(১)
কৈশোরে দুইটা জিনিশ আমার মনে চিন্তার খোরাক যুগিয়েছিল। একটা হচ্ছে ইরাক যুদ্ধ, অন্যটা হুমায়ূন আহমেদের বিবাহ বিচ্ছেদ। ইরাক যুদ্ধ নিয়ে বিস্তর কথা বলার সুযোগ ও ইচ্ছা থাকলেও আজ এ প্রসঙ্গ বাদ থাকবে। কারণ আজকের কথাগুলো যুদ্ধ নিয়ে নয়। হুমায়ূন আহমেদ গুলতেকিনের সাথে ৩০ বছর সংসার করে ২০০৩ সালে বিচ্ছেদ ঘটান। তারপর থেকেই তিনি একদল মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠেন। তারপর শাওনকে বিয়ে করে তিনি অনেকের চেখে হয়ে ওঠেন বড় অপরাধী। প্রথমেই বললাম এইটা আমার কিশেরকালের ঘটনা। সুতরাং বিষয়টা জানা থাকলেও ন্যায় অন্যায় বিচার করার ক্ষমতা তখন ছিলো না। তবে যারা হুমায়ূন আহমেদের এই ঘটনা জানতেন তারা সকলেই বিষয়টা নিন্দা করতেন, এমনকি হুমায়ূনকে ঘৃণার চোখে দেখতেন। এই বিষয়টা অল্পবিস্তর আমার মাঝেও প্রভাব রেখেছিল। আমিও কমবেশি হুমায়ূন আহমেদকে কটাক্ষ করে দু-চার কথা বলতাম। এই বলার ধরণ আরো তীব্র হলো যখন তাঁর "আজ রবিবার" নাটক দেখলাম। নাটক বহু পুরনো হলেও একটা সময় আমরা ইউটিউব নামক জিনিশটার জন্য পুরাতনকে স্মরণ করতে পারি। হুমায়ূন-কন্যা শীলা আহমেদ এবং শাওন (মেহের আফরোজ শাওন) দুই বোন হিশেবে অভিনয় করেছে এই নাটকে। পরে জানলাম তারা ছিল ভালো বান্ধবী। হুমায়ূন আহমেদের মতো একটা জ্ঞানী মানুষ কিভাবে মেয়ের বান্ধবীকে বিয়ে করে সেটাই ভেবে পেতাম না। হাবলঙের বাজার-সহ শাওনের আরো কিছু নাটক দেখেও খারাপ লাগতে শুরু করলো এই ভেবে- উনি একটা মুরুব্বি মানুষ অথচ বিয়ে করলেন হাটুর বয়সী একটা মেয়েকে। একটা বয়স পর্যন্ত এই বোধ জাগ্রত-ই থাকলো।
(২)
এই হুমায়ূন আহমেদের পর বিবাহ সংক্রান্ত বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে তথা মিডিয়ায় সবচে' বেশি আলোচিত জুটি হলো মালিক-সোনিয়া জুটি। সম্ভবত ২০১০ সাল। পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিক এবং ভারতীয় টেনিস তারকা সোনিয়া মির্জার বিয়ে নিয়া আমাদের দেশের মিডিয়া বিশেষ করে প্রিন্ট মিডিয়া যে আগ্রহ দেখিয়েছে তাও ছ্যাঁচড়ামির পর্যায়ে পড়ে। এইটাই তাদের দৌড়ের শেষ সীমানা ছিল না। তারপর একে একে কোহলি-আনুশকা, নিক-প্রিয়াংকা, কারিনা-, দীপিকা-র.সিং, সোনম-, প্রমুখ জুটির বিয়ে নিয়াও বাংলাদেশের মিডিয়াবাজরা ছ্যাঁচড়ামি করেছে। উপরে যাদের কথা উল্লেখ করলাম তাদের ভাগ্য ভালো যে কারোরই বিবাহবিচ্ছেদ হয় নাই। আমাদের পাতি সাংবাদিকরা তাইলে এদের ল্যাংটা করে ছেড়ে দিতো। উঠতি বয়সে এবং তার পরেও সবচে' বেশি রোমাঞ্চকর পেশা হিশেবে মনে হতো সাংবাদিকতা'কে। ভাবতাম সত্যিকারের চিন্তাশীল, যুক্তিবাদী ও সৃজনশীল মানুষেরাই সাংবাদিক হয়ে থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে ভার্সিটিতে গিয়ে দেখলাম আবেগের বশে মানুষজন সাংবাদিক হইতেছে। কোন স্কেলেই এরা সাংবাদিক হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। আমার ভালো-পরিচিত এমন কোন সাংবাদিক দেখলাম না যারা সত্যিকারের সাংবাদিক হওয়ার যোগ্যতা রাখে। সম্ভবত প্রায় সবগুলো ভার্সিটির কালচারই এক। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বাকি সব সাংবাদিকই হুজুগে, সুযোগসন্ধানী, অপদার্থ, পদবীসর্বস্ব এবং অযোগ্য। ভালো সাংবাদিক যে কিছু নাই তা নয়। তথাপি এসব অযোগ্য সাংবাদিকরাই একজন সেলিব্রেটির বিয়ে নিয়ে ৫০ টি প্রতিবেদন ছাপায়। খুঁটিনাটি খুঁটতে খুঁটতে এরা পাত্রপাত্রীর আন্ডারগার্মেন্টসের সংগ্রহস্থান এমনকি এসবের সাইজ নিয়ে পর্যন্ত ফিচার লিখে। এইসব করে করে রুচিশীল পাঠকদের বিরক্ত করে তুলে। এই বিরক্তি কখনো কখনো যন্ত্রণার কারণ হয় ওঠে। এখানেই শেষ নয়। এদের মধ্যে যদি কারো বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে তবে সাংবাদিক সাহেবদের আর ঘুম থাকে না। এরা কেন বিচ্ছেদ হলো এই কথাটা এক হাজার ফর্মে জিজ্ঞেস করবে। এই কথাটা প্রমাণিত হবে অপূর্ব-নাজিয়া জুটির বিচ্ছেদের পর কারওয়ানবাজার ভিত্তিক একটি পত্রিকার কর্তৃক নেয়া নাট্যকার নাজিয়ার সাক্ষাতকার। ভাবতে পারেন ধান ভানতে বসে শিবের গীত গাইতেছি তো? না, এরকম না ব্যাপারটা। আমি এইটাই বলতে চাচ্ছি যে, এই মানের সাংবাদিকরাই কারোর সংসার ভাঙলে বিষয়টাকে রসিয় রসিয়ে শুভার্থীদের বিভ্রান্ত করেন। হুমায়ূন প্রসঙ্গেও এই কথা প্রযোজ্য, যা ২০০৩ পরবর্তী সময়ে শুরু হয়েছিল এবং এখনো এর রেশ আছে।
(৩)
হুমায়ূন আহমেদের পূর্বে এই বঙ্গমুলুকে কয়জন লোকের বিবাহবিচ্ছেদকে তাদের ভক্ত-মুরিদানগণ নাজায়েজ কাজ হিশাবে বিবেচনা করেছেন সেই কথা ফেসবুকের মতো তথ্য সহজলভ্য করার মতো জিনিশ না থাকায় জানা সহজ ব্যাপার ছিলো না। আমরা যারা ৯০ পরবর্তী সময়ে জন্মেছি, আমাদের জন্য আরো আগেই এই জানার ব্যাপারটা ছিল কঠিনতর। কিন্তু ফেসবুক জমানায় এই নাজায়েজ ফতোয়ার বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা বিস্তর। দেশীয়দের মধ্যে শাকিব-অপুর বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা পালে হাওয়া পেয়েছিল ভালোরকম। হাবিব-সুজানা জুটিও বেশ আলোচনায় ছিলো। এসব ক্ষেত্রে তৃতীয় একজনকে জড়িয়ে কথা বলার প্রবণতা আমাদের সাংবাদিক মুরুব্বীদের মধ্যে ভয়ানক রকম লক্ষণীয়। হাবিবের ক্ষেত্রে তানজিন তিশা নামের এক টিভি অভিনেত্রীকে থার্ড পারসন ধরা হলো।শাকিব-অপুর বেলায় টেনে আনা হলো সংবাদ পাঠিকা থেকে উঠতি অভিনেত্রী বনে যাওয়া বুবলি নামের নাদুসনুদুস সুন্দরী মহিলাকে। কিছুদিন আগে অভিনেত্রী শাবনুরের সংসার ভাঙলো, তখনো প্রথম আলো নামক একটি পত্রিকা কেঁচো সাপ ইত্যাদি বের করতে চেষ্টা করেও সফল হয় নি। শুধু এক প্রথম আলো নয়, চেষ্টা করেছে অন্যান্য কাগজ-তার-বেতার ওয়ালারা সাথে নামে-বেনামে খোলা অনলাইনের খবরওয়ালারাও। তারপর আসলো অপূর্ব-নাজিয়া জুটির সংবাদ। তারপর আসলো বলিউডের শক্তিমান অভিনেতা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির সংসার ভাঙার খবর। এগুলা নিয়াও অল্পবিস্তর সমালোচনা হচ্ছে হবে মিডিয়ার তীর্যক কথার কল্যাণে। কিন্তু যে বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে বাঙালী কথা বলে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে পেরেছে সেগুলো হলো ফরিদী-সুবর্ণা, অপূর্ব-প্রভা, তাহসান-মিথিলা জুটি।
(৪)
ফরিদী-সুবর্ণা জুটি নিয়ে সম্ভবত প্রায় শতভাগ মানুষ, যারা সিনেমা জগতের খোঁজ রাখেন অন্তত তারা, ফরিদীর পক্ষে অবস্থান করেছেন। কাকতাল এখানে যে ফরিদীর মতো অপূর্ব এবং তাহসানও সবাইকে দলে পেয়েছেন। তারপরও অপূর্বকে একটু আলাদা রাখতে হবে। যাহোক। বাংলাদেশের সম্ভবত সবচে' শক্তিশালী অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদীর বিচ্ছেদের পর ভক্তগণ তার প্রতি সিম্প্যাথি দেখাতে শুরু করলো। সিম্প্যাথি দেখানোটা বিশেষ ঘটনা না। ঘটনা হচ্ছে তার সদ্য সাবেক হওয়া স্ত্রী সুবর্ণা মোস্তফা কে (বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনেতা গোলাম মোস্তফার মেয়ে ও বর্তমানে সংসদ সদস্য) একদল মানুষ প্রচন্ড আক্রমণ করতে শুরু করলো। এই বিষয়টা চূড়ান্ত রূপ নিলো যখন সুবর্ণা সৌদ নামের কমবয়সী এক পরিচালককে বিয়ে করে ফেললো। এখানেও মিডিয়াবাজরা সফল। পরের ঘটনা তাহসান-মিথিলাকে ঘিরে। তাহসান যেমন পাবলিক ফিগার তেমনি মিথিলাও। আমাদের সময়ে মিথিলা ছিল এমন নারী যাকে আমরা রাস্তায় কোন সুন্দর-সৌষ্ঠব তরুণী দেখলে তার সাথে কম্পেয়ার করতাম। অনেক পরে জানলাম মিথিলা মেয়েটা কামুক। আরো জানলাম- সে অভিনেতা জন কবির, পরিচালক ইফতেখার ফাহমি'র সাথে বিছানায় গেছে। শেষে তাহসানের সাথে বিবাহের সম্পর্ক থাকা অবস্থায় পশ্চিম বাংলার গুণী পরিচালক সৃজিতের সাথে পার্টিতে এখানেসেখানে যেত। বিছানায় গেছে কিনা এই কথাটা কারওয়ানবাজার কিংবা আনন্দবাজার কেউ বের করতে পারে নাই। হয়তো গেছে, হয়তো যায় নাই। বিষয়টা নিয়ে অনেক কথা হলো। তাহসান-মিথিলার বিবাহবিচ্ছেদ ঘটলো। মিথিলা সৃজিতকে বিয়ে করলো। এর ফাকে ছোট্ট করে ফ্হমির সাথে মিথিলার বিছানার কিছু স্থিরচিত্র এবং চলচ্চিত্র অনলাইনে ছড়িয়ে পড়লো এবং বেকার বাঙালী কিছুদিন আনন্দ উল্লাস করলো। রতি রস শেষ না হওয়া পর্যন্ত এইটা চলতেই থাকলো। শেষপর্যন্ত মিথিলা হয়ে গেল ঘষেটি বেগম আর তাহসান "বেইলী রোড" গেয়ে কেঁদেকেটে জনগণের এবং জনমনের আরো কাছে চলে গেল। এইখানেও মিডিয়ার গুরুত্ব সবচে' বেশি। বাকি থাকে অপূর্ব-নাজিয়া জুটি। এইক্ষেত্রে অপূর্ব নাটকে অভিনয় করতো বলে নাজিয়ার চেয়ে সে বেশি পরিচিত ছিল। এবং ২০১০ সালের দিকে প্রভা নামের এক সুন্দরীর সাথে অপূর্ব পালিয়ে বিয়ে করেছিল। বিয়ের কিছুদিন পর রাজিব নামের আরেকজন প্রভার সাথে বিছানার ভিডিও অনলাইনে ছেড়ে দিল। এই নীল ভিডিও একটা প্রজন্মের কাছে মোস্ট ওয়াচড হয়ে গেল। তখন একবছরের কম সময়ে এই বিয়ে ধসে পড়লো। প্রভা-কাহিনী এবং অপূর্ব জনপ্রিয় অভিনেতা- এই দুইটা কারণে নাজিয়ার সাথে বিচ্ছেদের পরেও জনগণ অপূর্বের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে গেল। তবে এইখানে একটা পার্থক্য তৈরি হইছিলো। সুবর্ণা কিংবা মিথিলাকে যেমন মানুষ ঘৃণা করতে শুরু করছিলো নাজিয়াকে তেমনি ঘৃণা করে নাই। নাজিয়া একটা সাক্ষাৎকার দিসিলো প্রথম আলো বা কালের কন্ঠ পত্রিকায়। তার বক্তব্যের সারমর্ম ছিলো এইরকম- তারা অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু একসাথে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। তবে কেউ কারো বিরুদ্ধে মুখ খুলবে না। কারো প্রতি কারোর অশ্রদ্ধা নেই। শুধু মতের মিল না হওয়াতেই বিচ্ছেদ হয়েছে।
(৫)
বিএফডিসির লোকজনের বেলায় বিচ্ছেদের সুর যে এই কয়জনের বেলায়-ই শুধু বেজেছে ব্যাপারটা এমন না। বিনোদন জগতের অনেক তারকার জীবনেই এই বিশেষ ঘটনাটা ঘটেছে। তারিন, অপি করিম, জয়া আহসান, বিন্দু, মম প্রমুখ অভিনেত্রীগণ এই বিশেষ অবস্থার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। মিতা নূরের মতো গুণী অভিনেত্রী তো '১২ তে আত্মহত্যাই করলো সংসার জীবনে অসুখী ছিলেন বলে। বলা হয়ে থাকে যে তাহসানের বিয়েতে উপস্থিত থাকা তারকাদের মধ্যে কারোরই সংসার টিকে নি। কথাটা শুনতে হাস্যকর হলেও অনেকাংশে সত্য। অনেকেরই টিকে নি। কিন্তু সংসার টেকা বা না-টেকার সাথে তারকাপরিচিতির কি সম্পর্ক কিংবা তাহসানের বিয়েতে উপস্থিত থাকা না-থাকা? তারা কি সেলিব্রেটি হওয়ার কারণে তাদের সংসার ভাঙ্গছে? নাকি সংসার ভাঙ্গার বিষয়টা স্বাভাবিক ঘটনা কিন্তু তারকা বলে আজকে প্রশ্নটা প্রকট? এই প্রকট প্রশ্নের উৎপত্তি জনমনে ঘটিয়ে মিডিয়ার মালিকদের আর্থিক লাভ বা আত্মতৃপ্তি কোথায়?
(৬)
বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনায় অন্তত একটা বিষয় পরিস্কার যে স্বামী-স্ত্রী দুজনের মধ্যে মতের অমিল হচ্ছে। এই অমিলটা কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনেও হচ্ছে -যারা সেলিব্রেটি না- এবং সেখানেও ডিভোর্সের ঘটনা ঘটছে অহরহ। তবে আমরা তারকাদের ডিভোর্স নিয়ে ভাবি কেন? এত বেশি কথা বলি কেন? কথা বলতে গিয়ে পত্রিকার সাধারণ পাঠক বা টেলিভিশনের সাধারণ দর্শকদের মনে বিষ ঢুকিয়ে দিচ্ছি কেন? যে যেই পেশায়ই থাকুক না কেন, তার তো একটা ব্যক্তিজীবন আছে। একজন তারকা যদি দাম্পত্য জীবনে অসুখী হয় তবে তো সে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান করতেই পারে। নাকি তার ভক্ত-মুরিদান আছে বলে মতের অমিল নিয়েই সারাজীবন চোখমুখ বন্ধ করে সংসার করে যাবে? আমাদের বিবেক কি এই কথায় সায় দেয়? আমাদের কাছে তাদের পরিচয় তাদের নিজস্ব শিল্পকর্ম দ্বারা। সুতরাং কেউ যদি তার কাজের জায়গায় ভালো করে সে পুরস্কার পাবে, হাত তালি পাবে, বাহবা পাবে। তেমনি কেউ তার নাটক সিনেমায় ভালো না করতে পারলে নিশ্চয়ই সমালোচনার মুখে পড়বে। কিন্তু কে বউয়ের সাথে ভালো উনিশবিশ পারে কে না পারে এগুলা জানা তো দর্শকের কাজ ছিল না। জয়া আহসান কয়টা কুত্তাকে খাওয়ায়, ভাবনার কত মোটা কাপড় লাগে, মম'র শরীর দ্বিতীয় বিয়ের পর ঝুলে গেছে কি-না, তাহসান আর পারে না, অপির বড় লাগে, মেহজাবিন ফলস্ কাপ ব্রেসিয়ার পরে, হৃদয় খারেন দুইজন লাগে, আসিফের বউ বুড়া হইছে, সুবর্ণা কচি লাগে ইত্যাদি কথা তো দর্শকের বিবেচনা করার বিষয় ছিল না। কোন নাটকের মান কেমন, কোন সিনেমা কপি হইছে, কোন গল্পটা সময়ের সাথে মিল খায় না, কোন চরিত্রটা নিশোকে না দিয়ে নতুন কাউকে দিলে ভালো হতো দর্শকের ভাবার কথা তো এইসব জিনিশ। আজকে এই জিনিশ মাথায় না নিয়া কার বড়, কার ছোট, কার ফলস্, কার কচি এইসব বিশ্লেষণ কি দর্শক হিশেবে আমাদের মান বাড়াচ্ছে নাকি কেবল আমাদের কুরুচির পরিচয় বহন করছে তা ভাববার সময় এসেছে।
(৭)
দু-একটা ব্যাপার আলাদা। যেমন হুমায়ুন ফরিদী। তিনি ভক্ত-মুরিদানদের বিশেষ সম্মান পান। এই অবস্থায় তার স্ত্রী সুবর্ণার সাথে বিচ্ছেদ হলো এবং সুবর্ণা আবার বিয়ে করল সৌদ নামের কম বয়সী একজন কে। আরেকটা নাম হতে পারে তাহসান। মিথিলা তাহসানের সাথে বিবাহের সম্পর্ক থাকা অবস্থায়-ই (জানামতে) আরো একজনের সাথে (নাট্যপরিচালক ইফতেখার ফাহমি) বিছানায় গিয়েছে। তার কিছুদিন পর তাহসানের সাথে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র পরিচালক সৃজিতকে বিয়ে করেছে। সেটাও সমস্যা না। জান গেল তাহসানের সাথে ডিভোর্সের আগে থেকেই মিথিলা সৃজিতের সাথে প্রেম করতো। এইটা হইলো সমস্যা। এই দুইটা কেস বিতর্কিত। এইরকম বিষয়গুলা নিয়া মানুষ মাথা ঘামায়। তবুও ঘামানোটা বেশি হয়ে যায়। বাদবাকি বিষয়গুলা একদমই অপ্রাসঙ্গিক সাধারণ দর্শকদের জন্য। অবশ্য মিডিয়াবাজরা যদি না এমন উস্কে দিতো তবে সাধারণ দর্শকও এতোটা বাড়াবাড়ি করতো না।
(৮)
আমরা যতটাই শিল্পানুরাগী হয়ে থাকি না কেন। আমাদের নিশ্চয়ই শিল্পীদের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করার অধিকার জন্মায় না। এটা সাধারণ দর্শকদের যেমন বুঝা উচিৎ তেমনি বুঝা উচিৎ সংবাদ সংগ্রহকারী ও পরিবেশনকারীর। মনে রাখা জরুরি, আমরা যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করি, তারাও কিন্তু একটা বিশেষ অর্থে সাংবাদিক। কিন্তু যারা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মানুষের ব্যক্তিজীবন নিয়ে কুরুচিপূর্ণ তথ্য পরিবেশন করে মজায় পায় তারা অমানুষ। তাদের বলছি " আয় শালারা, আয়। গত মাসে আমারও ডিভোর্স হইছে। মানুষকে ছোট করতে তোরা এইটাও বিকৃতভাবে নিউজ কর। আমি জীবনের কাছে সব পাইছি। এখন তোদের কাছে পাইতে চাই। আয় শালারা, আয়।"
(২০২০ সালের ১৮ ই মে তারিখে এটি লিখিত। আজকের দিনে এর কোন প্রাসঙ্গিকতা আছে কিনা জানি না। তবু নিবেদন করলাম।)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:৪৭