.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক একদিন ঘুমালো দিনান্তে। ঘুম থেকে উঠে দেখে পৃথিবীটা হঠাৎ থেমে গেছে। থেমে গেছে মানে কোভিডের জন্য থেমে যায় নি। এক দুষ্টু বালকের খামখেয়ালিপনায় থেমে গেছে। আর থেমে গেছে ততটা পৃথিবী যতটা ওই বালকের অস্তিত্বের সাথে জড়িত ছিল তার একটা মূখ্য অংশ। সেই অংশটা হলো নিজেকে শাণিত করার জন্য, সকল অকল্যাণ থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য তার যে গুরুগৃহ, তা।
বালক দেখলো তার বিশ্ববিদ্যালয় থেমে গেছে, তার পাঠগ্রহণের পথ থেমে গেছে, গতি থেমে গেছে। থেমে গেছে মূলত তার জীবনের গতি। হয়তো সাময়িক। কিন্তু থেমে গেছে। থেমে গেছে অন্য এক বালকের বালকসুলভ আচরণে। অন্য বালক হচ্ছে সেই বালক যে পুকুরে ইট ছুঁড়ে মনের আনন্দে। কিন্তু তার অট্টহাসিসমেত ছুঁড়ে মারা ইট অন্য কারোর জীবনের প্রশ্ন। প্রশ্নটি কত গভীর ভয়াবহ একবার ভাবুন। প্রথম বালকের থেমে থাকা জীবনকে যাঁরা গতিদানে সচেষ্ট (শিক্ষক) তাদেরকে প্রশাসক বালক একা ইট ছুঁড়ে মারেন নি। মেরেছেন বলয় নিয়ে।
দ্বিতীয় বালক যে প্রথম বালকের জীবনের গতি পজ করে দিয়েছে তাকে আরেকটা চরিত্রের সাথে মিলানো যায়। ধরুন, কতগুলো মানুষ একজন বড়-বালকের নেতৃত্বে একটা পিকনিক করতে গেলো, যেটাকে আমরা বাংলায় বলি বনভোজন। সেখানে গিয়ে রান্না করে খেয়ে কিছুটা উচ্ছিষ্ট ফেলে এবং রান্নার সময়ে কিছুটা কাটা-ছাটা-বাছা ফেলে একটা অংশ নোংরা করে চলে গেলো। এই নোংরা উচ্ছিষ্ট কিংবা কাটা-ছাটা-বাছা ইত্যাদির মাঝে বনের কিছু প্রাণ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো। বনের যে সাধারণ প্রাণ যারা তাদের পৃথিবী হিসেবে বনটাকে দেখে তাদের পৃথিবীকে মানে তাদের জীবনকে ভয়ংকরভাবে বিনষ্ট করে দিয়ে পিকনিক পার্টি চলে গেলো।
একইভাবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় সর্বোচ্চ প্রশাসক বা উপাচার্য মহোদয় দুইটি কাজ করে যাচ্ছেন। এক. বালকের ইট ছুঁড়ে মারার মতো তার নিজের প্রয়োজনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জীবনকে ক্রমাগতভাবে ইষ্ট নিক্ষেপ করে যাচ্ছেন। দুই. বনের পরিবেশ নষ্ট করে পরিবেশবিরোধী কতিপয় পদার্থ উচ্ছিষ্ট হিসেবে ফেলে যাওয়ার মতো অপ্রয়োজনীয় এবং নিরর্থকভাবে কতগুলো নিয়ম চালু করতে চাচ্ছেন যা সম্পূর্ণভাবে অপ্রয়োজনীয়। শুধু তাই নয়, ভয়ংকর সত্য হচ্ছে সরাসরি বনকে না খেয়ে বনের স্বাভাবিকতাকে খেয়ে ফেলার নাম যেমন বনভোজন এবং স্বল্পতম সময় তার (বনভোজনকারী) আত্মার ইচ্ছাকে চরিতার্থ করতে এটা (বনভোজন) করে থাকে ও ক্ষণিক বাদে সে সেখান থেকে চলে যায়, তেমনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মহোদয়ও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এসেছেন এবং চলে যাবেন। বন-রক্ষা-কর্মকর্তা না হয়ে তিনি পরিচয় দিয়েছেন বনকে-ভোজন কর্মকর্তার এবং সেই বালকের-, যে বালক পুকুরের পানিতে ইট ছুঁড়ে মেরে অন্যের জীবন-মরণ প্রশ্ন তুলে আনে হাসতে হাসতে। তিনি সেই বালকের টুটি চেপে ধরে রাখতে চান যে বালক সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতো। তিনি সেই বালকের পৃথিবীকেই পজ করে রেখেছেন এবং রাখতে চান।
আজ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদিন। আমরা চাই সুন্দর পৃথিবী, আমরা চাই প্রথম বালকের স্বপ্নের পৃথিবী, আমরা চাই ইট ছুঁড়ে মারা-বিহীন বালকের পৃথিবী, আমরা চাই বনকে-ভোজন করা নয়, বনকে রক্ষা করা কর্মকর্তা। সুন্দর, সাবলীল পৃথিবীর স্বপ্ন দেখা আমি তো আরও বেশি চাই। কারণ, অন্যকে নিগ্রহ করার মানসিকতা মন থেকে মুছে ফেলতে পারলে কর্মকর্তা বনে যাবেন না ভোজনে, ইটও ছুঁড়বেন না। তখন পৃথিবী হবে সবুজ শ্যামল পৃথিবী। আর সবুজ মানেই ভালো, সেটা বাতি কিংবা পৃথিবী। আর সেটাই পজ থেকে প্লে হওয়ার মন্ত্র।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমরত্ব প্রত্যাশায় জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই।
শুভ জন্মদিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৬