নাস্তিক আর অধার্মিক-র মধ্যে অনেক তফাত। নাস্তিকেরা Supreme Authority অর্থাৎ ঈশ্বর-ভগবনে বিশ্বাস করেনা। কিন্তু যারা ধর্ম মানেনা তাদের কথা আলাদা। তারা সুপ্রিম অথোরিটি বিলিভ করে। কিন্তু কোন ধর্ম মানে না। তাদের মুল কথা হচ্ছে,"সৃষ্টিকর্তা শুধু মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আর ধর্ম মানুষের সৃষ্টি।" আমি নিজে একজন মুসলমান ঘরে জন্মগ্রহনকারী আস্তিক। তাই স্বাভাবিকভাবেই নাস্তিকদের বিপক্ষে যাব। কিন্তু অধার্মিক নামধারী মানুষ গুলোর সাথে আমি দ্বিমত হতে পারছিনা।
আসলেই তো?!?!? সৃষ্টিকর্তা কি আসলেই ধর্ম নামক কোন কিছু সৃষ্টি করেছিলেন?!?!? নাকি মানুষ ই তার লাভের জন্য এত এত ধর্মের সৃষ্টি করেছে?!?!?
পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বে মোট ধর্মের সংখ্যা ৪,৩০০।এইসব ধর্মকে আবার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরিতে ফেলানো হয়।বিস্তারিত বলি একটু।
সাধারণত তিনভাবে ধর্মের শ্রেণীবিভাগ করা হয়।
উৎপত্তি অনুযায়ী, সুপ্রিম অথোরিটিতে বিশ্বাসনুযায়ী, মৃত্যু পরবর্তী জীবনের ধারণা অনুযায়ী।
উৎপত্তি অনুযায়ী ধর্মকে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। ১/প্রাগৈতিহাসিক কালের সর্বপ্রাণবাদী
২/প্রাচীন কালের বহুশ্বরবাদী
৩/দীর্ঘস্থায়ী কালের আদি রুপকীয় ধর্ম
৪/ভিন্নমতাবলম্বী কালের বৈকল্পিক ধর্ম।
সৃষ্টিকর্তার প্রকৃতি ও অস্তিত্বের উপর ভিত্তি করে ২টি ভাগ->ঈশ্বরবাদী ও অদৈতবাদী। ঈশ্বরবাদী ধর্মে সরাসরি ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়। এইখানে আবার আরো ২টি ভাগ আছে->একেশ্বরবাদ ও বহুশ্বরবাদ। অদৈতবাদে ঈশ্বরের সরাসরি অস্তিত্ব বিশ্বাস করা হয় না। এখানে ঈশ্বরকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডজুড়ে ছড়িয়ে থাকা শক্তি হিসেবে কল্পনা করা হয়।
মানুষের মৃত্যুর উপর ভিত্তি করে আবার আরো ৪টি ভাগে ভাগ করা হয় ধর্মকে।
১/Judged:মৃত্যুর পর শেষ বিচারে বিশ্বাসী
২/Rebirth:পুর্ণজন্মে বিশ্বাসী
৩/Death:শেষ পরিণতি মৃত্যুতে বিশ্বাসী
৪/Revert:পুর্বাকারে ফিরে যাওয়ায় বিশ্বাসী
এত গেলো ধর্মের বাহ্যিক প্রকারভেদ। এক ধর্মের ভিতর ও আবার ভিন্ন,ভিন্ন প্রকারভেদ আছে।
হিন্দু ধর্ম দিয়েই শুরু করি। হিন্দু ধর্মের ৬টি দর্শন আছে-> লৌকিক, বৈদিক, বৈদান্তিক, যৌগিক, ধার্মিক, ভক্তিবাদ। প্রধান বিভাগ গুলো হল বৈষ্ণবধর্ম, শৈবধর্ম, স্মার্তবাদ ও শাক্তধর্ম। এছাড়া ও একাধিক ছোটো বিভাগ বা উপবিভাগ লক্ষিত হয়, যাদের অনেকগুলিই পরস্পরের সঙ্গে অংশত আবৃত। তারপর বর্ণের ক্ষেত্রে আসি।এইখানে আবার চার ভাগে বিভক্ত-> - ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র।
বৌদ্ধ ধর্ম দুটি প্রধান মতবাদে বিভক্ত। প্রধান অংশটি হচ্ছে হীনযান বা থেরবাদ (সংস্কৃত: স্থবিরবাদ)। দ্বিতীয়টি মহাযান নামে পরিচিত। বজ্রযান বা তান্ত্রিক মতবাদটি মহাযানের একটি অংশ।
খ্রিষ্টান ধর্মের মধ্যে ও বারটি প্রকারভেদ আছে -> ক্যাথলিক ও অর্থোডক্স,ননর্থোডক্স ইত্যাদি।
ইসলাম ধর্মের মধ্যে ও শ্রেণীবিভাগ কম না -> সুন্নি, শিয়া, ওয়াবী, খারিজি... সুন্নীদের মধ্যে আবার মাজহাব->হানাফি, মালিকি, শাফি, হানবালি।
সৃষ্টিকর্তা এত এত ধর্ম সৃষ্টি করেছেন?!?!?
রিয়েলি?!?!?
কেন?!?!?
আমরা যাতে ধর্ম নিয়ে একজন আরেকজনের সাথে মারামারি-কামড়াকামড়ি করতে পারি সেজন্য?!?!?
যত দিন যাচ্ছে আমরা আমাদের ইচ্ছামত,সুবিধামত নতুন নতুন ধর্ম বানিয়ে যাচ্ছি। ধর্মকে পুজি করে নিত্য-নতুন ব্যবসা শুরু করছি। এইসব দেখে যদি কেউ ধর্ম বিদ্ধেষী হয়ে উটে সত্যি কি তাকে খুব একটা দোষ দেওয়া যায়?!?!?
সত্যি বললে এখন অবস্থা অনেকটা গেছো দাদার এই পোস্টের মতন।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:২২