আগে এই লিংকে ঢুকুন - আ‘লীগ কার্যালয়ে পুলিশের সাথে কিশোরীর বিয়ে!
"বিয়ের প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় কিশোরীকে পিটিয়ে বিয়ে করলেন পুলিশ। দিনাজপুর জেলা শহরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতার কার্যালয়ে বুধবার রাতে কোতোয়ালি থানার ওয়্যারলেস অপারেটর মোস্তফা কামালের সঙ্গে বিয়ে হয় ১৬ বছরের ওই কিশোরীর।"
এই লিংকের খবরে মেয়েটির নাম পেলাম না । বয়স পেলাম মাত্র ১৬ বছর । মেয়েটির অপরাধ কৈশোরের লাবণ্য মেয়েটির মুখে একটু একটু করে পরতে শুরু করেছে । আর বয়সের সাথে পাল্লা দিয়ে মেয়েটি রূপ-যৌবনে ভালোই বেড়েছে । এবার আসল ঘটনা বলি ।
দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ওয়্যারলেস অপারেটর মোঃ মোস্তফা কামালের ভালো লেগে যায় একদিন এই কিশোরীকে দেখে । ফলস্বরূপ মেয়েটিকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসেন আচমকা । ১৬ বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়েটির কাছে এই ব্যাপারে কোন উত্তরই নেই । মেয়েটি ভয়তে না করে দেয় প্রস্তাব । "মাছের রাজা ইলিশ, আর দেশের রাজা পুলিশ" । দেশের রাজার সাথে কি প্রজার বেয়াদবি চলে ? তাই তো মেয়েটিকে একদিন রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে জখম করেন বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিশ্বাস করুন, মাথায় রক্তাক্ত জখমসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাঠিপেটার আঘাত নিয়ে গত মঙ্গলবার দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয় মেয়েটি। সে খবরও সংবাদপত্রে আসে। এরপরও পুলিশ কর্তৃপক্ষ চুপ থেকে যায় বরাবরের মত ।
সবচেয়ে হাস্যকর লাগলো দিনাজপুর পুলিশের অন্য আরেকজন অফিসারের সাথে কথা বলে । এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম খালেকুজ্জামান দাবি করেন, "বিয়েতে পুলিশের কোনো ভূমিকা ছিল না । দুই পরিবারের অভিভাবকরা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে বিয়ে দিয়েছে।" ওই পুলিশ সদস্যকে আগেই প্রত্যাহার করা হয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, "ভিকটিমের পরিবার মামলা করলে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত ছিল।" তাছাড়া বাল্যবিবাহের এ ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করলে দিনাজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুর রহমান বলেন, “আগে খবর পেলে বাল্যবিবাহ বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া যেত। এখন যেহেতু বিয়ে হয়ে গেছে, করার আর কী আছে?” আচ্ছা, মনে একটা প্রশ্ন জাগে, নিজের মেয়ের সাথে এমন কিছু হলেও কি তারা শুধুমাত্র মামলা হওয়ার আশায় বসে থাকতেন নাকি মামলা ছাড়াই এ্যাকশনে যেতেন ?
হা হা হা, দেশ আর দেশ নাই রে পাগ্লা । সাধে কি মানুষ এই দেশ ছেড়ে পালাতে পারলে বাচে । আচ্ছা, এই ১৬ বছরের মেয়েটির জন্য কিছু করা যায় না ? আসুন না, এই মেয়েটির দুর্দশার খবরটি একটু ছড়িয়ে দেই । মেয়েটির বয়স তো মাত্র ১৬ । দেশের মানুষের গড় বয়স ৬০ ধরলেও মেয়েটি আরও ৪৪ বছর বাঁচবে । এই ৪৪ বছরে মেয়েটি কতবার যে ধর্ষিত হবে, তার কি ইয়ত্তা আছে ? আসুন না, মেয়েটিকে বাচাই । মেয়েটি যদি আমার বা আপনার মেয়ে বা বোন হতো, তাহলেও কি চুপ থাকতেন ? কিছু না পারেন, কমপক্ষে এই লেখাটি ফেসবুক বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে শেয়ার করে সকলকে জানিয়ে দিন ।
আচ্ছা, উপরের ছবিটা একবার দেখেন তো ? দেখেন তো, চিনেন কিনা ? না, চেনার কথা নয় । মেয়েটির নাম তনু । সোহাগী জাহান তনু । মেয়েটির খুন হয়েছে । তাও যেন তেন খুন না, ধর্ষণ করে খুন । ধস্তাধস্তি হয়েছিল, মেয়েটি বাঁচতেও চেয়েছিল যেমনটা মৃত্যুর আগে বাঁচতে চায় সবাই । মেয়েটিকে বাঁচতে দেওয়া হয়নি । তনুর মৃত্যুসম্পর্কিত ঘটনাটি সবচেয়ে বেশি সমালোচিত কারণ তনুর মৃত্যু হয়েছে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে । যেখানে প্রতি ৫ থেকে ১০ মিনিট পর সেনাবাহিনীর নিয়মিতভাবে টহল দেওয়া হয়, সেখানে । না, তাও বলছি না, এই ঘটনায় সেনাবাহিনীর কেউ জড়িত । কারণ তদন্তে এখনও এই ব্যাপারটি আসেনি মানে প্রমাণ হয়নি । তনুকে হত্যা করা হয় ২০শে মার্চ, ১০১৬ তে । প্রথম কয়েকদিন এই খবর বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে আসেনি । প্রথম এটা নিয়ে আন্দোলন শুরু করে কুমিল্লা তরুণ প্রজন্ম । এর কয়েকদিন পর যখন এই খবর সংবাদ মাধ্যমে আসে তখন এই খবর দ্রুত ছড়াতে শুরু করে । এক সময় দেশে "হট কেক" হয় বিষয়টি । ফলস্বরূপ, মন্ত্রীর আশ্বাস, তদন্ত শুরু ও এক মাস পরেও গাফেলতি, ২ বার করে কবর থেকে লাশ উঠিয়ে ময়নাতদন্ত, প্রথমে ধরসনের আলামত পাওয়া যায়নি আবার পরে নাকি পাওয়া যায়, একবার তো ভল্লুকের কথাও আসে, শেষে এখন ঘটনাটি শুধুই ইয়ার হোসেনের (তনুর বাবা) বিলীন স্মৃতি ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই । আমরা ভুলে গেছি তনু কে ।
তনুকে ভোলার জন্য বিশেষ মহল অনেক সাহায্য করেছে আমাদেরকে । তনুর তদন্ত চলাকালীন সময়েই সোহানকে অপহরণ, টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে তাসকিন ও আরাফাত সানিকে আইসিসি দ্বারা বহিস্কার ও এটা নিয়ে সৃষ্ট আন্দোলন, পরবর্তীতে ছাত্রলীগের নানান কু-কীর্তি, এর পরপরই নির্বাচন, আবার বিএনপির নানান কু-কীর্তির কথা বলে জনগণকে চিন্তায় ব্যস্ত রাখা, সুন্দরবনে আগুন লাগা ইত্যাদি কত ঘটনা ঘটে গেছে এর মধ্যে - দেখেন তো সত্যি আপনার মনে তনুর কোন কথা আদৌ অবশিষ্ট আছে কিনা ? এখন তো আমি বললাম বলে একটু মনে পড়লো, তাই না ? যাক বাদ দেন, আসুন তনুকে ভুলে যাই । ওরকম হাজারটা তনু মরে পচে গেছে কতশত কোণায় ।
আজ তনু, কাল ঐ কিশোরী, পরেরদিন হয়তো আপনার মেয়ে বা বোন, কে ভালো জানে !! ভালো করে খেয়াল করে দেখবেন, আমরা যেন আমাদের দেশের আইন-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত মানুষগুলোর কাছেই জিম্মি হয়ে পড়েছি । বাঁচতে চাইলে চিপাই না পালিয়ে একটু একটু করে গলা উঁচু করুন কমপক্ষে । কারণ কালকে এই ঘটনা যে আপনার সাথে বা আপনার খুব নিকটাত্মীয় কারও সাথে হবে না, তার গ্যারান্টি কি ?
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৬ সকাল ১০:২৮