somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হয়ে যায় আকাশের তলে কত আলো- কত আগুনের ক্ষয়!

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



"তোমাকে ডাকি না প্রিয় ডাকো না তুমি আমায়
জলপ্রপাত মাতে রুপোর​ মায়ায়
তুলোনাহীনা জলের কিনার​
তোমার চুলের মত​
আনমনে আঙুল ডোবায়....."
সময় কতটা বেরিয়ে গেল সে হিসাব করা হতো না অংকে। মিনিট ঘন্টা দিন সপ্তাহ মাস। বয়ে যাওয়া নদীর মতো গিয়েছে। নদীর জলও গড়িয়েছে বহু। বছরান্তে হেমন্ত বসন্ত এসেছে গিয়েছে তাদের মতো করে। পাখি ডেকেছে ফুল ফুটেছে। আবার ঝড়ে গেছে। এসেছে বর্ষা এসেছে তুফান। তবু সময় কেটেছে আনন্দে। বলা হয়েছে কথকতা। বলাও হয় নি অনেক। তবু কেউ কারো মতো বুঝার বাকি থাকে নি সেসব। শিমুল তুলার গাছের মতো কাঁটাযুক্ত চলা—সম্পর্ক মতো বটে, অনেকটা বিষণ্ণ নীরস, তবু পাখাসদৃশ ডালে লাল সৌন্দর্য মাখা। অনেক কথার ফাঁকে কিছু কথা বলা হয় নি, হয়তোবা জরুরি কি অতিজরুরী কথাই ছিল বাকি। তবু জিজ্ঞাসু মনের প্রশ্ন— যে কথা বলা হয় হয় নি সে কথা কি সত্যিই আমাদের বুঝার বাকি? অনুভূতির প্রশ্নে মানদন্ড কী? কি জানি! কী জানি!

"ভেজা সন্ধ্যা অঝোর বৃষ্টি
দূর আকাশে মেঘের প্রতিধ্বনি
পাগলে গিয়েছে আকাশ
বইছে বাতাস
আড়ালে দাঁড়িয়ে তুমি আর আমি
হয়নি বলা কোন কথা শুধু হয়েছে অনুভূতি....."
বসন্তের এই "মন কেমন করা" বিকালগুলো খুব অদ্ভুত। দিনের যৌবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা বিকাল হতে হতেই মন বিষণ্ণ করার শক্তি নিয়ে হাজিরা দেয় হৃদয়ের বারান্দায়। পড়ন্ত বিকেলে হাজারো স্মৃতির গন্ধ লেগে থাকা নিস্তেজ রোদ্দুর তার আঁচল বিছিয়ে দেয় হৃদয়ের আঙিনা জুড়ে। তখন সে আমাকে নিয়ে পূর্ব জন্মের কোন এক হলুদ রঙা স্মৃতির চৌকাঠে নিয়ে যায়, না চাইলেও আমাকে নিয়ে যায়। সেখানে দাঁড়িয়ে আমি দেখি আমার অভিনীত কোন রূপকথার গল্পের এপিসোড। আমি মন থেকে চাইলেও পারি না তার অংশ হতে। মন খারাপ করা অনুভূতি নিয়ে ফিরে আসি আমার প্রিয় ঋতু বসন্তের বুকে। এখানেও সময় যায়। মিনিট ঘন্টা সপ্তাহ মাস বছর। বরফ গলে। নদীর জল বয়ে যায়। তবু মন কেমন করা স্মৃতিরা নিস্তেজ হয় না। আমার সীমানায় থেকেও বিষণ্ণতা-দের অতিক্রম করতে পারি না। বসন্ত—বাতাসের কোমল প্রবাহ ; দিক—না—জানা এক বাতাস আমাকে ছুঁয়ে যায়। ছুঁয়ে যাওয়ার নাম করে আমাকে একমুঠো মন খারাপ করা স্মৃতি দিয়ে যায়। একমুঠো মাত্র বিষণ্ণতা, অথচ আমি তাতেই ডুবে যাই। ভেতরবাড়ি থেকে আসে হাহাকারের প্রচন্ড বাতাস। আসে কান্নার শব্দ। আমি ভেঙ্গে যাই। আমি ভাঙতে থাকি। জীবনটা বড্ড অনর্থক মনে হয় তখন।

"তবু স্বপ্ন দেখে হৃদয় কিংবা মরীচিকা দেখে স্বপ্নরূপে
নাহয় স্বপ্নকে নিয়ে বেঁচে থাকার আকাঙ্খাকে স্বপ্ন ভেবে সুখ পায়....."
"মন কেমন করা" রোদ্দুর বারান্দায় নেমে আসে। মনের বারান্দায়। আবার বাতাস এসে ছুঁয়ে যায়। এ এক অন্যরকম বাতাস। এই বাতাসে লেগে থাকে মাটি ও মানুষের গন্ধ। কৃষাণ—কৃষাণীর সদ্য কাটা ধানের গন্ধ। নাম না জানা অসংখ্য ফুলের গন্ধের সমাহার। বেণীতে ফুল গুঁজে গ্রামের মেঠোপথ ধরে হেঁটে যাওয়া তরুণীর হাতে থাকা ফুলের গন্ধও তাতে মিশে থাকে। এই সুন্দর পৃথিবী আর পৃথাবীর সন্তানদের অপার্থিব সব আশা ত্যাগ করেও জীবন থেকে যেতে চায় "কথা না রাখা" মানবাকৃতির বসতভিটা এই পৃথিবীর বুকে। যারা কথা দিয়ে কথা রাখে না তারাও থাকবে আদমের সন্তান হয়ে, পৃথিবীর সন্তান হয়ে। একই পিতার পরিচয়ে থাকা গেলে, সেসব পঁচে যাওয়ার চরিত্রের গন্ধকে ষড়ঋতুতে ফোটা লক্ষ নিযুত ফুলের গন্ধ দ্বারা প্রতিস্থাপিত করে টিকে যেতে হবে পৃথিবীর বুকে, পৃথিবীমাতার সন্তান হয়ে। টিকে যেতেই যে হবে এই বসন্তের জন্য, এই বিষণ্ণ বিকেলবেলাটা চেয়ে দেখার জন্য। কখনো কখনো পৃথিবীটাকে বড্ড মায়া লাগে। বেঁচে যেতে ইচ্ছা করে তো।

আর তারপর "সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন সন্ধ্যা আসে"।
আধার নামে। ফিরে যায় রোদ্দুর। মন বিষণ্ণতম হয়ে ওঠে। আলো জ্বলে ওঠে আধুনিক ইটপাথরের জঙ্গলে। বিশাল অট্টালিকার জানালা বন্ধ হতে থাকে। তবু কিছু বন্ধ—না—করা জানলার ফাঁক গলে আলো ঝলমলিয়ে ওঠে। আমার আলো সহ্য হয় না। হয়তো অন্ধকার দূর করতে আলো তার সতত রূপ নিয়ে আসে। বটে। তবু আমি তো জানি এই শহুরে বহুতলের এক একটি কুঠুরিতেই থাকে পঁচে যাওয়া আত্মা ধারণকৃত দেহ। হয়তো আগামীকাল এই পঁচে যাওয়া আত্মারা আবার কাউকে স্বপ্ন দেখাবে। আবার বয়ে যাবে নদী। কেটে যাবে মিনিট ঘন্টা দিন মাস বছর। দেখবে বহু স্বপ্ন, বহুমাত্রিক স্বপ্ন। তারপর একদিন তার জীবনে আসবে সেই "মন কেমন করা" বিকাল। এমন আগামীকাল হয়তো প্রলয়ের আগঅবধি চলতে থাকবে তার নিজের গতিতে। পঁচে যাওয়া আত্মারা হয়তো দায়িত্ব হস্তান্তর করে যাবে। করে যাবে বপনে বা রোপনে। যেভাবেই করুক, থামবে তো না! এসব নষ্ট আত্মার প্রয়োজনে যে আলো সে আলো আমার নয়নে সয় না। আমার ভালো লাগে না। কিন্তু এই চাকচিক্যময় আলোকিত নগরীর কাছে আমার ভালো লাগা—না—লাগা খুবই মূল্যহীন। আমি তাই আরেকবার চোখ বন্ধ করে জোনাকি আর কাঁচপোকার আধাঁর নামাই........

"আলো — অন্ধকারে যাই — মাথার ভিতরে
স্বপ্ন নয়, কোন এক বোধ কাজ করে!
স্বপ্ন নয় — শান্তি নয় — ভালোবাসা নয়,
হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়!
আমি তারে পারি না এড়াতে
সে আমার হাত রাখে হাতে;
সব কাছ তুচ্ছ হয়, পণ্ড মনে হয়,
সব চিন্তা — প্রার্থনার সকল সময়
শূন্য মনে হয়,
শূন্য মনে হয়!"

উৎসর্গ : "বন্ধু লোডশেডিং" কে
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:১২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×