যখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়তাম তখন এক স্যার একবার বলেছিল"ছাত্রদের কাজ দুটি:পড়ালেখা আর রাজনীতি।"
মূলত স্যারের কথায় উৎসাহিত হয়েই রাজনীতিতে ডুকেছিলাম দেশের সেবা করব ভেবে।রাজনীতি করি শুনে তখন অনেককেই দেখতাম খারাপ চোখে তাকাত।কেন বুঝতাম না।
ইন্টার লেভেলে উটার পর নোংরা রাজনীতি টা ভাল ই বোঝা হয়ে গিয়েছিল।৯/১০এ মিছিল দেখলে দৌড়ে যেতাম স্লোগান দেওয়ার জন্য।আর এখন মিছিল দেখলে উলটা পথে হাটা ধরি।
গতবছর রোজায় সেই স্যারের সাথে দেখা হয়েছিল।সালাম ও হালচালের পর স্যারের সাথে শেয়ার করলাম ব্যাপারটা।স্যারের জবাব ছিল:"আমি তোমাদের রাজনীতি করতে বলেছি ঠিকই কিন্তু আমার সেই রাজনীতির অর্থ ছিল 'নীতির রাজা',আর তোমরা যা করেছ তা ছিল 'রাজার নীতি'।এই দুটোর মধ্য অনেক তফাত বাবা।রাজনীতি কিন্তু আমরা ও করেছি।আমার বাবা ও রাজনীতি করতেন।কিন্তু সেটা ছিল নীতির রাজা।আজ তার মধ্যে পচন ধরে গেছে।আগে রাজনীতি করত ক্লাসের প্রথম সারির মেধাবী ছাত্ররা,আর এখন করে ক্লাসের যে ছেলেগুলা লাস্টবেঞ্চে বসে গোলমাল পাকায় এবং গুরুদের সাথে বেয়াদবি করে সেই সকল তথাকথিত ছাত্র।" উল্লেখ্য যে,স্যার একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান,যদিও তার কোন সার্থিফিকেট/প্রমাণপত্র নেই, কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি।স্যার ওইদিন আরো অনেজ কথা বলেছিলেন।শিক্ষক মানুষ,বলতে,লেকচার দিতে পছন্দ করেন।সব হুবহু মনে নেই।সব কথা বুঝিও নি।যা বুঝেছিলাম তা তুলে ধরার চেস্টা থেকেই এই পোস্ট।
নীতির রাজা এবং রাজার নীতি আকাশ আর পাতাল তফাত।নীতির রাজা মানেই সেরা নীতি,উত্তম থেকে উত্তমোত্তর নীতি।আর রাজার নীতি তো দখল-হত্যার নীতি।যুদ্ধ করে নিজের জায়গা,ক্ষমতা কিভাবে বাড়াবে সেই চিন্তায় গড়া নীতির নাম রাজার নীতি। ২১শে ফেব্রুয়ারী,৬৬র ৬দফা,৬৯র গণঅভুত্থ্যান সবই ছাত্ররাজনীতির ফলাফল।বিশেষ করে এই ছাত্ররাজনীতির কারণেই আজ আমরা বাংলায় কথা বলছি,স্বাধীনতা অর্জন করেছি।আর আজ রাজনীতিতে পচন ধরে গেছে।উৎকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।আর সবচেয়ে বেশী দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে ছাত্ররাজনীতি।এতটাই যে আমরা বাকস্বাধীনতাটুকুও হারিয়ে ফেলতে বসেছি দুর্গন্ধে।
আমার সাথে আমার কিছু বন্ধু-সহপাঠি ছিল।তাদের ই একজন জিজ্ঞেস করেছিল যে "স্যার কাউকে না কাউকে তো এটা পরিশোধন করতে হবে।"
স্যারের জবাব ছিল-"তুমি কেন নও,তোমরা কেন নও?!!?তোমরা ও তো রাজনীতি তে ডুকেছিল।চলে আসলে কেন পরিশোধন না করে?!?!?
কেউ নিজেই দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে যাবে,কেউ দুর্গন্ধ সহ্য করতে না পেরে চলে আসবে।
এরকম চলতে থাকলে তোমাদের ওই 'কেউ না কেউ' কখনোই আসবেনা।"
ওইদিন আমরা ৫জন ছিলাম।পড়ালেখার বাংলাদেশের ৪প্রান্তে থাকি আমরা ৫জন।ঢাকা,চট্টগ্রাম,সিলেট,দিনাজপুর।শুধুমাত্র রোজার ঈদেই দেখা হয়।স্যার তখন বলেছিলেন:ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়।আর এই পথে শুরুতে একাই চলতে হয়।
স্যারের কথাটি আমরা সেই মুহুর্তে খুব আবেগ নিয়ে শুনেছিলাম।সাথে সাথে প্রতিজ্ঞা নিয়ে ফেলেছিলাম ৫জন যে আমরাই চেঞ্জ করব এই নোংরা রাজনীতিকে।
বলতে লজ্জাবোধ করি যে সবার আগে আমি ই পিছিয়ে এসেছিলাম।কারণ আমার কথা শোনার মত কাউকেই পাচ্ছিলাম না আমি।আর অনেস্টলি বললে সর্বদাই আমি রাজনীতি সম্পর্কে বিশেষভাবে অজ্ঞ।
পরবর্তীতে সবাই হাল ছেড়ে দিয়েছিল ১/২মাসের মধ্যে।
সবার ই এক কথা,"কেউ কথায় শুনতে চায়না,আমি একলা কি ** ছিড়ে উড়াই ফেলব?!?!?"
এক পার্টির মন্তব্য নিজের চরকায় তেল দাও,আরেক পার্টি পড়ালেখা করতে এসেছ পড়ালেখা কর,আরেক পার্টি তো রীতিমত আমাদের ই নোংরা রাজনীতিবিদ বানিয়ে দিল।
এখন আমাদের দৌড় শুধু স্বপ্ন দেখা পর্যন্ত।একদিন কেউ একজন আসবে,যে প্রচন্ড পরিমাণে বেপরোয়া ও নাছোড়বান্দা হবে,দরকার পড়লে জগতসংসারে নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে হলে ও সে দেশের পচে যাওয়া রাজনীতিকে ঠিক করে তুলবে,দেশকে সোনার বাংলায় রুপান্তরিত করবে।
কোন একদিন,কেউ না কেউ...
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৪:০১