এইডের বক্রটা বের করে রাস্তার একদিকে সরে নিজেই নিজের কাজটি কিছুটা সেরে নিল।
মুনীর হেঁটেই বণি লালের পিছু পিছু পুঁথিবাড়ী ঢুকল।মুনীরের এ অবস্থা দেখে বাড়ীর অন্য সবাই ছুটে আসে।মুনীর তেমন কিছু হয়নি বলে সবাইকে আশ্বস্থ করে।পরে জানা গেল সে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিল।কিন্তু বাসস্ট্যান্ডে পৌছে জানতে পারে সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটো ছাত্র সংগঠনের মধ্যে গুলাগুলিতে একজন ছাত্রের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজশাহী-নাটোর রোডের সব গাড়ী বন্ধ হয়ে গেছে।অগত্যা সে বাড়ী ফিরে যাচ্ছিল।কিছক্ষণ পর রাজশাহীর ঘটনা টিভিতে সব কটি চ্যানেলে ফলাও করে প্রচার হতে থাকে।
বাড়ীর সবাই ধাতস্থ হলে মুনীর কাগজে কয়েকটা ঔষধ লিখে বাড়ীর কাউকে দিয়ে দোকান থেকে এনে নিয়েছিল।কিন্তু কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল তা ছেয়াল নেই।কারও স্পর্শে ঘুম ভেঙে দেখে বাবার পাশ ঘেঁষে সুশীলা মুনীরের মাথার কাছে বসে আছে।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে চারটা বাজে। উঠে পাটা মাটি স্পর্শ করতেই ব্যথায় ককিয়ে ওঠে। বণি লাল কড়া গলায় জানান দেয় মুনীরের আজ বাড়ী যাওয়া হবে না।অগত্যা মুনীর মা-বাবাকে চিন্তা মুক্ত রাখতে এ বন্দিত্বের কথা বাড়ীতে জানিয়ে অনুমতি নিয়ে নেয়।
বিকেল বেলা একটা লাঠিতে ভর দিয়ে মুনীর সুশীলার সাথে সামনের পুকুর পাড়টা ঘুরে ঘুরে দেখে।সন্ধ্যায় অনেক কষ্টে পা টেনে টেনে ছাদে উঠে অনেকটা রাত পর্যন্ত থাকে।পরে সুশীলাই গিয়ে নামিয়ে আনে।রাতে একটু আগে আগেই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে মুনীর।কিন্তু সকাল বেলা বিছানায় মুনীরকে পাওয়া যায় না।ব্যাগপত্র সব আছে মুনীর নেই।বাড়ী আত্বীয় স্বজন সবার কাছে খোঁজ নেয়া হয়।কোথাও নেই।
তিনদিন পর র্যা ব-পুলিশ কোন এক তথ্যের ভিত্তিতে পুরো পঁথিবাড়ী তল্লাশী করছে কেউ জানে না।তবে ঘন্টাব্যাপি তল্লাশী শেষে যে তথ্য বেরিয়ে এল তা রীতিমত পিলে চমকানোর মত।পুঁথিবাড়ীর ছাদে চিলে কোঠার ভাঁজে মুনীরের রক্তমাখা পরনের পোষাক পাওয়া গেছে। এটা পড়েই সে ঘুমোতে গিয়েছিল এটাও জানা গেল।এরই মধ্যে এলাকায় একটা খবর কলেরার মত ছড়িয়ে পড়েছে -”সুশীলা-মুনীর দু’জন দুজনকে ভালবাসত।কিন্তু এ অসম ভালবাসা পুঁথিবাড়ীর লোকেরা মেনে নিতে পারেনি।তাই ওরাই মুনীরকে মেরে লাশ গুম করে ফেলেছে।”এখন মুনীরের রক্তমাখা পোষাক সেই বক্তব্যকেই জোড়ালো করে তুলল।
(চলবে)